তিন গোয়েন্দা
প্রথম প্ৰকাশঃ আগস্ট ১৯৮৫

০১.

রকি বীচ, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া।

সাইকেলটা স্ট্যান্ডে তুলে রেখে ঘরে এসে ঢুকল রবিন মিলফোর্ড। গোলগাল চেহারা। বাদামী চুল। বেঁটেখাট এক আমেরিকান কিশোর।

রবিন, এলি? শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে ডাকলেন মিসেস মিলফোর্ড।

হ্যাঁ, মা, সাড়া দিল রবিন। উকি দিল রান্নাঘরের দরজায়। কিছু বলবে?

চেহারায় অনেক মিল মা আর ছেলের। চুলের রঙও এক। কেক বানাচ্ছেন মিসেস মিলফোর্ড। চাকরি কেমন লাগছে?

ভালই, বলল রবিন। কাজকর্ম তেমন নেই। বই ফেরত দিয়ে যায় পাঠকরা। নাম্বার দেখে জায়গামত ওগুলো তুলে রাখা, ব্যস। পড়াশোনার প্রচুর সুযোগ আছে।

কিশোর ফোন করেছিল, একটা কাঠের বোর্ডে কেক সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললেন মা।

কি, কি বলেছে?

একটা মেসেজ দিতে বলেছে তোকে।

মেসেজ কি মেসেজ?

বুঝলাম না। আমার অ্যাপ্রনের পকেটে আছে।

দাও, হাত বাড়াল রবিন।

একটু দাঁড়া। হাতের কাজটা সেরেই দিচ্ছি, বড় দেখে একটা কেক তুলে নিলেন মা। ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নে, খেয়ে নে এটা। নিশ্চয় খিদে পেয়েছে।

কেকটা নিয়েই কামড় বসাল রবিন।

হ্যাঁরে, রবিন, রোলস রয়েস তো পেলি…

শুনেছ। তাহলে। আমি না, কিশোর পেয়েছে, কেক চিবুতে চিবুতে বলল রবিন। চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। একশো আশিটা বেশি বলে ফেলেছিলাম, মুসা দুশো দশটা কম।

ওই হল! কিশোরের পাওয়া মানেই তোদেরও পাওয়া। …রবিন, প্রতিযোগিতাটা কি ছিল রে?

জান না? চিবানো কেকটুকু কোৎ করে গিলে নিয়ে বলল রবিন, সে এক কাণ্ড! বড় এক জারে সীমের বীচি ভরে শোরুমের জানালায় রেখে দিয়েছিল কোম্পানি…

হ্যাঁ। ঘোষণা করলঃ জারে কাটা বীচি আছে যে বলতে পারবে, শোফারসজ একটা রোলস রয়েস দিয়ে দেয়া হবে তাকে তিরিশ দিনের জন্যে। সব খরচ-খরচা কোম্পানির। জারটা দেখে ঝটপট আনসার সাবমিট করে দিয়ে এলাম। আমি আর মুসা। কিশোর তা করল না। জারটা ভাল করে দেখল, এদিক থেকে ওদিক থেকে। বাড়ি ফিরে এল। শুরু করল হিসেব। কত বড় জার, বীচির সাইজ, প্রতিটা বীচি কতখানি জায়গা দখল করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনটে দিন শুধু ওই নিয়েই রইল। …তার উত্তরও পুরোপুরি সঠিক হয়নি, তিনটে বেশি। তবে এরচেয়ে কাছাকাছি আর কারও হয়নি। কিশোরের জবাবকেই সঠিক করে নিয়েছে কোম্পানি, আবার কেকে কামড় বসাল রবিন।

ছুটি তাহলে খুব আনন্দেই কাটছে তোদের, একটা কাপড়ে হাত মুছছেন মা। কোথায় কোথায় যাচ্ছিস?

সেটা নিয়েই ভাবছি, বাকি কেকটুকু মুখে পুরে দিল রবিন।

তারেকটা নিবি?

মাথা নাড়ল রবিন। হাত বাড়াল, মেসেজটা, মা?

পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বের করলেন মিসেস মিলফোর্ড। ইংরেজিতে বানান করে করে বলেছে কিশোর, লিখে নিয়েছেন তিনি। পড়লেন, স্যাবুজ ফ্যাটাক য়েকা ছাপা খ্যানা চালু মানে কি রে এর?

সবুজ ফটক এক দিয়ে ঢুকতে হবে। ছাপাখানা চালু হয়ে গেছে, বলতে বলতেই ঘুরে দাঁড়াল রবিন। রওনা হয়ে গেল দরজার দিকে।

ও-মা, এই এলি! আর এখুনি… থেমে গেলেন মা। বেরিয়ে গেছে। রবিন। কাঁধ বাঁকালেন তিনি।

এক ছুটে হলরুম পেরোল রবিন। দরজা খুলে প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এল। বাইরে। ধাক্কা দিয়ে সন্ট্যান্ড সরিয়েই এক লাফে সাইকেলে চড়ে বসল। পা ভাঙা, ভুলেই গেছে যেন।

ব্যথা আর তেমন পায় না। এখন। সাইকেল চালাতেও বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ঘটিয়েছে ঘটনাটা। ভাঙা জায়গায় ব্রেস লাগিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার আলমানজু। অভয় দিয়েছেন, শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে পা।

ছোট্ট ছিমছাম শহর রকি বীচ। একপাশে প্রশান্ত মহাসাগর, অন্যপাশে সান্তা মনিকা পর্বতমালা।

পর্বত বললে বাড়িয়ে বলা হয় সান্তা মনিকাকে, পাহাড় বললে কম হয়ে যায়। ওরই একটাতে চড়তে গিয়ে বিপত্তি ঘটিয়েছে রবিন। বেশ খাড়া। সাধারণত কেউ চড়তে যায় না। বাজি ধরে ওটাতেই চড়তে গেল সে। পাঁচশো ফুট উঠেছিল কোনমতে, তারপরই পা পিছলাল।

শহরতলীর প্রান্ত ছাড়িয়ে এল রবিন। ওই যে, দেখা যাচ্ছে জাংক-ইয়ার্ডটা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড।

দুই ভাই জাহেদ পাশা আর রাশেদ পাশা। বাঙালী। গড়ে তুলেছেন ওই জাংক-ইয়ার্ড। আগে নাম ছিলঃ পাশা বাতিল মালের আড়ত। ইংরেজি অক্ষরে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল বাংলা নামের। সঠিক উচ্চারণ কেউই করতে পারত না, খালি বিকৃত উচ্চারণ। রেগেমেগে শেষে নামটা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন রাশেদ পাশা, কিশোরের চাচা।

এখন রাশেদ পাশা একাই চালান স্যালভিজ ইয়ার্ড। ভাই নেই। ভাবীও নেই, দুজনেই মারা গেছেন এক মোটর-দুর্ঘটনায়। হলিউড থেকে ফিরছিলেন রাতের বেলা। পাহাড়ী পথ। কেন যে ব্যালান্স হারিয়েছিল গাড়িটা, জানা যায়নি। নিচের গভীর খাদে পড়ে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। কিশোরের বয়েস তখন এই বছর সাতেক।

অনেক কিছুই পাওয়া যায় পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে, তবে সবই পুরানো। আলপিন থেকে শুরু করে রেলগাড়ির ভাঙা বগি, চাই কি, জাহাজের খোলের টুকরোও আছে। নিলামে কিনে আনেন রাশেদ পাশা। বেশির ভাগই বাতিল জিনিস, তবে মাঝে মাঝে ভাল জিনিসও বেরিয়ে পড়ে। ওগুলো বেশ ভাল দামেই বিক্রি হয়। আর বাতিল জিনিসপত্রের অনেকগুলোই সারিয়ে নেয়া যায়। ওগুলো থেকেও মোটামুটি টাকা আসে। সব মিলিয়ে ভাল লাভ। তবে খাটুনি অনেক।

কিশোরদের জন্যে পরম লোভনীয় জায়গাটা। খুঁজলেই বেরিয়ে পড়ে প্রচুর খেলার জিনিস।

ইয়ার্ডের আরও কাছে চলে এসেছে। রবিন। চোখে পড়ছে রঙচঙে টিনের বেড়ার গায়ে আঁকা বিচিত্র সব ছবি। স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা।

বেড়ার গায়ে সামনের দিকে আঁকা রয়েছে গাছপালা, ফুল, হ্রদ। হ্রদের পানিতে সাঁতার কাটছে রাজহাঁস। পাশে পাহাড়ের ওপারে। সাগর। সাগরে পালতোলা জাহাজ, নৌকা। কেমন একটা হাসি হাসি ভাব ছবিগুলোতে, ভারিক্কি কিছু নয়।

লোহার বিরাট সদর দরজা। পুড়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল কোন প্যালেস। ওখান থেকেই কিনে আনা হয়েছে পাল্লাজোড়া। রঙ করতেই আবার প্রায় নতুন হয়ে গেছে। ইয়ার্ডের শোভা বাড়াচ্ছে এখন।

দরজার কাছে গেল না। রবিন। পাশ কাটিয়ে চলে এল। বেড়ার ধার ধরে ধরে এগিয়ে গেল শখানেক গজ। এখানে বেড়ার গায়ে আকা নীল সাগর। দুই মাস্তুলের পালতোলা একটা জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়েছে। মাথা উচু করে দেখছে একটা বড় মাছ।

সাইকেল থেকে নামল রবিন। হ্যাণ্ডেল ধরে ঠেলে নিয়ে এল বেড়ার কাছে। হাত বাড়িয়ে মাছের চোখ টিপে ধরল।

নিঃশব্দে ডালার মত উঠে গেল বেড়ার গায়ে লেগে থাকা দুটো সবুজ বোর্ড। কয়েকটা গোপন প্রবেশ পথের একটা সবুজ ফটক এক।

সাইকেল নিয়ে ইয়ার্ডে ঢুকে পড়ল। রবিন। আবার নামিয়ে দিল। বোর্ডদুটো। কানে আসছে ঘটাং-ঘট ঘটাং-ঘাট আওয়াজ। কোণের আউটডোর ওয়ার্কশপের দিকে চেয়ে মুচকে হাসল। রবিন। ভাঙা মেশিনটা তো মেরামত হয়েছেই, কাজও শুরু হয়ে গেছে।

মাথার ওপরে টিনের চাল। ছয় ফুট চওড়া। টিনের এক প্রান্ত আটকে দেয়া হয়েছে বেড়ার মাথায়, আরেক প্রান্ত খুঁটির ওপর। ভেতরের দিকে বেড়ার ঘরের প্রায় পুরোটার মাথায়ই টানা রয়েছে এই চাল। ভাল আর দামি জিনিসগুলো এই চালার নিচে রাখেন রাশেদ পাশা। একপাশে খানিকটা জায়গার মালপত্র সরিয়ে তার ওয়ার্কশপ বসিয়েছে কিশোর।

সাইকেল স্ট্যান্ডে তুলে রাখতে রাখতে একবার পেছনে ফিরে চাইল রবিন। দৃষ্টি বাধা পেল পুরানো জিনিসপত্রের স্তুপে। ইয়ার্ডের মূল অফিস আর কিশোরের ওয়ার্কশপের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই স্তুপ। অফিসের রঙিন টালির চুড়াটা শুধু চোখে পড়ে এখান থেকে। মেরিচাচীর কাচে ঘেরা। চেম্বারটা দেখা যায় না।

পুরানো জিনিস কেনার কাজে প্রায় সারাক্ষণই বাইরে বাইরে থাকেন রাশেদচাচা, ইয়ার্ড আর অফিসের ভার থাকে তখন মেরিচাচীর ওপর।

ওয়ার্কশপে ঢুকে পড়ল। রবিন। ছোট প্রিন্টিং মেশিনটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা, বলিষ্ঠ এক কিশোর। কুচকুচে কালো গায়ের রঙ। মাথায় কোঁকড়া কালো চুল। আমেরিকান মুসলমান, মুসা আমান।

মহা ব্যস্ত মুসা। ঘামছে দরদরি করে। সাদা একগাদা কার্ড পড়ে আছে পাশের একটা ছোট টুলে। একটা করে কার্ড তুলে নিয়ে মেশিনে চাপাচ্ছে, ছাপা হয়ে গেলেই আবার বের করে নিচ্ছে দ্রুত হাতে।

পাশে তাকাল রবিন। পুরানো একটা সুইভেল চেয়ারে বসে আছে কিশোর পাশা। হালকা-পাতলা শরীরের তুলনায় মাথাটা বড়। ঝাঁকড়া চুল। চওড়া কপালের তলায় অপূর্ব সুন্দর দুটো চোখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ঝিলিক। বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর সাহায্যে চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। ভাবনার ঝড় বইছে মাথায়, বুঝতে পারল রবিন।

কি ছাপাচ্ছ? মেশিনের কাছে এগিয়ে গেল রবিন।

এই যে, এসে গেছে, ফিরে চেয়েই বলে উঠল মুসা।

ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এল কিশোর। রবিনের দিকে চেয়ে বলল, মেসেজ পেয়েছ?

পেয়েই তো এলাম, জবাব দিল রবিন।

গুড, ভারিক্কি চালে বলল কিশোর। মুসা, একটা কার্ড দেখাও ওকে।

মেশিন বন্ধ করে দিল মুসা। একটা কার্ড তুলে বাড়িয়ে ধরল। রবিনের দিকে। নাও।

বড় আকারের একটা ভিজিটিং কার্ড। ইংরেজিতে লেখাঃ

তিন গোয়েন্দা
??
প্রধানঃ কিশোর পাশা
সহকারীঃ মুসা আমান
নথি গবেষকঃ রবিন মিলফোর্ড

বাহ, সুন্দর হয়েছে তো। প্রশংসা করল রবিন। এগিয়ে যাওয়াই ঠিক করলে তাহলে?

হ্যাঁ, ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি খোলার এই-ই সুযোগ, বলল কিশোর। স্কুল ছুটি। তিরিশ দিনের জন্যে একটা গাড়ি হয়ে গেল। খুব কাজে লাগবে, থামল একটু সে। সরাসরি রবিনের দিকে তাকাল। আমরা এখন তিন গোয়েন্দা। এজেন্সির চার্জে থাকছি। আমি। তোমার কোন আপত্তি আছে?

না, মাথা নাড়ল রবিন। ডিটেকশনের কাজ আমার চেয়ে ভাল বোঝ তুমি।

গুড। সহকারী হতে মুসারও আপত্তি নেই, বলল কিশোর। তোমার এখন সময় খারাপ। পা ভাঙা। দৌড়বীপের কাজগুলো খুব একটা করতে পারবে না। বসে বসেই কিছু করা। আপাতত লেখাপড়া আর রেকর্ড রাখার দায়িত্ব রইল তোমার ওপর।

আমি রাজি, বলল রবিন। এবং খুশি হয়েই। লাইব্রেরিতে কাজের ফাঁকে ফাঁকেই পড়াশোনাটা সেরে ফেলতে পারব। রেকর্ড রাখাটাও এমন কিছু কঠিন না।

গুড, মাথা ঝোঁকাল কিশোর। ভেবে বস না, খুব হালকা কাজ পেয়ে গেছ। তদন্তের নিয়মকানুন অনেক বদলে গেছে আজকাল। এ-কাজে এখন প্রচুর পড়াশোনা আর গবেষণা দরকার। …কি হল, কার্ডের দিকে ওভাবে চেয়ে আছ কেন?

তিনটে প্ৰশ্নবোধক চিহ্ন কেন?

সূক্ষ্ম একটা হাসির আভাস খেলে গেল কিশোরের মুখে। চট করে একবার চাইল মুসার দিকে।

ঠিকই বলেছ, কিশোর, মুসার চোখে বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা। ঠিক অনুমান করেছ তুমি!

কি? জানতে চাইল রবিন।

তুমিই বল, কিশোরকে বলল মুসা। গুছিয়ে বলতে পারব না। আমি।

চিহ্নগুলো কার্ডে বসানোর অনেক কারণ আছে, ব্যাখ্যা করতে লাগল কিশোর। একঃ রহস্যের ধ্রুবচিহ্ন ওই প্ৰশ্নবোধক। আমরা কার্ডে দিয়েছি, কারণ, যে-কোন রহস্য সমাধানে আগ্ৰহী আমরা। ছিচকে চুরি থেকে শুরু করে ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, এমনকি ভৌতিক রহস্যের তদন্তেও পিছপা নই। দুইঃ চিহ্নগুলো আমাদের ট্রেডমার্ক। দলে তিনজন, তাই তিনটে চিহ্ন, থামল সে।

অপেক্ষা করে রইল রবিন।

তিন, আবার শুরু করল কিশোর। লোকের মনে কৌতুহল জাগাবে ওই চিহ্ন। কেন বসানো হয়েছে, জিজ্ঞেস করবেই। কথা বলার সুযোগ পাব তখন। এতে আমাদের কথা মনে থাকবে তাদের। নাম ছড়াবে অনেক বেশি, রবিনের দিকে চাইল সে। আরও কারণ আছে, পরে ধীরে ধীরে জানতে পারবে সেগুলো।

আর কি কারণ জানার কৌতুহল হল খুব, কিন্তু বলার জন্যে চাপাচাপি করল না। রবিন। বন্ধুর স্বভাব জানে। নিজে থেকে না বললে হাজার চাপাচাপি করেও মুখ খোলানো যাবে না কিশোরের।

মেশিন ঠিক, কার্ড ছাপানো শেষ, গাড়িও পেয়ে গেছি, বলল রবিন। এবার কোন একটা কাজ পেয়ে গেলেই নেমে পড়তে পারতাম।

কাজ একটা পেয়ে গেছি আমরা, মুসা জানাল।

পাইনি এখনও, শুধরে দিল কিশোর। পাবার আশা আছে। সোজা হয়ে বসল সে। তবে সামান্য একটা অসুবিধে আছে।

কেসটা কি? অসুবিধেটাই বা কি? কৌতুহল ঝরল রবিনের গলায়।

একটা ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজছেন মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার, সত্যি সত্যি ভূত থাকতে হবে। তাঁর একটা ছবির শুটিং করবেন। সেখানে, জানাল মুসা। স্টুডিও থেকে শুনে এসেছে বাবা।

হলিউডের বেশ বড়োসড়ো একটা স্টুডিওতে বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন মুসার বাবা মিস্টার রাফাত আমান।

ভূতুড়ে বাড়ি ভুরু কুঁচকে গেছে। রবিনের। তা-ও আবার সত্যি সত্যি ভুত থাকতে হবে তা কি করে সম্ভব?

ভুত আছে কি নেই, সেটা পরের কথা। তেমন একটা বাড়ির খোঁজ পেলেই তদন্ত শুরু করে দেব আমরা, জবাব দিল কিশোর। ভুত থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও ক্ষতি নেই। আমরা খোঁজখবর করতে শুরু করলেই জানাজানি হবে। নাম ছড়াবে তিন গোয়েন্দার।

অসুবিধে কি ভুত নিয়েই?

না।

তবে? মিস্টার ক্রিস্টোফার আমাদেরকে কাজ দিতে রাজি হচ্ছেন না।

হতেই হবে তাঁকে। আমাদের সার্ভিস নিতে বাধ্য করব, কেমন রহস্যময় শোনাল কিশোরের গলা। তিন গোয়েন্দার যাত্রা শুরু হবে মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের কাজ নিয়েই।

শিওর, শিওরা ব্যঙ্গ প্ৰকাশ পেল রবিনের গলায়। মার্চ করে। সোজা গিয়ে ঢুকে পড়ব পৃথিবী বিখ্যাত এক চিত্র পরিচালকের অফিসে এবং আমরা গিয়ে হাজির হলেই কাজ দিয়ে দেবেন। এতই

সহজা

খুব কঠিনও মনে হচ্ছে না। আমার কাছে, বলল কিশোর। ইতিমধ্যেই মিস্টার ক্রিস্টোফারকে ফোন করেছি। আমি। অ্যাপিয়েন্টমেন্টের জন্যে।

ইয়াল্লা! রবিনের মতই ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার। তিনি দেখা করবেন। আমাদের সঙ্গে?

না, সহজ গলায় বলল কিশোর। লাইনই দেয় নি তাঁর সেক্রেটারি।

তা তো দেবেই না, বলল মুসা।

শুধু তাই না, শাসিয়েছে, তাঁর অফিসের কাছাকাছি গেলেই আমাদেরকে হাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে, যোগ করল। কিশোর। মেয়েটা কে জান? কেরি ওয়াইল্ডার।

মুরুকী কেরি। একসঙ্গে বলে উঠল মুসা আর রবিন।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ওদের চেয়ে কয়েক গ্রেড ওপরের ছাত্রী কেরি ওয়াইল্ডার। পড়ালেখায় ভাল। সুনাম আছে ভাল মেয়ে বলে। স্কুলে নিচের গ্রেডের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয় মাঝে মাঝে। মুরু কঁৰীয়ানা ফলানোর লোভটা সামলাতে পারে না। ফলে নাম হয়ে গেছে। মুরু কবী কেরি।

এবারের ছুটতে তাহলে সেক্রেটারির কাজ নিয়েছে। মুরুঝবী চিন্তিত দেখাচ্ছে রবিনকে। মিস্টার ক্রিস্টোফারের সঙ্গে দেখা করার আশা ছেড়ে দাও। মুরু কবীর অফিস পেরোনোর চেয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়া অনেক সহজ।

মূল অসুবিধে এটাই, বলল কিশোর। তবে যে কাজে নামতে যাচ্ছি, বাধা আর বিপদ আসবেই পদে পদে। ওসবের মোকাবিলা করতে না পারলে নামাই উচিত না। আগামীকাল সকালে রোলস রয়েসে চেপে হলিউডে চলে যাব। দেখা করতেই হবে মিস্টার ক্রিস্টোফারের সঙ্গে।

যদি পুলিশে খবর দেয় মুরুব্বী? বলল রবিন। আমার ব্যাপারে অবশ্য ভাবছি না। কাল তোমাদের সঙ্গে যেতে পারব না। আমি। লাইব্রেরিতে কাজ আছে।

তাহলে আমি আর মুসা যাব। কাল সকাল দশটায়। তার আগেই গাড়ি পাঠাতে ফোন করব কোম্পানিকে। হ্যাঁ, তুমি একটা কাজ কর, রবিন, বলে একটা কার্ড তুলে নিল কিশোর। উল্টেপিঠে একটা নাম লিখে বাড়িয়ে ধরল। এটা রাখ। এই নামের একটা দুৰ্গ আছে। পুরানো ম্যাগাজিন কিংবা পত্র-পত্রিকায় নিশ্চয় উল্লেখ থাকবে। এটার ব্যাপারে যত বেশি পার তথ্য জোগাড় করবে।

টেরর ক্যাসল! পড়ে ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। বড় বড় হয়ে গেছে চোখ।

নাম শুনেই ঘাবড়ে গেলো! এত ভয় পেলে গোয়েন্দাগিরি করবে কি করে?

না না, ঘাবড়াইনি…

ঠিক আছে, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। কিছু কার্ড সঙ্গে রাখা। তিনজনকেই রাখতে হবে এখন থেকে। এগুলোই আমাদের পরিচয়পত্র। আগামীকাল থেকে পুরোপুরি কাজে নামব আমরা। পালন করব যার যার দায়িত্ব।

<

Super User