এটা একটা পাজল হলো? ঠোঁট বাঁকাল কিশোর পাশা। দশ বছরের ছেলেও বাঁ হাতে সেরে দিতে পারে!

কিন্তু মুসার তা মনে হলো না। তার বয়েস দশ বছরের অনেক বেশি। বাঁ হাত তো দূরের কথা ডান হাতেও সে পারবে না। ড্যাগউডস ওয়াইফ অর্থাৎ ড্যাগউডের স্ত্রীর মানেই তো করতে পারছে না, যদিও ড্যাগউড নামটা পরিচিত লাগছে ওর কাছে।

ডেস্কে পা তুলে দিয়ে আরাম করে বসেছে রবিন। পেন্সিল আর ক্রসওয়ার্ড পাজলের একটা কপি নিয়ে ব্যস্ত। মুসার যতটা লাগছে তার কাছে ততটা কঠিন মনে না হলেও একেবারে সহজও লাগছে না।

হেডকোয়ার্টারে রয়েছে তিনজনে। হাতে কেস নেই। আকাশ খারাপ বলে বেরোতেও পারছে না। নইলে সাঁতার কাটতে যাওয়া যেত। তিন দিন ধরেই আবহাওয়ার ঘোষণা দিয়ে চলেছে টিভিঃ আকাশ মেঘলা থাকবে, যখন-তখন বৃষ্টি নামতে পারে, হালকা ঝড় হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

কিশোর বহুবার দেখেছে, বৃষ্টির সময় যখন ঘরে আটকে থাকে, তখন কেবল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ে, আর যেই সে বেরোল অমনি ঝুপঝুপ করে নামে।

এটা কোন ব্যাপারই না, বলে তার সামনে রাখা পুস্তিকাটা টেনে নিল। ধাঁধার আরেকটা কপি। পেছনে নির্দেশনা লেখা রয়েছে। সেটাই পড়ল, হাই স্কুলের ছাত্রদের জন্যে এই ধাঁধার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাদের বয়েস চোদ্দ থেকে আঠারোর মধ্যে। প্রবেশ মূল্য লাগবে না। মুখ তুলে মুসার দিকে তাকাল সে। পেলে কোথায় এটা?

সুপারমার্কেটে বিলি করছিল। অনেকটা জোর করেই তিনটে কপি গছিয়ে দিল আমার হাতে। যেন জানতই, আমরা তিনজন।

তাই নাকি! ইনটারেসটিং! আবার পড়তে লাগল কিশোর, পুরস্কার; উত্তর মেকসিকোর এক র‍্যাঞ্চে দুই হপ্তার চমৎকার একটা ছুটি কাটানো। প্রধান প্রধান আকর্ষণের মধ্যে থাকবে ঘোড়ায় চড়া, লেকে মাছ ধরা, ক্যাম্পিং, মুখরোচক মেকসিকান খাবার…

খাইছে, আর পড়ো না, এখনই জিভে পানি এসে যাচ্ছে! এই কিশোর, তোমার জন্যে তো ওটা কিছু না। করে ফেল না সমাধান। আমি শিওর ফার্স্ট প্রাইজটা তুমিই পাবে।

ভুরু নাচাল রবিন। ও পারলে তো ও যাবে। আমরা যাব কি করে?

ও সমাধান করলেই আমরাও দেখে দেখে বসিয়ে নেব। হয়ে যাবে।

কি জানি! হাত ওল্টাল রবিন। সবাইকে যেতে দিলে হয়। আমার বিশ্বাস, অনেকেই পারবে।

তোমার বিশ্বাস ভুল…

হাত তুলে বাধা দিল কিশোর, খালি তর্ক!

ট্রেলারের ছাতে বড় বড় ফোঁটা পড়ার আওয়াজ হলো।

মুখ বাঁকিয়ে মুসা বলল, মেকসিকোতে নিশ্চয় এরকম পচা আবহাওয়া নয়।

পুস্তিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। মুসার কথা কিংবা বৃষ্টির শব্দ ওর কানে ঢুকছে বলে মনে হলো না। পড়ল, লিখে জবাব দিলে চলবে না। টেপে রেকর্ড করে দিতে হবে। প্রথমে… থেমে গেল সে। দ্রুত চোখ বোলাল পাতার বাকি অংশটায়। তাজ্জব ব্যাপার!

কি? জানতে চাইল রবিন, এতে আবার অবাকের কি দেখলে?

পুস্তিকা ছাপাতে পয়সা লাগে, আনমনে বলল কিশোর, যেন নিজেকেই বলছে। আর মেকসিকোতে ছুটি কাটাতে যেতেও পয়সা লাগে। এরকম একটা প্রতিযোগিতার জন্যে কার এত টাকা খরচ করার ইচ্ছে হলো?

কোন ধরনের বিজ্ঞাপন হবে হয়তো, রবিন অনুমান করল। গানের কোম্পানিতে কাজ করে করে ব্যবসায়িক দিকটাই এখন বেশি নজরে পড়ে তার। আসলে ওরা চায় যাতে ধাঁধার জবাব দেয়ার জন্যে তুমি একটা টেপরেকর্ডার কিনতে বাধ্য হও। আর একটা ব্ল্যাংক ক্যাসেট।

মাথা আঁকাল কিশোর। কি জানি। তাহলে কোন্ স্টোর হতে কিনতে হবে সেটা বলল না কেন? কোন্ কোম্পানির জিনিস কিনতে হবে তা-ও বলেনি।

সুপারমার্কেটে লিফলেট বিলি করছিল যখন, মুসা বলল, হয়তো ওখানকারই কোন দোকানের হবে।

মাথা নাড়ল কিশোর। কোন কিছুই ভাল করে দেখ না তুমি। সুপারমার্কেটে ইলেক্ট্রনিকের দোকান কোথায়?

আবার পুস্তিকাটার দিকে তাকাল সে। বেড়াতে তার খারাপ লাগে না, তবে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ রহস্যের প্রতি। ধাঁধা পেলে তার জবাব না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। কেবলই খচখচ করতে থাকল মনে, কে এত টাকা খরচ করছে? কেন?

অনেক লিফলেট হয়তো বিলি করেছে, কিশোর বলল। আর জবাব এতই সহজ অনেকেই সমাধান করে ফেলতে পারবে। সুতরাং অনেকেই মেকসিকো যাওয়ার সুযোগও পাবে। অন্তত আমরা তিনজন তো পাবই।

অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল রবিন। তার মানে তুমি এর জবাব দিচ্ছ!

কেন নয়? ভ্রূকুটি করল কিশোর। ড্রয়ার থেকে একটা টেপরেকর্ডার বের করল। একটা ব্ল্যাংক ক্যাসেট বের করে তাতে ঢোকাল। তারপর রেকর্ড করার বোতামটা টিপে দিয়ে বলতে শুরু করল সমাধান।

ঘণ্টাখানেক পর তিনটে ক্যাসেটে তিনজনের শুদ্ধ সমাধান রেকর্ড করে নিয়ে তিনটে খামে ভরে সান্তা মনিকার ঠিকানা লিখল, যে ঠিকানায় জবাব পাঠাতে বলা হয়েছে পুস্তিকায়। এক কোণে নিজেদের নাম-ঠিকানাও লিখল।

ট্রেলারের হাতে বৃষ্টির শব্দ থেমে গেছে।

জলদি চলো, তাগাদা দিল রবিন। পোস্ট করে দিয়ে আসি, আবার বৃষ্টি নামার আগেই।

<

Super User