হাজেরা বিবি খাটে বসে আছেন। তাঁর বিছানায় ভাদ্র মাসের কড়া রোদ জানালা গলে পড়েছে। তিনি তার কাঠির মতো পা কিছুক্ষণ রোদে রাখছেন। পা চিড়বিড় করা শুরু হওয়া মাত্র টেনে নিচ্ছেন, আবার পা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। রোদ নিয়ে এই খেলা তার পছন্দ হচ্ছে। তিনি একেক সময় একেক ধরনের খেলা বের করেন।

হাবীবের স্ত্রী লাইলী শাশুড়ির খাটের পাশে মোড়ায় বসে আছেন। হাজেরা বিবি জরুরি তলব করে পুত্রবধূকে এনেছেন। তুলব কী জন্যে করেছেন এখন ভুলে গেছেন। পুত্রবধূকে বসিয়ে রাখা হয়েছে যদি মনে পড়ে।

রোদ খেলা খেলতে খেলতে হাজেরা বিবি বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যে মনে পড়ব। কলবের ভিতরে চইলা আসছে। জবানে আসে নাই। বৌ, বইসা থাকে।

লাইলী বললেন, আম্মা যতক্ষণ বসে থাকতে বলবেন বসে থাকব।

চুপচাপ বইসা না থাইকা সংসারের গফসফ করো। এখন সংসার করতে পারি, তয় সংসারের গফ শুনতে ভালো লাগে।

সংসারের কোন গল্প শুনবেন?

যেটা বলবে সেটাই শুনব। হারামজাদা ফরিদ তার গাভিন বৌ নিয়া আছে কেমন?

ভালো আছে।

ভালো থাকারই কথা। ডিমওয়ালা মাছ বাজারে মিলে, ডিমওয়ালা বউ মিলে। ঠিক বলেছি?

জি।

লতিফার বিবাহের যখন কথা চলতেছে, তখন একটা রব উঠল বউ পোয়াতি। কী কেলেঙ্কারী! লতিফা কানতে কানতে বলল, আমারে ইন্দুর মারা বিষ আইন্যা দেন। আমি বিষ খাব।

লাইলী বলল, লতিফার গল্প থাকুক অম্মা।

হাজেরা বিবি বললেন, থাকবে কী জন্যে? লতিফা কি কোনো মানুষ না? তার সুখ-দুঃখ নাই? হইতে পারে সে গরিবের সন্তান।

লাইলী বলল, লতিফা নামে কেউ নাই আম্মা। প্রায়ই আপনি লতিফার গল্প করেন। একেক সময় একেক গল্প। একবার বলেছেন লতিফা আট বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।

হাজেরা বিবি বললেন, বৌমা, মিথ্যা বলি নাই। তোমার সাথে মিথ্যা বইলা আমার কোনো ফয়দা আছে? কাউরে কিছু না বইলা লতিফা দিঘির ঘাটে গেছে সিনান করতে। তখন বাইস্যা মাস। শ্যাওলার কারণে ঘাট হইছে পিছল। পা পিছলায়া পড়ছে পানিতে। দুপুর পর্যন্ত কেউ কোনো খবর জানে না। জোহরের আজানের পর লতিফা পানিতে ভাইস্যা উঠল। গায়ে ছিল হইলদা জামা। মনে হইল পুসকুনির মাঝখানে হইলদা গেন্দাফুল ফুটছে। বুঝলা?

জি।

কাগজ-কলম আনো।

কী আনব?

কাগজ-কলম। আমার জবানে একটা পত্র লিখবা। তোমারে কী জন্যে ডাকছি এখন ইয়াদ হইছে, পত্র লেখার জন্যে ডাকছি। আমার নাতনিরে একটা পত্র লেখব। নাতনির নাম যেন কী?

লাইলী বললেন, আম্মা, নাম তো আপনার রাখা। তোজল্লী।

হাজেরা বিবি গম্ভীর গলায় বললেন, বৌমা, আমার সাথে লুডু খেলবা না। তোজলী নাম আমি রেখেছিলাম এটা সত্য। তোমরা তারে এই নামে ডাকো না। অন্য এক নামে ডাকো। শুধু আমি যখন জিজ্ঞাস করি, কী নাম। তখন আমারে খুশি করার জন্যে বলো তেজিল্লী। এখন বলো তারে কী নামে ডাকব?

নাদিয়া।

হাজেরা বিবি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কী সুন্দর নাম দিয়েছিলাম, আর কী নামেই না ডাকো। পাদের সাথে মিল দিয়া নাম।

লাইলী বললেন, আম্মা, এটা কেমন কথা? পাদের সঙ্গে এই নামের কী মিল?

হাজেরা বিবি বললেন, মিল অবশ্যই আছে। নাদিয়া। দিল সে পাদিয়া।

আম্মা ছিঃ!

ছিঃ ছিঃ করবা না। সবাই পাদে। তুমি পাদো। স্বামীর সামনে পাদো না, আড়ালে গিয়া ভুটভট করো।

লাইলী উঠে দাঁড়ালেন। হাজেরা বিবি বললেন, যাও কই?

কাগজ-কলম আনতে যাই। আপনি চিঠি লিখবেন বলেছেন।

হাজেরা বিবি বললেন, আমি লিখব না। তুমি লিখবা, আমার জবানে লিখবা।

লাইলী কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন। তিনি বিরক্ত, কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ করছেন না। ঘরের সকল কাজ পড়ে আছে। বুড়ি তাকে ছাড়ছে না। চিঠিপর্ব কতক্ষণে শেষ হবে কে জানে!

হাজেরা বিবি বললেন, লেখো-নাদিয়া মাগো। লাইলী বললেন, আম্মা! নাদিয়া মাগো কেন লিখব? সে আপনার নাতনি।

হাজেরা বিবি বললেন, তোমারে যা লেখতে বলছি তাই লেখবা। মাগো আমি ইচ্ছা কইরা লেখতে বলছি যাতে সে বুঝে আমার মাথা এখন পুরাপুরি আউলা। নাদিয়া মাগো লিখেছ?

লিখেছি।

লেখো—আমার অন্তিম সময় উপস্থিত হইয়াছে। এই বিষয়ে আজরাইল আলায়হেস সালামের সঙ্গে কথা হইয়াছে। তিনি সঠিক দিনক্ষণ বলেন নাই। কিন্তু ইশারায় জানায়েছেন।

লাইলী বললেন, আস্তে আস্তে বলেন আম্মা। এত তাড়াতাড়ি লিখতে পারি। আজরাইল আপনাকে কী ইশারা দিয়েছে?

হাজেরা বিবি বললেন, উনি বলেছেন—তোর যা খাইতে মন চায় তাড়াতাড়ি খায়া নে?

লাইলী বললেন, কী খেতে আপনার মন চায়?

হাজেরা বিবি বললেন, পাকনা তেতুই খাইতে মন চায়, ডেফল খাইতে মন চায়, বুবি খাইতে মন চায়। এইসব ফল চুকা। বেহেশতে মিলবে না। বেহেশতের সব ফল মিষ্টি।

লাইলী বলেন, এখন কী লিখব বলেন–

লেখো-পত্র পাওয়া মাত্র চলিয়া আসিবে। জান কবজের আগে আগে যেন তোমার মুখ দেখি। তোমার সহিত আমার কিছু গোপন কথাও আছে। এই পত্রকে টেলিগ্রাম মনে করিয়া চলিয়া আসিবা। ইতি তোমার দাদি হাজেরা বিবি।

লাইলী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, আম্মা এখন যাই, চিঠি পাঠাবার ব্যবস্থা করি।

হাজেরা বললেন, চিঠি ডাকে দিবা না। ডাকের চিঠির গুরুত্ব নাই। হারামজাদা ফরিদরে বলো চিঠি হাতে হাতে নিয়া যাবে এবং তোজ্জল্লীরে সাথে। কইরা নিয়া আসবে। সে আজই যাবে।

আচ্ছা।

আইজ কী বার?

বুধবার।

বুধবার হইলে আইজ যাবে না। বুধবার দিন খারাপ। তোমার মা মারা গিয়েছিলেন বুধবারে। লতিফা বিষ খাইছিল মঙ্গলবার রাতে। মারা গেল বুধবারে। হারামজাদা ফরিদরে পাঠাইবা বিষুদবার সকালে। ঠিক আছে।

জি, ঠিক আছে। আম্মা, আমি এখন যাই? না-কি আরও কিছু বলবেন?

হাজেরা বিবি জবাব দিলেন না। তিনি রোদে পা রাখার এবং পা সরিয়ে নেওয়ার খেলা খেলছেন।

 

ফরিদ তার ঘরে কাঠের চেয়ারে বসে আছে। চেয়ারের একটা পা ভাঙা বলে কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেশ না দিয়ে বসা যায় না। সে চেয়ারটাকে খাটের সঙ্গে ঠেশ দিয়েছে। জায়গাটা ভালো পাওয়া গেছে। এখান থেকে জানালা দিয়ে অনেক দূর দেখা যায়। তার দৃষ্টিসীমায় একতলা একটা পাকা বাড়ি। এটা ‘অতিথঘর’। অতিথিদের থাকার ঘর। ঘরের ভেতরটা ফরিদ কোনোদিন দেখে নাই। শুনেছে সুন্দর করে সাজানো। পাশাপাশি দুটা খাট আছে। চেয়ার-টেবিল আছে। মাথার ওপর টানা পাখার ব্যবস্থাও আছে। বিশেষ কোনো অতিথি এলে পাংখাপুলারের ব্যবস্থা করা হয়।

বাড়ির সামনে গেটের মধ্যে আছে। গেটে ঝুমকা লতা এবং নীলমণি লতা। নীলমণি লতায় ফুল ফুটেছে। গেট নীল হয়ে আছে। ফরিদের ধারণা এই ফুলগুলির দিকে চেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া যায়।

অতিথঘরে সম্প্রতি একজন অতিথি এসেছে। বয়স অল্প। ফরিদ এই অতিথির রূপ দেখে চমৎকৃত। কোনো পুরুষমানুষ এত রূপবান হতে পারে তা ফরিদের ধারণাতেও ছিল না। ফরিদ তার স্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথাও বলেছে। সফুরা বলল, উনার কোনো একটা খুঁত আছে। খুঁত ছাড়া মানুষ এত সুন্দর হয় না। মাকাল ফল এত সুন্দর, তার কারণ ফল বিষাক্ত।

ফরিদ বলল, সফুরা, মানুষের সৌন্দর্য দেখবা। খুঁত দেখবা না।

খুঁত দেখব না কেন?

ফরিদ বলল, খুঁত দেখলে মন খারাপ হবে—এইজন্যে দেখবা না। আমাদের চেষ্টা থাকা উচিত যেন সবসময় মন ভালো থাকে।

সফুরা বলল, কেন?

ফরিদ বলল, মানুষের মনের সঙ্গে আল্লাহপাকের যোগাযোগ আছে। মানুষের মন খারাপ হলে উনার খারাপ লাগে।

আপনারে কে বলেছে?

আমি চিন্তা কইরা বাইর করছি।

আপনে দেখি বিরাট চিন্তার লোক।

ফরিদ বলল, কাজকর্ম নাই তো। চিন্তা ছাড়া কী করব বলো?

সফুরা বলল, কাজকর্মের চেষ্টা করেন।

ফরিদ বলল, চিন্তা করাটাও একটা বড় কাজ।

এখন কী নিয়া চিন্তা করেন?

নতুন যে অতিথি আসছে তার বিষয়ে চিন্তা করি।

সফুরা বলল, তার বিষয়ে চিন্তার কিছু নাই। উনি স্যারের দূরসম্পর্কের ভাইগ্না। মাথায় কী যেন দোষ হয়েছে। কবিরাজী চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছেন। চিকিৎসায় আরাম না হলে কলিকাতা যাবেন। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ। কথা বললে উনার রোগ বাড়ে।

এইসব তথ্য ফরিদ জানে, তবে সে সামান্য বেশি জানে। কারণ মানুষটার সঙ্গে একরাতে তার আলাপ হয়েছে। সেই রাতে শহরে কারেন্ট ছিল না। গরম পড়েছিল অত্যধিক। পাংখাপুলার রশিদ এসে তাকে বলল, স্যারের অর্ডার হয়েছে রাতে আপনি অতিথঘরে যাবেন। সারা রাত পাংখা টানবেন। অতিথের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলবেন না।

ফরিদ বলল, উনি যদি কিছু জিজ্ঞাস করেন চুপ করে থাকব?

রশিদ বলল, সেটা আমি বলতে পারব না। নিজ বিবেচনায় কাজ করবেন।

উনার নাম কী?

আসগর।

ফরিদ পাংখা টানতে গেল। আসগর বিছানায় শুয়ে ছিল। উঠে বসল এবং বলল, পাংখা টানতে হবে না। কেউ পাংখা টানলে আমার ঘুম হয় না।

ফরিদ বলল, স্যার অর্ডার দিয়েছেন। পাংখা না টানলে উনি রাগ করবেন। রাগ করলে করবেন।

আমি কি চলে যাব?

হ্যাঁ, চলে যাবেন। এই বাড়িতে কি পড়ার মতো কোনো বই আছে? যে-কোনো বই। আমার সময় কাটে না। বই থাকলে পড়তাম।

ফরিদ বলল, আপার অনেক বই আছে। আলমারি ভর্তি বই। কিন্তু আপার ঘর তালা দেওয়া।

উনি কোথায়?

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। রোকেয়া হলে থাকেন।

কী পড়েন?

ফিজিক্সে অনার্স। আপনি বই পড়তে চাইলে আরেকটা বুদ্ধি আছে।

কী বুদ্ধি?

ময়মনসিংহ পাবলিক লাইব্রেরিতে অনেক বই আছে। তার মেম্বার হলে বই এনে পড়তে পারবেন। লাইব্রেরিতে জামানত হিসাবে কিছু টাকা জমা রাখতে হবে। কুড়ি টাকা। মাসিক চাঁদা এক টাকা।

এত কিছু জানেন কীভাবে?

আমি মেম্বার হওয়ার জন্যে গিয়েছিলাম। জামানতের টাকা ছিল না বলে মেম্বার হতে পারি নাই।

আসগর তোষকের নিচ থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে বললেন, আমার পক্ষে মেম্বার হওয়া সম্ভব না। আপনি মেম্বার হবেন। বই এনে আমাকে দিবেন। আমি পড়ে ফেরত দিব।

জি আচ্ছা।

আরেকটা ছোট্ট কাজ করতে পারবেন? রশিদ নামের একজন আমার জন্যে তিনবেলা টিফিন কেরিয়ারে করে খাবার আনে। আমি যখন খানা খাই, সে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না। তাকে বলবেন সে যেন সামনে দাঁড়িয়ে না থাকে। আমি নিজেও বলতে পারতাম। কিন্তু আমি লজ্জা পাচ্ছি।

ফরিদ ভয়ে ভয়ে বলল, আপনার মাথার অসুখটা কি একটু কমেছে?

আমার মাথার কোনো অসুখ নাই। কাজেই অসুখ বাড়া-কমার প্রশ্ন আসে না। আচ্ছা আপনি এখন যান।

ফরিদ লাইব্রেরির মেম্বার হয়েছে। সে সপ্তাহে দু’বার লাইব্রেরি থেকে বই আনে। অন্যের জন্যে বই আনা-নেওয়া করতে করতে ফরিদের নিজের বই পড়া অভ্যাস হয়ে গেল। ফরিদ চার নম্বরি হাতিমার্কা একটা খাতা কিনেছে। যে সব বই সে এনেছে তার নাম খাতায় লিখে রাখছে। লাইব্রেরি থেকে বই আনার সময় খাতাটা সে নিয়ে যায়। খাতা দেখে বই নেয়, যাতে একই বই দুইবার নেওয়া না হয়। কোন বই তার নিজের পড়ে কেমন লাগল তাও অল্পকথায় লিখে রাখে।

যেমন–

দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার : মোটামুটি।

ভারতবর্ষের ইতিহাস : খুবই বাজে।

দুটি ফুল এক বৃন্ত : ভালো। প্রেমের বই।

জানবার কথা : জ্ঞানের বই। মোটামুটি।

দস্যু বাহরাম : খুবই ভালো।

প্রেত কাহিনী : অত্যধিক ভালো। ভূতের।

কপালকুণ্ডলা : ভাষা খারাপ। বই খারাপ।

পথের দাবী : খুবই সুন্দর।

পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানের নাম ক্ষিতিশ বাবু। বয়স ষাট। সারা দিন চা এবং পান খান। মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ বিপরীত দুই বস্তু একসঙ্গে খান। তাঁর মুখের সামনে সবসময় বই ধরা আছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, এই লাইব্রেরির সব বই যেদিন পড়ে শেষ করবেন সেদিন …লের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ধর্মকর্মে মন দিবেন। অল্পদিনেই ফরিদের সঙ্গে তাঁর ভালো খাতির হয়েছে। বই লেনদেনের সময় কিছুক্ষণ গল্পগুজব করেন।

ফরিদ, বলো দেখি বই পড়লে কী হয়?

জ্ঞান হয়।

পারলা না। জ্ঞান এত সোজা জিনিস না—বই পড়ল জ্ঞান হয়ে গেল। বই পড়লে পাপক্ষয় হয়। আজেবাজে বই পড়লে ছোটখাটো পাপক্ষয় হয়, ভালো বই পড়লে বড় পাপক্ষয়। বুঝেছ?

বুঝার চেষ্টা নিতেছি।

গঙ্গায় ডুবলে হিন্দুর পাপক্ষয় হয়—এইটা জানো তো?

জানি।

পুস্তক হলো হিন্দু-মুসলমান সবেরই গঙ্গাপুস্তকে ডুব দিলে হিন্দু-মুসলমান সবের পাপক্ষয় হয়। মনে থাকবে?

থাকবে।

গঙ্গায় ডুব দিয়া পাপক্ষয়ের মন্ত্রটা জানো?

জে-না।

মন্ত্রটা শোনো

আম্র চুরি, জাম্র চুরি
ভাদ্র মাসে ধান্য চুরি
মন্দস্থানে রাত্রিযাপন
মদ্য পান আর কুকড়া ভক্ষণ
হক্কল পাপ বিমোচন
গঙ্গা গঙ্গা।

এখন যাও বই নিয়া বিদায় হও। তোমার সঙ্গে কথা বলার কারণে বইপড়া বন্ধ, আমার পাপ কাটাও বন্ধ। বিদায়।

ফরিদ বলল, স্যার, আমার খুব শখ আপনারে একবেলা খাওয়াই।

শখ হইলে খাওয়াবা। মুসলমানের বাড়িতে খাইতে আমার সমস্যা নাই।

ফরিদ বলল, নিজের যেদিন রোজগার হবে তখন খাওয়াব। এখন আমি পরের বাড়িতে আশ্রিত।

ক্ষিতিশ বাবু বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললেন—আশ্রিত অবস্থার পরিবর্তন করো। আশ্রিত মানুষের অন্ন বিষ্টাবৎ। বিষ্টা বোঝা তো?

বুঝি।

বিষ্টা আর কত খাইবা? খাদ্য খাও।

খুব শিগগিরই একটা ব্যবস্থা হবে স্যার।

ফরিদ ক্ষিতিশ বাবুর পায়ের ধুলা নিয়ে বের হয়ে এল। এই কাজটি সে সবসময় করে। বিদায়ের সময় ক্ষিতিশ বাবুর পায়ের ধুলা নেয়।

 

হাবীব খেতে বসেছেন। পাটি পেতে খেতে বসা। তার সামনে পাখা হাতে লাইলী একটা জলচৌকিতে বসেছেন। লাইলী পাখা হাতে নিয়েছেন অভ্যাসের কারণে। খাওয়ার সময় হাবীব পাখা নাড়ানাড়ি পছন্দ করেন না। কথা চালাচালিও পছন্দ করেন না। এই কথা তিনি তাঁর স্ত্রীকে অনেকবার বলেছেন। কিন্তু লাইলীর মনে থাকে না। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি খাবার সময় বলবেনই।

লাইলী বললেন, অতিথঘরে যে থাকে সে কে?

হাবীব বললেন, তার নাম আসগর। আসগর আলি। আমার দূরসম্পর্কের ভাইগ্না হয়। বাড়ি শম্ভুগঞ্জ। শরীর খারাপ। চিকিৎসার জন্যে এসেছে।

লাইলী বললেন, খাওয়ার সময় মিথ্যা বললে গলায় ভাত আটকাইয়া মৃত্যু হয়। খাওয়া শেষ করেন, তারপর মিথ্যা বলবেন।

হাবীব কিছুক্ষণ কঠিন চোখে তাকিয়ে থেকে আবার নিঃশব্দে খাওয়া শুরু করলেন।

লাইলী বললেন, এই ছেলেরে আমি চিনি। সে ভাটিপাড়ার বারোআনি জমিদার রহমত রাজা চৌধুরী সাবের একমাত্র ছেলে, তার নাম হাসান রাজা চৌধুরী।

তুমি চিনলা কীভাবে?

আপনার ইয়াদ থাকে না যে, আমি ভাটি অঞ্চলের মেয়ে। ভাটিপাড়ায় আমার খালার বাড়ি। আমি ছোটবেলায় জমিদার সাবের বাড়িতে গিয়েছি। এত সুন্দর আর এত বড় বাড়ি ভাটি অঞ্চলে নাই। উনাদের বাড়ির নাম কইতর বাড়ি।

কইতর বাড়ি নাম কী জন্যে?

বাড়িভর্তি কইতর। এইজন্যে বাড়ির নাম কইতর বাড়ি। কইতরগুলির জন্যে প্রতিদিন আধম ধান বরাদ্দ ছিল, এখন কী অবস্থা জানি না।

হাবীব বললেন, কম জানাই ভালো। বেশি জানলে সমস্যা।

লাইলী বললেন, জমিদার সাবের ছেলে একলা অতিথবাড়িতে থাকে, একলা খায়—এইটা কেমন কথা? তারে মূল বাড়িতে থাকতে বলেন। আমি যত্ন করে খাওয়াব।

হাবীব বললেন, পরিস্থিতির কারণে মাঝে মধ্যে হাতি দুর হয়ে যায়। এই ছেলে এখন ইদুর! এর বেশি আমারে কিছু জিজ্ঞাসা করবা না।

আম্মা নাদিয়াকে আনার জন্যে লোক পাঠাতে বলেছেন।

হাবীব বললেন, আম্মার কথা আমার কাছে আদেশ। লোক পাঠাও। ইউনিভার্সিটিতে নানান গোলমাল চলতেছে। ছাত্রগুলা কৈ মাছের মতো উজাইছে। এই সময় হল-হোস্টেলে না থাকা উত্তম।

 

সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ ঝড় উঠল। আম-কাঁঠালের বাগানের ভেতর ধুলা-আবর্জনার কুলি উঠল। লাইলী ঘোমটা মাথায় দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তার ঝড়.. বৃষ্টি ভালো লাগে। ঝড়ের সময় ঘূর্ণি ওঠার অন্য অর্থ আছে। ছোটবেলায় শুনেছেন ঘূর্ণির ভেতর একটা করে জ্বিন থাকে। নজর করে দেখলেই হঠাৎ হঠাৎ জ্বিনের হাত-পা-মাথা আচমকা দেখা যায়।

লাইলী তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। বাগানে তিনটা ঘূর্ণি উঠেছে। এর পাক খেয়ে খেয়ে একটার সঙ্গে অন্যটা মিশে যাচ্ছে। আবার আলাদা হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে জ্বিনরা কেউ থাকবে না। এরা বৃষ্টি পছন্দ করে না।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রথমে ফোঁটা ফোঁটা পড়ছিল। এখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে। লাইলীর চোখে পড়ল পুকুরঘাটে হাসান রাজা চৌধুরী দাঁড়িয়ে। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। সে মনের আনন্দে ভিজছে।

যে মাওলানার কাছে লাইলী ছোটবেলায় আরবি পড়া শিখতেন তিনি বলতেন, বৃষ্টি আল্লাপাকের খাস রহমতের একটি। বৃষ্টিতে ভিজলে উনার রহমত গায়ে মাখা হয়। এটা শরীর এবং মন দুইয়ের জন্যই ভালো। তবে এই রহমত আল্লাহপাক শুধু মানুষের জন্যে দিয়েছেন। জ্বিনের জন্যে দেন নাই। জ্বিনরা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না।

লাইলী বলেছিল, জ্বিনদের জন্য কি অন্য কোনো রহমতের ব্যবস্থা আছে?

তিনি বললেন, আছে। আল্লাপাক জ্বিনের জন্যে আগুনের বৃষ্টির ব্যবস্থা রেখেছেন। আগুনের বৃষ্টি তাদের জন্যে।

লাইলী মাওলানা সাহেবের নাম মনে করার চেষ্টা করছেন। নাম মনে আসছে না। কিছু নাম মানুষ অতিদ্রুত ভুলে যায়, হাজার চেষ্টা করলেও মনে করতে পারে না। মনে হয় আল্লাপাক চান না এই নামগুলি মনে থাকুক।

সেই মাওলানার অভ্যাস ছিল কথা বলার সময় ছাত্রীর পিঠে হাত রাখা। একদিন তিনি বললেন, তুমি উড়না ঠিকমতো পরতে পারো না। মাথার উড়না এমনভাবে দিতে হবে যেন মাথার সামনের চুল ঢাকা পড়ে। আমি উড়না পূরায়ে তোমারে দেখায়ে দিতেছি। তিনি উড়না পরাবার সময় লাইলীর বুকে হাত রাখলেন। লাইলী পাথরের মূর্তির মতো বসে রইলেন। তখন তার বয়স বারো। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা কাউকে বলার উপায় নাই, কারণ কেউ তার কথা বিশ্বাস করবে না। মাওলানা ছিলেন তাদের অঞ্চলের অতি সম্মানিত মানুষদের একজন।

হঠাৎ লাইলীর মাওলানার নাম মনে পড়ল। মাওলানা আসগর। আজ দুপুরে খাওয়ার সময় নাদিয়ার বাবা এই নাম উচ্চারণ করেছেন।

লাইলী নিচুগলায় কয়েকবার বললেন, মাওলানা আসগর। মাওলানা আসগর।

কাজের মেয়ে মলিনা এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। এই মেয়েটার বয়স অল্প। অল্প বয়সের কারণেই সে তুচ্ছ বিষয়ে উত্তেজিত হয়।

আম্মা, শিল পড়তাছে!

লাইলী অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বাগানের দিকে তাকালেন—শিল পড়ছে। হাসান রাজা চৌধুরী ছোট বাচ্চাদের মতো ছোটাছুটি করে শিল কুড়াচ্ছে। লাইলী বলেছেন, মলিনা! তুমি খোঁজ নাও তোমার খালু বাড়িতে বা চেম্বারে আছেন কি না। থাকার কথা না। আজ বৃহস্পতিবার। তিনি ৩াশ খেলতে যান। যদি দেখো তোমার খালু নাই, তাহলে ওই ছেলেটারে বলবা আমি চা-নাশতা খাওয়ার জন্যে তাকে ডেকেছি।

দোতলায় নিয়ে আসব আম্মা?

হ্যাঁ, দোতলায় আনবা। চা-নাশতার ব্যবস্থা করবা।

কী নাশতা দিব?

লুচি ভাইজ্যা দিবা। মাংস রান্না আছে। মাংস লুচি।

মলিনা গলা নামিয়ে বলল, কেউ যেন না জানে এমনভাবে আনব আম্মা?

লাইলী বললেন, লুকাছাপার কিছু নাই। তুমি অল্পদিন হয়েছে এই বাড়িতে এসেছ। তুমি আমাকে চিনো না। আমারে চিনলে বুঝতা আমার মধ্যে লুকাছাপা নাই।

মলিনা চলে গেল। লাইলীর মন সামান্য খারাপ হলো, কারণ মলিনাকে তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। তাঁর মধ্যে অবশই লুকাছাপা আছে। মাওলানা আসগরের কথা তিনি কাউকে বলেন নাই। ছেলেটাকে নাশতা খেতে খবর দিয়েছেন, কিন্তু তার আগে খোঁজ নিয়েছেন নাদিয়ার বাবা তাশ খেলতে গেছেন কি না।

হাজেরা বিবি চেঁচাচ্ছেন, ও হাবু! হাবুরে! ও হাবু!

লাইলী শাশুড়ির ঘরে ঢুকলেন।

আম্মা, কিছু লাগবে?

আমার ছেলে কই? হাবলাটা কই?

আজ বৃহস্পতিবার, মনে হয় তাশ খেলতে গেছে।

হাজেরা বিবি বললেন, সত্যি সত্যি তাশ খেলতে যায় কি না, ভালোমতো খোঁজ নিবা। পুরুষমানুষরে বিশ্বাস করবা না। তারা এক জায়গায় যাওয়ার কথা বলে যায় অন্য জায়গায়। তোমার শ্বশুরের কথা শোনো। সে মাসের প্রথম দিন…

লাইলী বললেন, এই গল্প অনেকবার শুনেছি আম্মা।

আরেকবার শোনো। একটা শাড়ি অনেকবার পরেছ বলে আর পরতে পারবা না, তা তো না। ভালো শাড়ি অনেকবার পরা যায়। তারপর ঘটনা শোনো। তখন আমি নতুন বউ। এই বাড়ির হালচাল বুঝি না। বয়সও কম। হায়েজ নেফাস শুরু হয় নাই এমন কম। তারপরেও সন্দেহ হইল। খোঁজ লাগায়া জানলাম তোমার শশুর যায় নটিবাড়িতে। নটির নাম বেদানা। আমি তোমার শ্বশুররে বললাম, আপনে সম্মানী মানুষ। নটিবাড়িতে কেন যাবেন! নটি আসবে আপনার কাছে। বেদানারে আপনার কাছে আইন্যা রাখেন।

তোমার শ্বশুর পাকা ঘর তুলল। নটিবেটিরে এই ঘরে আইন্যা দাখিল করল। আইজ সেই ঘরের নাম ‘অতিথঘর। বুঝেছ?

জি। আপনার ছেলেকে কেন ডুকিছিলেন আম্মা? কিছু লাগবে?

হাজেরা বিবি বললেন, শিল পড়েছে শুনেছি। একটা শিলে মধু মাখায়া আমার মুখে দেও। আমি চুষব। বছরের প্রথম শিলের মধ্যে ওষুধ থাকে। এই ওষুধ শরীরের জন্যে ভালো। ব্যবস্থা করা।

ব্যবস্থা করছি আম্মা।

 

হাসান রাজা চৌধুরীর সারা শরীর ভেজা। মাথার চুল বেয়ে পানি টপটপ করে পড়ছে। লাইলী মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। সে যে এত রূপবান তা তার কল্পনাতেও আসেনি।

লাইলী বললেন, বাবা, কেমন আছ?

ভালো।

আমি ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার তোমাদের বাড়িতে গিয়েছি। বাড়ির নাম কইতর বাড়ি না?

জি।

কইতরগুলি কি এখনো আছে?

জি।

শুনেছিলাম তোমার মায়ের মৃত্যুর দুইদিন আগে সব কইতর চলে গিয়েছিল। এটা কি সত্যি?

জি।

কতদিন পর ফিরে আসে?

মা’র কুলখানির দিন।

শুনেছি তোমার অসুখ। চিকিৎসা চলছে। কী অসুখ?

আমার কোনো অসুখ নাই। এই বাড়িতে আমি পালিয়ে আছি।

মলিনা পালাভর্তি ফুলকো লুচি এবং গরুর মাংস নিয়ে ঢুকেছে।

লাইলী বললেন, বাবা খাও।

হাসান খেতে শুরু করেছে। আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে। লাইলী ইশারায় মলিনাকে চলে যেতে বললেন। মলিনা পুরোপুরি চলে গেল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কান পেতে রাখল।

লাইলী বললেন, এখন থেকে তুমি এই ঘরে বসে খাবে। আমি সামনে থাকব।

হাসান বলল, আমার একা খেতে ভালো লাগে। মা মারা যাওয়ার পর একা খাওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে।

লাইলী বললেন, অভ্যাসটা বদলানো দরকার। একদিন বিবাহ করবে। তোমার স্ত্রী চাইবে সামনে বসে তোমাকে খাওয়াতে।

আমি বিবাহ করব না।

তাহলে অবশ্যি ভিন্ন কথা। তুমি কেন এই বাড়িতে পালিয়ে আছ?

হাসান বলল, আমি একটা খুন করেছি। এইজন্যে পালিয়ে আছি।

লাইলী তাকিয়ে আছেন। হাসান মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মলিনা ছটফট করছে, কারণ সে লাইলীর প্রতিটি কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তরে ওই মানুষটা কী জবাব দিয়েছে তা শুনতে পারে নাই।

 

প্রণব খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়েছেন। তিনি খবরের কাগজ পড়েন হাতে লাল-নীল পেনসিল নিয়ে। যেসব খবর পড়ে তার শান্তি লাগে সেখানে নীল দাগ দেন। অশান্তির খবরগুলিতে লাল দাগ। লাল এবং নীল দাগ সমান সমান হলে তার বড়ই আনন্দ লাগে। মাঝে মাঝে তিনি বিভ্রান্ত বোধ করেন। লাল দাগ না নীল দাগ দিবেন বুঝতে পারেন না।

আজও একটা বিভ্রান্তি দেখা দিল একচল্লিশজন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, আমরা সংবাদপত্র মারফত জানিয়া বিস্মিত হইলাম যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বাংলা বর্ণমালা, লিখন রীতি এবং বানান পদ্ধতির পরিবর্তন সাধনে তৎপর হইয়াছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষার এইরূপ পরিবর্তন সাধনে একতরফাভাবে কেন যে উদ্যোগী হইয়াছেন তাহা জানি না….

প্রণবের মনে হলো বাংলা ভাষা রক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে এটা ভালো কথা। নীল দাগ দেওয়া উচিত। আবার বিবৃতির কারণে দেশ আন্দোলনের দিকে যাবে। যেকোনো আন্দোলনের একপর্যায়ে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। কাজেই লাল দাগ।

আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলনে যাচ্ছে।—এটাও লাল দাগ। কারণ ফলাফল হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা।

নীল দাগ দেওয়ার মতো একটা বর পাওয়া গেল। বোয়াল মাছের পেটে চার ভরি স্বর্ণের হার।

বোয়াল ধরা পড়েছে হাকালুকি হাওরে। তার পেট কেটে চার ভরি ওজনের হার পেয়েছে জেলে মন্তাজ মিয়া। সে বাজারে মাছ বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল। খদ্দের না জোটায় মন খারাপ করে মাছ বাড়িতে নিয়ে যায়। মাছ কাটার পর হতদরিদ্র মন্তাজ মিয়ার পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

পত্রিকায় মন্তাজ মিয়ার একটা ছবি ছাপা হয়েছে। সে গোমড়ামুখে একটা হার ধরে আছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে পেটে হার পেয়ে সে মহাবিরক্ত।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ