রকি বীচ মেমোরিয়াল হসপিটালের আউটডোর পার্কিঙের কাছে এসে ঘাঁচ করে ব্রেক কষল মুসা। গাড়ির অভাবে অনেক কষ্ট করেছে। তাই কিনে ফেলেছে আরেকটা। অবশ্যই সেকেন্ড হ্যান্ড এবং পুরানো মডেল। একাশি মডেলের শিরোকো। গোঁ গোঁ করে দুবার গর্জে উঠে বন্ধ হয়ে গেল ইঞ্জিন। উইন্ডশীল্ড ওয়াইপার দুটো চলতে চলতে থেমে গেল মাঝপথে।

খাইছে! বলল সে, বৃষ্টি যা হচ্ছে না!

হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল পাশে বসা কিশোর পাশা।

শুধু বৃষ্টি না, ঝড়ো বাতাসও বইছে। ঝমঝম ঝমঝম অবিরত উইন্ডশীন্ডে আঘাত হেনে চলেছে বড় বড় ফোটা। আকাশ চিরে দিল বিদ্যুতের শিখা। বাজ পড়ল বিকট শব্দে।

থামবে না। এরই মধ্যে বেরোতে হবে, মুসা বলল। ভিজিটিং আওয়ারও শেষ হয়ে আসছে।

ফারিহাকে দেখতে এসেছে ওরা। একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। ইদানীং ওর সঙ্গে হৃদ্যতা গড়ে উঠছে মুসার।

চুপ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর।

কি হলো, নাম না। ফারিহা অপেক্ষা করছে।

করুক। বৃষ্টি যে হচ্ছে সেটাও নিশ্চয় বুঝতে পারছে। কার ওপর বিরক্ত হয়েছে কিশোর, বোঝা গেল না। সীটবেল্ট খুলল।

আসলে মেয়েদেরকে তুমি দেখতে পারো না।

কথাটা ঠিক না, মুসা। তবে ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান শুরু করে যখন, তখন আর ভাল্লাগে না। আর যখন কোন ব্যাপারে অহেতুক চাপাচাপি শুরু করে, না বুঝে।

হেসে উঠল মুসা। জিনার সামনে বলে দেখ এসব কথা…

বললে কি হবে? খেয়ে ফেলবে নাকি?

জবাব দিল না মুসা। ঠেলা দিয়ে খুলে ফেলল দরজা। উইন্ডব্রেকারের হুড তুলে দিয়ে বেরিয়ে গেল বৃষ্টির মধ্যে। মাথা নিচু করে দিল দৌড়। কিশোরও বেরোল। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মুসার পিছু নিল।

বারান্দায় উঠে উইন্ডব্রেকার খুলে ঝেড়ে পানি ফেলল। তারপর ভাঁজ করে। হাতে নিয়ে রওনা হলো রুম নম্বর ১১১১-এর দিকে।

ঢুকে দেখল বিছানায় শুয়ে আছে ফারিহা ডিকটার। ফোনে কথা বলছে। এক আঙুলে বার বার পেঁচাচ্ছে কোঁকড়া চুল। টিভি অন করা। মিউজিক শো চলছে। দেখে মনেই হয় না, মাত্র তিনদিন আগে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছে তার।

রকি বীচ হাই স্কুলে হাসিখুশি মিশুক মেয়ে বলে সুনাম আছে ফারিহার। মাস ছয়েক আগে হঠাৎ করেই মনে হয়েছে তার, মুসা খুব ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা চলে।

ওদেরকে ঢুকতে দেখে ফোনে বলল ফারিহা, আজ রাখি, শেলি। মুসা আর কিশোর এসেছে… কি বললে?… কিশোর?…জানি না।

নিজের নাম শুনে শূন্য দৃষ্টিতে একবার ফারিহার দিকে তাকিয়েই আরেক দিকে চোখ সরিয়ে নিল কিশোর।

ও তো সব সময়ই মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলে, ফারিহা বলল। আচ্ছা, দেখি জিজ্ঞেস করে, কিশোরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, শেলি কথা বলতে চায়।

ঢোক গিলল কিশোর। যত জটিল রহস্যই হোক, তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ওর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যতই বড় হচ্ছে, বুঝতে শিখছে, অভিজ্ঞ হচ্ছে, ততই যেন মেয়েদেরকে আরও বেশি রহস্যময় মনে হচ্ছে ওর। ওদের কোন কিছুই যেন বোঝা যায় না। না বলতে পারলেই খুশি হত কিশোর, তবু এভাবে মুখের ওপর বলে দেয়াটা অভদ্রতা। তাই হাত বাড়াল, দাও।

রিসিভার কানে ঠেকাল গোয়েন্দাপ্রধান। হ্যালো। কিশোর পাশা বলছি।

খিলখিল করে হাসল শেলি। ঘাবড়ে গেছ মনে হয়? তারপর? চলছে কেমন?

এই তো শুরু হলো ফালতু কথা! মনে মনে বলল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, কি চলছে?

বোকা নাকি? কেমন আছ জিজ্ঞেস করছি, বুঝতে পারছ না?

তাহলে কেমন আছি, সেটা সোজা করে জিজ্ঞেস করলেই হয়।

আ মর, জ্বালা! তোমার সঙ্গে কথা বলাই ঝকমারি…

তাহলে বলো কেন?

হাসতে আরম্ভ করেছে মুসা আর ফারিহা। জানে, এরকমই একটা কিছু ঘটবে।

বলি কেন? এটা একটা কথা হলো…

ঘামতে শুরু করেছে কিশোর। ঠিক এই সময় লাল চুলওয়ালা একজন নার্স উঁকি দিয়ে বলল, ভিজিটিং আওয়ার শেষ। বেরিয়ে যেতে হবে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন কিশোর। তাড়াতাড়ি রিসিভারটা ফিরিয়ে দিল ফারিহার হাতে। ফারিহা বলল, শেলি, পরে কথা বলব। এখন রাখি…

বলেই চলে গেছে নার্স। হঠাৎ ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। দুজন আদালী আর দুজন নার্স একটা চাকাওয়ালা বেড ঠেলতে ঠেলতে ঢুকল। সঙ্গে ঢুকলেন একজন ডাক্তার। লাফিয়ে সরে গেল কিশোর।

বেডটাতে একজন রোগী। একটা মেয়ে। কিশোরদেরই বয়েসী হবে। কালো কোঁকড়া চুল। সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। জখম আছে। ব্যান্ডেজ লাগানো।

ফারিহা, ডাক্তার বললেন। তোমার নতুন রুমমেট। রোগীকে ফারিহার পাশের বিছানাটায় শোয়াতে নার্সদের সাহায্য করলেন তিনি। বেহুঁশ হয়ে আছে রোগী।

বেশি অসুস্থ? ফারিহা জানতে চাইল।

ওর জখমগুলো সুপারফিশিয়াল মনে হচ্ছে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। আমার ধারণা, কনকাশন আর মাইল্ড শক থেকে সেরে উঠছে।

হাঁ হয়ে গেছেন ডাক্তার। অবাক হাসি ফুটল মুখে। ডাক্তারি পড়ছ নাকি?

না, মাথা নাড়ল কিশোর। তবে অবসর সময়ে যে কোন বই হাতের কাছে পেলে পড়ে ফেলি।

নার্সেরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেয়েটার হাতে স্যালাইনের সুচ ঢুকিয়ে দিয়েছে। স্যালাইনের সঙ্গে আরও নানারকম ওষুধ মিশিয়ে দিতে লাগল। কাজ শেষ করে সরে দাঁড়াল। চার্টে নোট লিখে দিতে লাগলেন ডাক্তার।

কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল ফারিহা।

অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, ডাক্তার জানালেন। কাউন্টিলাইন ড্রাইভে। ও কিছু না। এ রকম রাতে অ্যাক্সিডেন্ট করবেই। দিনের বেলাতেই করে বসে, যে ভাবে বেপরোয়া চালায় আজ কালকার…

ডাক্তারের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবার দরজায় উঁকি দিল লাল চুলওয়ালা সেই নার্স। কিশোর আর মুসার দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠল, যাওনি এখনও! বললাম না ভিজিটিং আওয়ার শেষ।

শুনেছি তো, বিরক্ত হয়েই বলল মুসা।

তাহলে যাচ্ছ না কেন? দারোয়ানকে খবর দেব?

ফারিহার দিকে তাকাল মুসা। চলি, ফারিহা। কাল আবার আসব। রাতে ইচ্ছে করলে ফোন কোরো। কিশোরদের বাড়িতেই থাকছি আজ।

নার্সের দিকেও নজর নেই কিশোরের, মুসা আর ফারিহার দিকেও না। সে তাকিয়ে রয়েছে নতুন রোগীর দিকে।

অ্যাই, এসো, ডাকল মুসা। কি দেখছ?

চার্টে নাম লিখে গেছেন ডাক্তার। জুন লারসেন। কে ও?

আমি কি জানি? চলো। ওই নার্সটা যদি এসে দেখে এখনও যাইনি…

চলো।

মেয়েটা কে মিনিটখানেক পরেই জেনে গেল দুজনে। এলিভেটরের দিকে চলেছে। এই সময় বিশালদেহী একজন মানুষ হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন ওটার ভেতর থেকে। ছুটে গেলেন নার্সরা যেখানে বসে সেদিকে। সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন লাল চুলওয়ালা নার্সের ডেস্কের সামনে। মাথা ঝুঁকিয়ে প্রায় মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মেয়ে কোথায়? কোন ঘরে?

আরে এ তো হার্বার্ট লারসেন! চিনে ফেলেছে কিশোর। চিকেন!

হ্যাঁ, মুসাও চিনতে পেরেছে। দি চিকেন কিং! মুরগীর রাজা!

লাল, সাদা, নীল রঙের বিচিত্র সমাহার পোশাকে। বেশির ভাগ সময়েই যা পরে থাকেন সেই জগিং স্যুট। এই পোশাকে টিভিতেও দর্শকদের দেখা দিয়েছেন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় সবাই চেনে তাঁকে। হাজার হাজার বার দেখেছে। টিভির পর্দায়। যে কোন চ্যানেল খুললেই কোন না কোন সময় চোখে পড়বেই বিজ্ঞাপনটা। ওখান থেকেই তাঁর ডাক নাম হয়ে গেছে চিকেন। আগের দি এবং পরের কিংটা বাদ দিয়ে দিয়েছে লোকে।

জুন লারসেন-হার্বার্ট লারসেন, বিড়বিড় করছে কিশোর। জুন নিশ্চয়ই লারসেনের মেয়ে।

রুম ওয়ান ওয়ান ওয়ান ওয়ান, মিস্টার লারসেন, নার্স বলল।

ওটা কি লাকি রুম? লারসেন বললেন, আমি চাই, আমার মেয়ে লাকি রুমে থাকুক। যেটাতে কোন রোগী মারা যায়নি। কোথায় ওটা? কোন দিকে? কোন ঘরটা?

ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ভদ্রলোক। তার জন্যে খারাপই লাগল কিশোরের। এগিয়ে গেল নার্সের ডেস্কের কাছে। মিস্টার লারসেন, ওই যে ওই ঘরটা।

লারসেন যেমন লম্বা তেমনি চওড়া। কিশোরকে ক্ষুদ্রই মনে হলো তার কাছে, যদিও সে-ও কম লম্বা নয়। ভুরু কুঁচকে তাকালেন কিশোরের দিকে, তুমি শিওর?

হ্যাঁ, এই মাত্র দেখে এলাম। ওঘরে আমাদের এক বন্ধুও আছে। জুন এখন ঘুমিয়ে।

কিছুটা যেন স্বস্তি পেলেন চিকেন কিং। সোয়েটশার্টের পকেট থেকে দুটো কুপন বের করে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নাও। দুটো টিকেট। আমার দোকানে গেলে ফ্রী খেতে পারবে চিকেন। আমার নিজের তৈরি সোনালি সসে চুবিয়ে। খেলে ভুলবে না।

নিতে দ্বিধা করছে কিশোর।

আরে নাও নাও, তাড়া আছে আমার, জোর করে কুপন দুটো কিশোরের হাতে গুঁজে দিলেন লারসেন। তোমরা ভাল সংবাদ দিয়েছ। সেজন্যেই দিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম মরেই গেছে! থ্যাঙ্ক ইউ।

বিশাল শরীর নিয়ে বেশ দ্রুতই মেয়ের ঘরের দিকে ছুটলেন লারসেন। সেদিকে তাকিয়ে থেকে কুপনগুলো একটানে ছিড়ে ফেলল কিশোর। বাধা দিতে গেল মুসা। কিন্তু দেরি করে ফেলেছে। হায় হায়, এ কি করলে!

গত হপ্তায় ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, মনে নেই? পেটের অসুখের জন্যে? ভাজাভুজি খেতে মানা করে দিয়েছেন।

সে তো তোমাকে দিয়েছেন। আমাকে নয়।

এখানে আমার তোমার বলে কোন কথা নেই। পেটের জন্যে যেটা খারাপ, সবার জন্যেই খারাপ।

যুক্তি খুঁজে না পেয়ে চুপ হয়ে গেল, মুসা। তবে এত ভাল একটা খাবার এভাবে নষ্ট করা হলো বলে মনে মনে রেগেই গেল কিশোরের ওপর।

আবার বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠল দুজনে। স্যালভিজ ইয়ার্ডে রওনা হলো।

অ্যাক্সিডেন্টটা কি করে ঘটল জানতে পারলে হত, কিশোর বলল।

কিছু বলল না মুসা। একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। কিশোরের মনে কিসের খেলা চলছে ভাল করেই বুঝতে পারছে সে। পেয়ে গেছে রহস্য।

ইয়ার্ডে ঢুকল গাড়ি। সোজা এসে ওয়ার্কশপে ঢুকল দুজনে। ট্রেলারের ভেতরে তো পুরানো হেডকোয়ার্টার আছেই, ওয়ার্কশপটাকেও এখন আরেকটা হেডকোয়ার্টার বলা যায়। নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সাজিয়েছে কিশোর। এককোণে একটা ডেস্কের ওপর রাখা একটা অ্যানারিং মেশিন। ঢুকেই আগে ওটার কাছে এগিয়ে গেল সে। বোতাম টিপতেই মেসেজ টেপে শোনা গেল রবিনের পরিচিত হাসি হাসি কণ্ঠ, ফারিহাকে দেখতে যেতে পারলাম না। সরি। বস চলে গেছে শহরের বাইরে। নতুন আরেকটা ব্যান্ড চেক করতে গিয়েছিলাম। অফিসে ফিরে হাসপাতালে যাব ভাবছি, এই সময় ফোন করল এমিলি। ও আজকে দাওয়াত করেছিল, পার্টিতে, ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন চাপাচাপি শুরু করল, না গিয়ে আর পারলাম না। জানোই তো ওর অবস্থা। ওকে কি করে ঠেকানো যায়, বলো তো কিশোর? তোমার কম্পিউটারকে জিজ্ঞেস করে দেখ, কোন একটা পরামর্শ দিতে পারে কিনা, আচ্ছা, কাল দেখা হবে।

ট্যালেন্ট এজেন্সিতে বড় বেশি সময় দিচ্ছে রবিন, গানের কোম্পানিটার কথা বলল কিশোর, যেটাতে পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে নথি-গবেষক।

হ্যাঁ, মুচকি হাসল মুসা। আরেকটা চাকরিতেও বড় বেশি সময় নষ্ট করছে আজকাল। মেয়েদের পেছনে। রবিনটা যে এমন হয়ে যাবে, কল্পনাই করতে পারিনি।

কি আর করা যাবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কিশোর। এটা আমেরিকা। যে দেশের যা সমাজ। ও তো আর আমার মত নয় যে মেয়েদের সঙ্গে ডেটিং অপছন্দ করবে…

তোমাকেই বা কে মানা করেছে?

করেনি। তবে আমার এসব ভাল লাগে না। একটা ব্যাপারেই কষ্ট হয়, রবিনকে আর আগের মত পাচ্ছি না আমরা।

কই, পাচ্ছি না কোথায়? তিন গোয়েন্দার কাজের সময় তো ঠিকই এসে হাজির হয়। আমি একটা কথা লিখে দিতে পারি, দেখ, ট্যালেন্ট এজেন্সিতে বেশিদিন টিকবে না ও। ব্যাপারটা সাময়িক। ও আবার ফিরে যাবে লাইব্রেরিতে, বইয়ের জগতে।

তাই যাওয়া উচিত। যেখানে যাকে মানায়।

আর কথা বাড়াল না। কিছু কাজ আছে ওদের। ছোট একটা যন্ত্র মেরামত করতে বসে গেল কিশোর। ওটা দিয়ে ইলেক্ট্রনিক লক কম্বিনেশন পড়া সম্ভব কিছু যন্ত্রপাতি এদিক ওদিক করে নিলে, কিশোরের অন্তত সে রকমই ধারণা। ওকে বিরক্ত করল না মুসা। একটা ফুয়েল ইনজেকটরের স্পেয়ার পরিষ্কারে লেগে গেল। ওর গাড়ির জন্যে কাজে লাগবে।

বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারল না। কথা বলতে বলতে কাজ করে চলল দুজনে। কিশোরের একটা গাড়ি দরকার, সে কথা আলোচনা করল কিছুক্ষণ। আরও খানিকক্ষণ আফসোস করল রবিনকে আগের মত করে পাচ্ছে না বলে। এক সময় চলে এল চিকেন হার্বার্ট লারসেনের কথায়। জুন লারসেনের দুর্ঘটনার ব্যাপারটা এখনও মাথায় ঘুরছে কিশোরের। পুরোপুরি জানতে পারেনি বলে খুঁতখুঁত করছে মনটা।

হঠাৎ বাজল টেলিফোন। চমকে দিল দুজনকেই। ঘড়ির দিকে তাকাল। প্রায় মধ্যরাত। এত রাতে কে করতে পারে, বিশেষ করে শুক্রবারের রাতে?

পুরানো একটা সুইভেল চেয়ারে বসেছে কিশোর। ওটাকে ঘুরিয়ে ফোনের দিকে হাত বাড়াল। হ্যালো, তিন গোয়েন্দা।

কিশোর, ফারিহা বলছি। তোমাদের স্পীকারের সুইচ দিয়ে দাও। দুজনকেই শোনাতে চাই।

ফারিহা, টেলিফোন লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সুইচ অন করতে করতে মুসাকে জানাল কিশোর। আরও একটা বিশেষ নতুন ব্যবস্থা করেছে সে, যাতে এপাশে যতজন থাকবে, সবাই ওপাশের লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে।

মুসাও তারই মত অবাক হলো। জিজ্ঞেস করল, ফারিহা, কি হয়েছে? এত রাতে?

আবার সেই অনুভূতিটা হলো কিশোরের, রহস্যের গন্ধ পেলে যেমন হয়। তবে নিশ্চিত হতে পারছে না।

অদ্ভুত একটা কান্ড করছে জুন, জবাব দিল ফারিহা। ঘুমের মধ্যে গোঙাচ্ছে, আর বিড়বিড় করে কথা বলছে।

ওরকম অ্যাক্সিডেন্টের পর প্রলাপ বকাটাই স্বাভাবিক, কিশোর বলল।

তা ঠিক। তবে যা বলছে, তাতে ভয় লাগছে আমার। বলছে, হাজার হাজার, লাখ লাখ লোক মারা যাবে! বার বার বলছে একই কথা।

চুপ হয়ে গেল কিশোর আর মুসা। জবাব দিতে পারছে না।

ফারিহা বলছে, এই শেষ নয়। ও বলছে, মুরগীতে বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না! এটা অন্যায়! এমন ভঙ্গিতে বলছে, যেন নিজের চোখে বিষ মেশাতে দেখেছে। ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকছে বলে মনেই হয় না!

মৃদু শিস দিয়ে উঠল মুসা। সাংঘাতিক কথা!

ওর দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে কিশোর বলল, কি, বলেছিলাম না? আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে?

বলেছ। কিন্তু কে জানত, চিকেন কিং আমার প্রিয় খাবারে বিষ মেশাচ্ছেন?

<

Super User