ঘণ্টাখানেক আগে হিক্যারি পাস পেরিয়েছে বেন স্লেজেল। সূর্য এখন বিস্তীর্ণ উপত্যকার ওপাশে পাহাড়শ্রেণীর আড়ালে ডুব দিচ্ছে, শেষ বিকেলের সোনালী আলোর রেখারা উঁকি-ঝুঁকি মারছে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। প্রেয়ারিতে পাইনের সুবাসিত ঠাণ্ডা বাতাস।

স্যাডলে বসেই ঘাড় ফিরিয়ে ফেলে আসা নিচু জমির দিকে তাকাল বেন, একটা মেসায় উঠে এসেছে ওর বাকস্কিন। সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে ঢেউ খেলানো তৃণভূমি জরিপ করল-পিছু নিয়ে আসছে না কেউ, কিংবা এলেও অন্তত ওর চোখে পড়ছে না। মাইল দশেক পেছনে হিক্যারি পাসে থেমে ঘোড়াকে পানি পান করার সুযোগ দিয়েছিল, সেই থেকে অস্বস্তি ভর করেছে মনে-কেবলই মনে হচ্ছে কেউ অনুসরণ করছে ওকে। আরেকটা কারণ সিরেনোর আশপাশে “গাট-হুক” র‍্যাঞ্চার টম নোলানের কুখ্যাতি-নিজের রেঞ্জে অনাহূত কারও উপস্থিতি সহ্য করে না দাম্ভিক বুড়ো; বেন স্লেজেলের মত মানুষকে তো নয়ই। এ মুহূর্তে গাট-হুক রেঞ্জ পাড়ি দিচ্ছে ও।

মেসার এক পাশে সরে এল বাকস্কিন, প্রায় হেঁটে এগোচ্ছে এখন। চলার মধ্যেই তামাক আর কাগজ বের করে সিগারেট রোল করল বেন, ডানে-বামে তীক্ষ্ণ নজর চালাল। খোলা প্ৰেয়ারিতে নেমে গেছে মেসার ঢাল, বুনো কিছু ক্যাকটাস আর জুনিপার ঝোঁপ ছাড়া অন্য কোন গাছ নেই; বোল্ডার আর খানাখন্দে ভরা। ছায়া পাওয়া যাবে এমন কোন জায়গা দেখা যাচ্ছে না। তবে এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় বেন; দুপুরের বিশ্রাম নেবে না ও, বরং রাত কাটাবে।

এবং তারও আগে, পরখ করে দেখবে আসলেই কেউ অনুসরণ করছে কিনা।

পাহাড়ের আড়ালে টুপ করে ডুবে গেল সূর্য, আবছা অন্ধকার নেমে এল, প্ৰেয়ারিতে। হেঁচড়ে স্যাডল ছাড়ল বেন। মেসার ঢাল শেষে অগভীর একটা অ্যারোয়ো চোখে পড়েছে, বাকস্কিনের লাগাম হাতে সেদিকে এগোল। ঘোড়াকে গ্রাউন্ড-হিচ করে স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেল বের করল, লেভার টেনে চেম্বারে একটা ৪৪-৪০ বুলেট পাঠিয়ে দিল। অ্যারোয়োর ঢাল বেয়ে ওঠা শুরু করল এবার; সন্ধের অস্পষ্ট আলোয় ব্যর্থ এক শিকারী মনে হচ্ছে ওকে। দীর্ঘ, ঋজু দেহ কিছুটা ঝুঁকে আছে সামনের দিকে। জেদ আর প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় হয়ে গেছে চোয়াল-সত্যিই যদি কেউ পিছু নিয়ে থাকে, কপালে খারাবি আছে ব্যাটার!

পড়ে থাকা একটা বোল্ডার এড়িয়ে অ্যারোয়োর চূড়ায় উঠে এল ও। কিনারে এসে শুয়ে পড়ল মাটির ওপর। ব্রিমে টোকা মেরে হ্যাটটা ঠেলে দিল পেছন দিকে, চিবুকের সঙ্গে স্ট্র্যাপ থাকায় পিঠের ওপর ঝুলে থাকল ওটা। জুনিপারের একটা, শাখা ওর মাথাকে আড়াল করেছে সামনের জমি থেকে, এমনকি মেসার ওপর থেকেও চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম। উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করেছে, সময় আর স্থানও ওর অনুকূলে-সন্তুষ্টির সঙ্গে উপলব্ধি করল বেন। সিগারেটের গোড়া মাটির। সঙ্গে পিষে নেভাল, বাতাসে তামাকের ক্ষীণ গন্ধ ছাড়া আর কোন আভাস নেই যে। পিছু নেওয়া লোকটির জন্যে অপেক্ষায় আছে ও। গন্ধটাও অবশ্য বেশিক্ষণ থাকবে না, শিগগিরই বাতাসে মিলিয়ে যাবে।

সন্দেহটা হত না, যদি সচরাচর কোন ট্রেইল ধরে এগোত ও। তৃণভূমি পাড়ি দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথে গন্তব্যে পৌঁছতে চাইছে, ট্রেইলের কোন বালাই নেই; ঘণ্টা খানেক ধরে যদি পেছনে ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা যায় তাহলে কার না সন্দেহ হবে?

এবার ধৈর্য ধরার পালা। আদপে কাউকে পিছু নিতে দেখেনি বেন, কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমে বিপদসঙ্কুল ট্রেইলে বহু দিন কেটেছে ওর, সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করার ব্যাপারে সচেতন একটা প্রবৃত্তি তৈরি হয়েছে, যার ওপর বেনের আস্থা ষোলোআনা। এ জিনিসটা না থাকলে এতদিনে হয়তো ট্রেইলের পাশে ফলকহীন কোন কবরে শুয়ে থাকতে হত ওকে।

ধীরে ধীরে কাটছে সময়। ঠাণ্ডা পড়ছে বেশ। কিন্তু অ্যাপাচীদের মত ধৈর্য আর সহিষ্ণুতা আয়ত্ত করেছে বেন, শারীরিক ব্যথা বা দুর্ভোগ অগ্রাহ্য করতে শিখেছে। দরকার হলে সারা রাত একই ভাবে পড়ে থাকতে পারবে এখানে।

মৃদু হেষা ধ্বনি করল বাকস্কিন, জানিয়ে দিল সন্দেহটা অমূলক ছিল না-আসছে ওর শিকার!

উইনচেস্টারটা দেহের সামনে নিয়ে এল ও, তীক্ষ্ণ নজর চালাল বিস্তৃত তৃণভূমিতে। আবছা অন্ধকারে ক্ষণিকের জন্যে গাঢ় একটা অবয়ব দেখতে পেল, বোল্ডার সারির আড়ালে হারিয়ে গেল অশ্বারোহী। এখনও পঞ্চাশ গজ দূরে আছে, দুলকি চালে ঘোড়া ছোটাচ্ছে। মিনিট খানেকের মধ্যে নুড়িপাথর গড়ানোর ক্ষীণ শব্দ কানে এল, তারপর মেসার ওপর আকাশের পটভূমিতে গাঢ় একটা কাঠামো ফুটে উঠল। এক চুলও নড়েনি বেন, সম্ভবত অবচেতন মন সন্ধিগ্ধ করে তুলেছে লোকটাকে, আচমকা ঘোড়ার গতি কমিয়ে এনেছে। ধীরে ধীরে মেসা পেরিয়ে এল। সে, সতর্ক অনায়াস ভঙ্গি। ঢাল বেয়ে নেমে আসার পর নিচের উপত্যকা ধরে এগোল কয়েক গজ, বাকস্কিনটাকে সামনে দেখে দ্রুত রাশ টানল।

তীক্ষ্ণ স্বরে প্রতিবাদ করল লোকটার ঘোড়া, দু’কদম এগিয়ে থেমে গেল বাকস্কিনের পাশে। ইতি-উতি তাকাল লোকটা, কোমরে চলে গেছে ডান হাত। দ্রুত কয়েকটা সেকেন্ড পেরিয়ে গেল, একসময় ধাঁধা কাটিয়ে স্যাডল ছাড়ল সে-অ্যারোয়ের কাছ থেকে বিশ গজ দূরে। জানে না অ্যারোয়োর কিনারে অপেক্ষায় আছে বেন।

বাঁকা হাসিতে ভরে গেল বেনের মুখ। একেবারে সহজ টার্গেট। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল ও, খানিকটা ঝুঁকে সামনে প্রসারিত করল শরীর। কাউকে খুঁজছ নাকি, দোস্ত? মৃদু স্বরে জানতে চাইল এবার।

চরকির মত ঘুরল লোকটা। ঘোরার মধ্যেই ছোবল হেনেছে হোলস্টারে, নিমেষে বেরিয়ে এল পিস্তল। অ্যারোয়োর দিকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই কমলা আগুন। ওগরাল তার হাতের কোল্ট, শব্দ লক্ষ্য করে গুলি করেছে।

সময়মত মাথা সরিয়ে নিয়েছে বেন, ঠিক ওর নাকের সামনে দিয়ে গুঞ্জন তুলে চলে গেল গুলিটা। নিশানা দারুণ লোকটার, ভাবল ও। রাইফেলে নিশানা করেছি তোমাকে, দোস্ত! ফের যদি গুলি করো, তোমার ডান হাতে একটা সীসা ঢুকিয়ে দেব! চাপা, শীতল স্বরে সতর্ক করল বেন।

কিছুই দেখতে পাচ্ছে না লোকটা, স্রেফ ওর কণ্ঠ শুনে অবস্থান আন্দাজ করে নিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার সুযোগ নেওয়ার মত পরিস্থিতি নয়, অচিরেই উপলব্ধি করল সে, বেনের শীতল কণ্ঠ মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে।

পিস্তল ফেলে দাও! সশব্দে মাটিতে পড়ল কোল্টটা।

ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল বেন, সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে লোকটার ওপর। আগন্তুকের দশ হাত দূরে এসে থামল, আবছা অন্ধকারে খুঁটিয়ে দেখল লোকটাকে।

ছ’ফুটের কাছাকাছি হবে সে, সুঠামদেহী। নিচু ব্রিমের হ্যাট মাথায়, ঘাড়ের কাছে তুলে দিয়েছে শীপস্কিন কোটের কলার।

কথার আগে দেখি পিস্তলের গুলি চালাও তুমি, দোস্ত! খুব অবাক হয়েছ আমাকে এখানে দেখে, না? ভেবেছ নিশ্চিন্তে অনুসরণ করতে পারবে, কিছুই টের পাব না?

শীতল দৃষ্টিতে ওকে দেখছে লোকটা। জানতাম ওখানেই আছ তুমি, অ্যারোয়াটা দেখিয়ে নিরুত্তাপ স্বরে বলল সে।

তুমি তো দেখছি একটা মিথ্যুকও! আমার পিছু নিয়েছ কেন?

লেযি-এনের জমিতে আছ তুমি?

গাট-হুক রেঞ্জ? চোখ

ছোট করে তাকাল লোকটা। যার মুখেই কথাটা শুনে থাকো, স্ট্রেঞ্জার, নির্দ্বিধায় বলতে পারি টম নোলান বা ওর রেঞ্জ সম্পর্কে ভাল কিছু বলেনি সে। লেযি-এনের জমিতে পা রেখে কখনও এই শব্দটা উচ্চারণ কোরো না, কারণ মি. নোলান বা আমরা–ওর কুরা–কেউই শব্দটা শুনতে পছন্দ করি না। লোকটা নিশ্চয়ই এও বলেছে নিজের জমিতে অবাঞ্ছিত কারও উপস্থিতি সহ্য করে না টম নোলান?

ওর হামবড়া ভাব কমেনি তাহলে! দাঁত কেলিয়ে হাসল বেন। বসের মতই সামান্য কথায় খেপে যাচ্ছ দেখছি! ঠিক আছে, না হয় লেযি-এনের জমি পাড়ি দিচ্ছি আমি, কিন্তু তাতে দোষের কি হলো? যে কোন রেঞ্জই সবার জন্যে উন্মুক্ত, অন্তত রাইড করতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।

ঠিক। কিন্তু তোমার মত নিঃসঙ্গ রাইডাররাও মাঝে মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য কাজটা করে বসে, সুযোগ পেলে কয়েকটা গরু নিয়ে সীমানা পেরিয়ে যায়। ওদের ঠেকানোর জন্যে এই ব্যবস্থা। তোমার রাইড করা যেমন বেআইনী নয়, তেমনি নিজের রেঞ্জ দেখে-শুনে রাখাও বেআইনী নয়।

যুক্তিটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এবার বলো তো, আসলে লেযি-এনের হয়ে কেন কাজ করছ তুমি?

দু’হাত প্রসারিত করল লোকটা, হাতের তালু ওপর দিকে থাকল। পুরো রিও ফ্রিয়ো এলাকা দু’ভাগে বিভক্ত। এখানে হয় মি. নোলানের, নয়তো যাদেরকে সে বেসিন থেকে তাড়াতে চাইছে তাদের কাজ নিতে হবে তোমার। লেযি-এন বেতন ভাল দেয়, বাঙ্ক বা খাবারের মানও ভাল। বরাবরই ভাল খাবারের সমঝদার আমি। তাছাড়া বুড়ো কখনোই আমার কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিতে চায়নি।

ভালই লেকচার দিয়েছ! নিজের সম্পর্কে এমন খোলামেলা মন্তব্য কোন কাউহ্যান্ডের কাছ থেকে কখনও শুনিনি আমি।

বড়বড় কথা তো ভালই বলতে পারো, মিস্টার। কিন্তু লেযি-এন ক্রুদের চেহারা যখন দেখতে পাবে, তখন দেখব কোথায় থাকে এত তেজ! দু’জনকে লেজ তুলে পালাতে দেখলাম সেদিন, আরেকজন তো আরেকটু হলে পৈত্রিক প্রাণটাই হারিয়ে বসেছিল।

কারণ?

বেসিনের নিয়ম বা রীতি মানেনি ওরা, নিস্পৃহ স্বরে ব্যাখ্যা দিল সে।

গাট-হুক রীতি, তাই তো বলতে চাইছ?

নিতান্ত অবহেলার সঙ্গে একটা হাত নাড়ল লোকটা। আবারও!

উইনচেস্টারটা মাটিতে রাখল বেন। অস্ত্র তুলে নিয়ে কেটে পড়ো, দোস্ত। ঘুরে হাঁটতে শুরু করল ও, জানে বড় বেশি ঝুঁকি নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, হয়তো পেছন থেকে ওকে গুলি করার চেষ্টা করবে লোকটা। কিন্তু নিজের সদিচ্ছা বোঝাতে বোধহয় এটাই একমাত্র উপায়।

ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ ওর, লোকটা নড়লেই টের পাবে। অবচেতন মন বলছে ঠকতে হবে না ওকে। প্রলোভনটা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছে আগন্তুক, নিঃসাড় দাঁড়িয়ে থাকল সে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেনের দিকে।

থেমে, ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল বেন। নামটা কি তোমার, চাদ?

পিস্তল তুলে লেগে থাকা বালি মুছল, লোকটা। জ্যাক হারলো।

টেক্সাসে এখনও তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে রেঞ্জাররা, জানো?

হাতটা স্থির হয়ে গেল, যেন তপ্ত লোহার ছ্যাকা খেয়েছে। স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল জ্যাক হারলো। পিস্তলের নল নিশানা করে রেখেছে বেনের বুক বরাবর। কি বললে?

বাদ দাও। এবার আমার কথা শোনো: স্রেফ চলার মধ্যে আছি, দোস্ত। দড়ির ব্যবসা করি না আমি। যদি করতামও, টম নোলানের গরুর কাছ থেকে অন্তত দশ মাইল দূরে থাকতাম; কিংবা ঘোড়া চোরও নই। যত দ্রুত সম্ভব রিও ফ্রিয়য়া পেরুতে চাই আমি।

অন্ধকারে জ্যাক হারলোর প্রতিক্রিয়া দেখার সুযোগ হলো না ওর। ধীরে ধীরে হোলস্টারে পিস্তলটা ভরে রাখল সে। রিও ফ্রিয়োর দিকে যাচ্ছ কেন?

ব্যবসা করতে।

নীরবে ওকে নিরীখ করছে জ্যাক হারলো-হিসেব কষছে। বেনের হেঁয়ালিতে বিরক্ত, গ্রাহ্য করতে চাইছে না, কিন্তু ঊরুতে নিচু করে বাঁধা জোড়া পিস্তল অস্বস্তি, ধরিয়ে দিচ্ছে মনে; তাছাড়া একটু আগে নিজের কারিশমা দেখিয়েছে আগন্তুক, তিক্ত মনে ভাবল সে, এর সঙ্গে ঝুঁকি নেয়া উচিত হবে না।

আনাড়ী লোক ভাল করেই চেনে হারলো। বেসিনে দুই ধরনের গানম্যান আছে–একটা পক্ষ টম নোলানের অধীন, গাট-হক করিডায় এদের আবাস; ওদের বিরুদ্ধে লড়ছে অন্যরা, তবে সংখ্যায় বেশি নয়। দুটো পক্ষের মধ্যে সীমানা হিসেবে কাজ করছে রিও ফ্রিয়ো। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া লেযি-এনের জমিতে পা রাখে না কেউ, কারণ এর মাশুল:বড় চড়া। নেহাত বোকা না হলে সবাই এড়িয়ে চলে গাট-হুক রেঞ্জ। এ লোকটি কোন কাতারেই পড়ে না-বোকা নয় সে, কিংবা লেযি-এনের সঙ্গেও কোন ব্যবসা নেই ওর।

এবার বিদেয় হও, হারলো।

প্রায় ঘোষণার মত শোনাল বেন স্লেজেলের কণ্ঠ, গলার স্বরে তাচ্ছিল্য আছে কিনা খুঁজতে গেল না জ্যাক হারলো, বরং নড় করল। আমারও একটা উপদেশ শোনো, দোস্ত, আগন্তুকের মত প্রায় একই সুরে জ্ঞান দান করল ও। এখনই রওনা দাও, সরাসরি উত্তরে গেলে সবচেয়ে কম সময়ে লেযি-এনের সীমানা পেরুতে পারবে, তাও অন্তত দশ মাইল পাড়ি দিতে হবে। রিও ফ্রিয়ো পেরুনোর আগে ভুলেও থেমো না।

নিজের ইচ্ছে মত পথ চলতে অভ্যস্ত আমি।

শ্রাগ করল হারলো, হেঁটে নিজের ঘোড়ার দিকে এগোল। পরিচয় দিতে আপত্তি আছে তোমার? খানিকটা কৌতূহলী স্বরে জানতে চাইল সে।

বেন স্লেজেল।

চরকির মত আধ-পাক ঘুরল হারলো, চোখ ছোট হয়ে এসেছে। সাহস আছে তোমার, স্লেজেল! পুরানো দিনের কথা ভুলে গেছ, নাকি ভেবেছ এতদিন পর ফিরে এসেছ বলে তোমাকে জামাই আদর করবে টম নোলান? মাঝে মধ্যেই তোমার কথা বলে বুড়ো, আর ফ্রেড মোরিস তো প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার আগে তোমার চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে!

সন্দেহ নেই ওসব শুনতে আমার অন্তত ভাল লাগবে না।

দাঁত কেলিয়ে হাসল সে। ফ্রেড মোরিসের ব্যাপারটা না হয় জানি, কিন্তু টম নোলানের কি ক্ষতি করেছ তুমি? কারও ওপর এত খেপে থাকতে ওকে দেখিনি আমি, স্লেজেল। দুনিয়ায় যদি কাউকে সে ঘৃণা করে থাকে তো সেই লোক হচ্ছে তুমি। আনমনে মাথা নাড়ল লেযি-এন গানহ্যান্ড। নার্ভ আছে তোমার, দোস্ত! লেযি-এনের জমিতে পা রাখার দুঃসাহস এমনিতেই কেউ করে না, আর তোমার তো রীতিমত কুখ্যাতি আছে এখানে।

জানতাম না আগের মত এখনও নিজেদের এলাকায় টহল দিয়ে বেড়ায় ওর লোকেরা।

নড করল হারলো। এই একটা ব্যাপারে কখনও ব্যতিক্রম হয়নি। কার্ল ব্রেনেল খুন হওয়ার পর থেকে আরও বেশি লোক নিয়োগ করেছে বস।

নীরবে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউই মুখ খুলছে না। দূরে একটা নিঃসঙ্গ কয়োটের আর্তনাদ শোনা গেল।

হয়তো কার্ল ব্রেনেলের মৃত্যুর কারণেই ফিরে এসেছ, অনেকক্ষণ পর মন্তব্যের সুরে নীরবতা ভাঙল হারলো। ব্রেনেলের খুনের কিনারা করতে?

হয়তো।

নড করল হারলো। মেসার ঢাল বেয়ে উঠে গেল সে, চূড়ায় উঠে ফিরে তাকাল। মাইল দেড় দূরে আমাদের লাইন ক্যাম্প, ছেলেদের নিয়ে ওখানে আছে ফ্রেড মোরিস। অন্তত ছয়জন আছে ওর সঙ্গে। ইচ্ছে করলে বিশ মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পে পৌঁছে যেতে পারব আমি, ফ্রেডকে তোমার কথা জানালে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করবে না ও।

ঠিক তাই করবে তুমি?

হ্যাঁ। যে কোন ট্রেসপাসিঙের ঘটনা রিপোর্ট করতে হয়, এটাই নিয়ম। স্মিত হাসল বেন। দেরি করছ কেন তাহলে?

চোখ তুলে উত্তর দিকে তাকাল হারলো। সরাসরি উত্তরে গেলে সংক্ষিপ্ত পথে লেযি-এনের সীমানা পেরুতে পারবে। জানোই তো স্কিলেট ক্রীকের ওপাড় থেকে ডাবল-বির জমির শুরু। আমার পরামর্শ শোনো: পাহাড়শ্রেণীর কাছাকাছি। পৌঁছা’নো পর্যন্ত থেমো না, দরকার হলে সারা রাত রাইড কোরো।

নড করল বেন। গ্রেসিয়াস, হারলো।

ভুলে যাও। তোমার কথা অনেক শুনেছি, শ্লেজেল। হয়তো তোমাকে সৎ পরামর্শ দেওয়ার মত যথেষ্ট কারণ আছে আমার।

যেমন?

নীরবে ওকে নিরীখ করল লোকটা। মানুষটা তুমি যাই হও, আমার অন্তত খারাপ লাগেনি। তোমাকে খুন করতে চাই না আমি, এটাই হচ্ছে আসল কারণ। অ্যাডিওস, দোস্ত!

লেযি-এন গানম্যান চলে যেতে বাকস্কিনের কাছে ফিরে এল বেন। দাঁড়িয়ে থেকে হারলোর ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনল মনোযোগ দিয়ে, ধীরে ধীরে দক্ষিণে চলে যাচ্ছে-একসময় মিলিয়ে গেল। বাকস্কিনের লাগাম ধরে হেঁটে খোলা জায়গায় সরে এল ও, তারপর স্যাডলে চড়ল।

ট্রেইলে এসে হাঁটুর তোয় বাকস্কিনকে এগোনোর নির্দেশ দিল ও। প্রায় হেঁটে এগোচ্ছে ঘোড়াটা। তাড়া নেই বেনের, কিন্তু মনে দুশ্চিন্তার ঝড় বইছে। ইচ্ছে করলেও জ্যাক হারলোর প্রচ্ছন্ন হুমকিকে উপেক্ষা করতে পারছে না।

দেখা যাচ্ছে ছয় বছরে এতটুকু বদলায়নি টম নোলান-এখনও প্রতিবেশী বা পাসিং-থ্র রাইডারদের রাসলার মনে করে সে। রেঞ্জে প্রবেশ করা যে কোন লোকের দিকে তেড়ে আসত লেযি-এনের ভাড়াটে গানম্যানরা, ছয় বছর আগে। দেখেছে বেন; সামান্য পান থেকে চুন খসলে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিত। ওদের সুঁইয়ের খোঁচার মানে হচ্ছে ফর্টি-ফোরের সীসা–এই হচ্ছে গাট-হুক রীতি। নিরীহ অনেক রাইডার মারা গেছে এভাবে, লোকটাকে স্রেফ ট্রেসপাসার বা রাসলার হিসেবে দাবি করে লেযি-এন। ব্যস, আইনের ঝামেলা ওখানেই শেষ। টম নোলানকে প্রশ্ন করার সাহস কারও নেই। ঘাড়ের ওপর দুটো কল্লা আছে কার?

শীতল একটা অনুভূতি হচ্ছে বেনের। নেহাত ব্যক্তিগত কারণে ফিরে এসেছে। ও, কিন্তু শেষে হয়তো ঝামেলায় পড়বে, অবচেতন মন বলছে ওকে। জ্যাক হারলোর কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না, ধারে-কাছে আছে ফ্রেড মোরিস•••খবর পেলে পাগলা কুত্তার মত ছুটে আসবে সে। তার কারণও আছে।

অনর্থক রক্তপাত এড়াতে ছয় বছর আগে রিও ফ্রিয়ো এলাকা ছেড়েছে বেন, কিন্তু অন্য সবাই ভুলে গেলেও অন্তত ফ্রেড মোরিসের ওকে ভুলে যাওয়ার কথা নয়; এমনকি সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না সে।

বেন স্লেজেল যখন স্কিলেট ক্রীক পেরুল, ততক্ষণে মাঝ আকাশ পেরিয়ে গেছে চাদ, ফিকে হয়ে এসেছে আলো। কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত বোধ করছে ও। এখন আর ওকে ট্রেসপাসার বা রাসলার দাবি করতে পারবে না কেউ, কারণ লেযি এনের জমি ছেড়ে ভাবল-বির তৃণভূমিতে পা রেখেছে।

বাকস্কিন থামিয়ে ফেলে আসা ক্রীক আর লেযি-এন জমির দিকে তাকাল বেন। নিউ মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে উর্বর জমি। বহু বছর ধরে এ জমি ভোগ করছে টম নোলান। হিক্যারি পাস থেকে রিও ফ্রিয়ো পর্যন্ত কয়েক হাজার একর নয়ন জুড়ানো তৃণভূমি-সৎ-অসৎ যে কোন উপায়ে হোক, দখল করেছে সে; তবে প্রতিবেশীদের অনেকের সঙ্গেই খুব একটা তফাৎ নেই তার, অন্তত নিজের জমি বাড়ানোর মানসিকতা বিবেচনা করলে। আর দশজনের চেয়ে কঠিন, পোড়-খাওয়া এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ বলেই আজ অন্যদের ঈর্ষার কারণ সে।

শীতল হুমকির মত ঠাণ্ডা বাতাস ধেয়ে এল গাট-হক জমি থেকে, কাপ ধরিয়ে দিল বেনের শরীরে। আজও দীর্ঘ একটা দিন কেটেছে স্যাডলে, কদিন আগে সিমারন ত্যাগ করার পর থেকে বলতে গেলে স্যাডল থেকে নামেইনি।

ঘুরে সামনের জমির দিকে তাকাল ও। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ঢেউ খেলানো তৃণভূমি, এদিক-ওদিক গজিয়ে উঠেছে জুনিপার বা মেস্কিটের ঝোঁপ। মাইল কয়েক দূরে সেন্টিনেল পাহাড়ের চূড়ায় জমে থাকা বরফের চাঙড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে চাঁদের আলো-রূপার পাহাড় যেন!

ডাবল-বির জমিতে পা রেখেছে ও এখন। কার্ল ব্রেনেলের রেঞ্জ। বেন সেধে ঝামেলা না করলে নিশ্চয়ই ক্রীকের ওপাড়ে নিজেদের জমিতে থাকতে বাধ্য হবে লেযি-এনের ভ্যাকুয়েরোরা। ভরসা করার উপায় না থাকলেও আপাতত নিশ্চিন্ত বেন। পালক-পিতার আচমকা মৃত্যুর খবর পেয়ে ফিরে এসেছে ও, ঝামেলা করার আদৌ কোন ইচ্ছে নেই।

নিজেই চিঠিটা লিখেছে বিল ব্রেনেল, ওর ভাই-রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও একসঙ্গে বড় হয়েছে ওরা। কার্ল ব্রেনেলের মৃত্যুর পর ডাবল-বির দায়িত্ব বিলের ওপর বর্তেছে। ছয় বছর দূরে সরে থাকলেও ওকে ভুলে যায়নি বুড়ো। উইল অনুযায়ী নগদ কিছু টাকা পাবে বেন, প্রাপ্য অংশ বুঝে নিয়ে এ তল্লাট ছেড়ে চলে যেতে পারবে। ডাবল-বির কোন অংশ চায় না, কিংবা সঙ্গে উপরি হিসেবে লেযি এনের শত্রুতাও চায় না।

শরীর ক্লান্ত, তারপরও ঘণ্টা খানেক ঘোড়া ছোটাল ও। যত দ্রুত সম্ভব ডাবল-বিতে পৌঁছতে চাইছে, লেযি-এনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করার ইচ্ছে আরেকটা কারণ।

ভি-আকারের একটা রীজের কাছে পৌঁছে স্যাডল ছাড়ল বেন। জায়গাটা মোটামুটি নিরাপদ মনে হচ্ছে। ঘোড়ার লাগাম হাতে জুনিপার ঝোঁপের আড়ালে চলে এল ও। ঝড়ে বাঁকা হয়ে বড়সড় পাথরের ওপর ঝুঁকে পড়েছে উইলোর শাখা, অস্থায়ী আশ্রয় হতে পারে ওর জন্যে। স্যাডল ছাড়িয়ে ঘোড়ার যত্ন নিল ও, তারপর ক্যাম্প করল। আগুন জ্বেলে পাশে বেডরোল বিছিয়ে শুয়ে পড়ল, কিছুটা হলেও উষ্ণতা পাবে।

পুরো ছয় বছর পর রিও ফ্রিয়োয় ফিরেছে বেন। ঈশ্বরের মত ভক্তি করত। এমন একজন মানুষের কথায় বেসিন ছেড়েছে, যে মানুষটা আপন ছেলের মত। লালন-পালন করেছে ওকে, নিজের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ওর পার্থক্য করেনি কখনও। একুশ বছরের মাথা-গরম এক তরুণ ছিল ও তখন, কিন্তু কার্ল ব্রেনেলকে এতটাই শ্রদ্ধা করত যে তার নির্দেশ অমান্য করতে পারেনি, সমস্ত অসন্তোষ চেপে রেখে নির্দ্বিধায় অজানার উদ্দেশে পা বাড়িয়েছে।

মানুষটা দৃঢ়চেতা ছিল, কিন্তু টম নোলানের মত যথেষ্ট দৃঢ় ছিল না বলেই বোধহয় অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে। নিজের বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি সে কখনও, গুটিকয়েক কাউহ্যান্ড নিয়েই লেযি-এনের কুখ্যাত ভ্যাকুয়েরোদের ঠেকিয়ে রেখেছিল এতদিন। গানশ্লিংগার ভাড়া করার বিপক্ষে ছিল সে, এবং নিজের সীমিত জমি নিয়েও সন্তুষ্ট ছিল। সারা জীবন লেযি-এনের তোপের মুখে কাটিয়েছে। কার্ল ব্রেনেল, কিন্তু ভেঙে পড়েনি কখনও।

দৃঢ় মনোবল আর যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসের কারণে পুরানো অভিজ্ঞ কিছু কাউহ্যান্ডের শ্রদ্ধা অর্জন করেছে সে। কাউহ্যান্ডরা তাকে যতটা সমীহ করত, ঠিক ততটাই ঘৃণা করে টম নোলানকে।

ডাবল-বি ছাড়ার মুহূর্তটা স্পষ্ট মনে আছে বেনের। অফিসরূমে বিল আর ওকে ডেকে পাঠিয়েছিল কার্ল ব্রেনেল। দশ দিন আগে শহরে পাট গাট-হুক ত্রুর মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল ওরা, সিরেনোর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গনফাইট সেটা। গান পাউডারের ধোয়া সরে যাওয়ার পর দেখা গেল দু’জন মারা গেছে, একজন আহত এবং সারা জীবনের জন্যে একটা হাত হারিয়ে বসেছে আরেকজন।

লেযি-এন প্রতিশোধ নিতে না পারলেও সুযোগ খুঁজছিল, বিল বা বেনকে মওকামত পাওয়ার জন্যে বেরিয়ে পড়েছিল বেশিরভাগ গানহ্যান্ড। কিন্তু হঠাৎ করেই নিজের লোকদের ফিরিয়ে নেয় টম নোলান, হয়তো সিরেনোয় গানাইটের নেপথ্যে কারণটাই তার মত বদলে দিয়ে থাকবে-ঘটনাটা চেপে যায় লেমি-এন; এবং সম্ভাব্য একটা রেঞ্জ অরও এভাবে এড়িয়ে যায় টম নোলান।

কিন্তু তাতে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি বেন, বিল কিংবা ডাবল-বির অন্য কেউ। জানত হুমকিটা খাঁড়ার মত আজীবন ঝুলে থাকবে মাথার ওপর, সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেবে লেযি-এন।

বিপদ এড়াতে একটা উপায় খুঁজে বের করল কার্ল বেনেল। প্রিয় দুই ছেলের মধ্যে অন্তত একজনকে বেসিন ছাড়তে হবে। আলাদা আলাদা ভাবে ওরা কেউই তেমন ভয়ঙ্কর নয়, কিন্তু একসঙ্গে আগুন আর সলতের মত! পিস্তল বা মুঠি চালাতে দু’জনেই দক্ষ, গড়পড়তার চেয়েও বেশি ক্ষিপ্র। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দু’জনের ওপর ছেড়ে দিল কার্ল ব্রেনেল। স্বেচ্ছায় বেসিন ছাড়তে চাইছিল বিল, কিন্তু তার আগেই নিজের কথা জানিয়ে দেয় কেন। ভিন্ন রক্তের ও, পালক পুত্র। যুক্তি না মেনে উপায় থাকল না কারও, না বিল কিংবা তার বাবার।

সাহসী লোকটা আর নেই এখন। প্রিয় নদীর কিনারে রূপালী এক রাতে মাথার পেছনে একটা বুলেট নিয়ে আজীবনের জন্যে শুয়েছে সে। কিন্তু কিছু পাওনা রয়ে গেছে তার, বেন স্লেজেলের কাছে; এই দেনা শোধ না করে নিশ্চিন্ত হতে পারবে না বেন।

পাশ ফিরে শুলো ও। ঠাণ্ডা বাতাস কাপ ধরিয়ে দিচ্ছে শরীরে। হয়তো কিছু দিনের জন্যে খোলা জায়গায় এটাই শেষ রাত কাটাচ্ছে, ভাবল বেন। আবারও বিল ব্রেনেলের সঙ্গে একত্রিত হলে-দুই হরিহর আত্মার পক্ষে আলাদা হওয়া সত্যিই কঠিন হবে, জানে ও।

উঠে বসে আগুনে কয়েকটা কাঠ ঠেসে দিল বেন। সিগারেট রোল করল এরপর। দক্ষিণে লেযি-এন তৃণভূমির দিকে তাকাল চিন্তিত দৃষ্টিতে। জ্যাক হারলো যদি লাইন ক্যাম্পে গিয়ে ফ্রেড মোরিসকে ওর কথা জানিয়ে দেয়, নির্ঘাত স্কিলেট ক্রীকের উদ্দেশে ঘোড়া ছোটাবে মোরিস। পৃথিবীতে কাউকে যদি সে ঘৃণা করে তো সেই লোক হচ্ছে বেন। সিরেনোর সেই গানফাইটের পর নিজের লোকদের কঠিন শাসনে বেঁধে রেখেছিল টম নোলান, সেজন্যেই বেন বেসিন ছাড়ার আগে সুযোগ পায়নি মোরিস। তাছাড়া, বেন খবর পেয়েছে শেষ দিকে কিছুটা হলেও কোমল মনোভাব দেখিয়েছে লেযি-এন বস, শক্রর উদ্দেশে রাইডারদের লেলিয়ে দেয়া বন্ধ করেছে; কিন্তু একাধিকবার মেক্সিকো পর্যন্ত খেদিয়ে নিয়ে গেছে রাসলারদের, এমনকি উদ্দিষ্ট লোকটাকে ধরার জন্যে পুরস্কারও ঘোষণা করেছে।

কিন্তু সেসব বহু দিন আগের কথা, যখন রক্ত গরম ছিল টম নোলানের; আর। বসের মত আগ্রাসী, কলহপ্রিয় ছিল সব কাউহ্যান্ড। আপাতত বোধহয় ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, যতক্ষণ না নিজে আগ বাড়িয়ে ঝামেলা করে ও। কিন্তু তেমন কোন ইচ্ছে নেই ওর, ছয় বছরে যথেষ্ট পরিণত হয়েছে বেন–সতর্ক থাকতে শিখেছে, বিপদ বা ঝামেলা এড়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জুনিপারের শাখার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা গানবেল্টের দিকে তাকাল ও, হাত বাড়ালেই তুলে নিতে পারবে। সিগারেটের গোড়া মাটির সঙ্গে পিষে নেভাল, পলকের জন্যে আগুনের শিখার আড়ালে নাচতে থাকা অবয়বগুলো দেখল শূন্য দৃষ্টিতে–অস্পষ্ট একটা মুখ ফুটে উঠেছে। প্রায় ছয় বছর হতে চলল রক্তমাংসের। অ্যাগনেস নোলানকে দেখেনি ও। কিন্তু ক্যাম্পের আগুনের পটভূমিতে এভাবে বহুবার অপূর্ব সুন্দর মুখটা কল্পনা করেছে, কল্পনা করতে ভাল লেগেছে।

টম নোলানের ঘরে কিভাবে অ্যাগনেসের মত মেয়ে জন্মেছে, ব্যাপারটা বরাবরই বিস্মিত করত ওকে। স্বভাবের মত দেখতেও বদখৎ সে। কিন্তু বেসিনের লোকজন জানে টম নোলানের স্ত্রী ছিল দারুণ সুন্দরী; অ্যাগনেসের জন্মের বছর খানেক পরই স্বামীর ওপর খেপে গিয়ে চিরতরে চলে গিয়েছিল মহিলা-রেখে গিয়েছিল একটা বাচ্চা আর তিক্ত কিছু স্মৃতি।

স্যাডলে মাথা এলিয়ে দিল বেন। শত মাইল দূরে থাকতে অ্যাগনেস নোলানের চিন্তা কুরে কুরে খেত ওকে, আর এখন কয়েক মাইলের মধ্যে পৌঁছে অস্থির করে তুলেছে–এতে বিস্ময়ের, কি আছে। কিন্তু মেয়েটিকে দেখার ইচ্ছে। নেই ওর, কিংবা দেখা করারও ইচ্ছে নেই। পুরানো ক্ষতের মুখ খুলে কি লাভ, যেখানে সিরেনোর রাস্তায় ওই ভয়ঙ্কর গানফাইটের কারণ স্বয়ং অ্যাগনেস নোলান।

সেই ঘটনার জের ধরে দু’জন লোক মারা গেছে, একজন বিকলাঙ্গ হয়েছে। যে কোন লোকের প্রতিহিংসা বা ঘৃণা দমানোর জন্যে যথেষ্ট রক্তপাত।

<

Super User