আজ বাবুর জন্মদিন।

নায়লা এই সাতসকালে বাবুকে গরম পানিতে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিয়েছে। পায়জামা, পাঞ্জাবি, নাগরা জুতা। কি সুন্দর যে বাবুকে লাগছে! ঘরে কোন ক্যামেরা নেই। ক্যামেরা থাকলে ছবি তুলে রাখা যেত। একটা টুপি কেনা দরকার ছিল– টুপি পরিয়ে দিলেই একেবারে ষোল আনা মৌলানা।

এই বাবু, এই।

উঁ।

তুমি তো মৌলানা হয়ে গেছ। বল, আসসালামো আলায়কুম।

বাতিস দুদু।

উঁহু, কোন বাতিস দুদু না। আজ থেকে বাতিস দু বন্ধ। তুমি না বড় হয়েছ? তোমার দু বছর বয়স হয়ে গেছে। এত বড় যে হয়েছে সে কি ব্যতিস দুদু খায়?

মাম্মাট কোলা যাব। কোলা।

উঁহু, তুমি কোলাও যাবে না। তোমাকে কোলে নিলে আমি কাজ করব কিভাবে? আজ আমার কত কাজ। আজ না তোমার জন্মদিন? শুভ জন্মদিন বাবু সোনা। আচ্ছা বাবা বল তো–শুভ জন্মদিন।

মাম্মাট বাতিস দুদু।

নায়লা ছেলেকে বাতিস দুদু দিল না। মাটির ঘোড়ায় চড়িয়ে দিয়ে এলো। ছেলেকে দূধ ছাড়াতে হবে। একজন কারো বাবুর কাছে থাকা দরকার। ঘোড়া থেকে গড়িয়ে পড়ে হাত পা ভাঙতে পারে। জাম্মান ঘুমুচ্ছে। এত বেলা পৃর্যন্ত সে কখনো ঘুমায় না। আজ কি সে অফিসে যাবে না? শরীর ভাল আছে তো? নায়লা জামানের কপালে হাত রাখতেই জামান চোখ মেলল। নায়লা বলল, সাতটা চল্লিশ বাজে। অফিসে যেতে হবে না?

জামান জুড়ানো গলায় বলল, অফিসে যাব না।

অফিসে যাবে না কেন?

এম্নি।

নায়লা খুশি খুশি গলায় বলল, না গেলেই ভাল। কি দরকার রোজ রোজ অফিসে যাবার? তাছাড়া আজ বাবুর জন্মদিন। তুমি আজ বাবুকে দেখবে। আমি বাইরের কাজ সেরে এসে রান্না-বান্না করব। বাইরের কি কাজ?

ওমা, বাইরের কত কাজ। অরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দিতে হবে। নুরুকে টাকাটা দিয়ে আসতে হবে–তুমি যদি বাইরে বেরুতে না চাও আমি তোমার বন্ধুকেও দাওয়াত দিয়ে আসতে পারি।

ওকেও দাওয়াত দিয়ে এসো।

নারে বাবা, দরকার নেই। বড়লোকী জায়গায় আমি একা একা যাব না। তুমি অদ্ভুত মানুষ তো! বাবুকে দেখে কিছু বলছ না?

কি বলব?

পায়জামা পাঞ্জাবি গায়ে মৌলানা সেজে বসে আছে। দেখ, কি সুন্দর ঘোড়ায় বসে আছে! ও তো কাউকে কোনদিন ঘোড়ায় চড়তে দেখেনি, ও ঘোড়ায় চড়া শিখল কি ভাবে? দেখে মনে হচ্ছে না খুব মজা পাচ্ছে?

হুঁ।

চা খাবে? তুমি বসে খাক–আমি তোমার জন্যে চা নিয়ে আসছি। বাবুর দিকে লক্ষ রাখে।

নায়লা ঝলমল করতে করত বের হয়ে গেল। বাবু বসে আছে ঘোড়ার পিঠে। মাথা নিচু করে বসে থাকা গম্ভীর একজন মানুষ। দু বছর আগে এই সময়ে মানুষটার জন্যও হয়নি। জন্ম হয়েছে বিকেল তিনটায়। তাহলে দুবছর আগে এই সময় মানুষটা তার মার পেটে গুটিশুটি মেরে অপেক্ষা করছিল। তখন কি ছিল তার মনে? ভয়? আশংকা, না আনন্দ? যে মার সঙ্গে এতোদিন সে মিশেছিল তার সঙ্গে বিচ্ছেদের আশংকা, আবার এই বিচ্ছেদেও মাকে অন্যরূপে পাবার আনন্দ।

জামান বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, তোমার নাম কি?

বাবু গভীর গলায় বলল–ঘোড়া।

উঁহু। ঘোড়া তোমার নাম না। তুমি ঘোড়ায় বসেছ। তোমার নাম কি?

ঘোড়া।

না বাকা। বল আমার নাম বাবু।

বাবু নাম বলছে না। কিন্তু ধবধকে শাদা দাঁতে কুটি কুটি করে হাসছে। জামান বলল–তোমার ইঁদুরের মৃত দাঁত কেন হল বাবা?

বাবু বলল, আমি ইঁদুল।

জামান তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। ছেলেটা কি মিষ্টি করে কথা বলে! র বলতে পারে কিন্তু সব সময় না। ঘোড়া বলার সময় পরিষ্কার ও উচ্চারণ করল কিন্তু ইঁদুরের বেলায় পারছে না। বাচ্চাদের কথা বলার সময়টা কি যে অদ্ভুত।

নায়লা চা নিয়ে এসেছে। এক হাতে চায়ের কাপ। অন্য হাতে পানি ভর্তি গ্লাস।

 

নায়লা বলল, পানি দিয়ে কুলি করে মুখের বাসি ভাব দূর করে তারপর খাও। আর পিরিচে করে আমাকে একটু দাও। বাবু, তুই চা খাবি?

বাবু মার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি ঘোড়া।

নায়লা খিলখিল করে হাসছে। হাসির ঝাপ্টায় হাতের চায়ের কাপ কাঁপছে–চা ছড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে হাসি শুনে ফিরুর মা এসে দরজা ধরে দাঁড়িয়েছে। জামান খানিকটা বিস্ময় নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে–সে এত হাসতে নায়লাকে কখনো দেখেনি।

 

শেষ পর্যন্ত আলমকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব নায়লার উপরেই পড়েছে। জামান থাকবে বাবুকে নিয়ে। নায়লা অরুণীকে দাওয়াত দিয়ে ফেরার পথে জামানকেও দাওয়াত করে আসবে।

হোটেলের লবীতে ঢোকার সময় নায়লার খানিকটা ভয় ভয় করছিল। সেই ভয় কিছুক্ষণের মধ্যেই কেটে গেল। সে আলমের রুম নাম্বার জানে–সেই রুম হোটেলের কতালীয় তাও জানে–লিফটে করে উঠতে হয়। সেটাও কোন সমস্যা নয়। লিফটম্যানকে বললেই হল–৪১১ নম্বর রুম।

নায়লা প্রথম গেল রিসিপশানে। সুন্দর চেহারার স্মার্ট দুজন তরুণ দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেরই হাসি হাসি মুখ। নায়লা বলল, ৪১১ নম্বর রুমের মিঃ আলমের সঙ্গে কথা বলব। উনি কি আছেন?

জ্বি ম্যাডাম আছেন। এই এক মিনিট আগে উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। আপনি কি কথা বলবেন ম্যাডাম? টেলিফোনে লাইন দেব?

না, আমি সরাসরি যাব। আপনাদের সিড়ি কোন্ দিকে?

লিফটে করে চলে যান ম্যাডাম। বাঁ দিকে লিফট।

লিফটে আমি চড়ব না। আমার লিফট ভয় লাগে।

নায়লা মিষ্টি করে হাসল। তার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে সে একটু অদ্ভুত আচরণ করছে। অকারণে কথা বলছে। রিসিপশনিস্টের সঙ্গে এতগুলি কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া সে লিফটে চড়তে ভয়ও পায় না। লিফট তার কাছে অপরিচিত কিছুও নয়। প্রতিদিনই সে লিফটে চড়ছে।

ম্যাডাম, আপনি ডানদিকে যান। ডানদিকে যাবেন, তারপর ফার্স্ট রাইট টার্ন।

থ্যাংক য়্যু।

ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নায়লার ভাল লাগছে। দোতলা পর্যন্ত ওঠার পর দুটি বিদেশী ছেলেমেয়েকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখা গেল। দুজনই বাবুর বয়েসী ছেলেটির হাতে ললি টকটকে বল। সে খুব গম্ভীর ভঙ্গিতে বল হাতে মামছে। এত ছোট ছেলেমেয়েদের বাবা-মা একা একা ছেড়ে দিল কি ভাবে? ছোট মেয়েটি নায়লাকে দেখে হাত নেড়ে বলল–হাই। নায়লাও হাত নাড়ল। বাচ্চা দুটির সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। ইংরেজি রপ্ত থাকলে এদের সঙ্গে গল্প করা যেত।

 

আলম দরজা খুলে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, নায়লা এসো। সে এমন সহজ স্বরে কথা বলল যে, নায়লার মনে হল আলম এতক্ষণ তার জন্যেই অপেক্ষা করছে।

আলম সবেমাত্র বাথরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়েছে। একটা বড় টাওয়েল তার গায়ে জড়ানো, আরেকটা টাওয়েল গলায় ঝুলছে। এখনো গা মোছা হয়নি। টপ টপ করে পানি পড়ছে।

নায়লা, আমার অর্ধনগ্ন মূর্তি দেখে তোমার রুচিবোধ আহত হচ্ছে না তো? আহত হলে ক্ষমা করে দাও। আমার গোসল শেষ হয়নি। তোমার ঘন ঘন বেল বাজানোর শব্দে গোসল আধাআধি রেখে উঠে এসেছি।

যান, গোসল শেষ করুন। আমি বসছি।

শুধু বসলে হবে না। টেলিফোন তুলে জিরো জিরো ডায়াল করে রুম সার্ভিসকে বল আমাদের দু কাপ কফি দিয়ে যেতে। গোসল শেষ হতে হতে কফি এসে যাবে।

আলম বাথরুমে ঢুকে গেল। কি সহজ, কি স্বাভাবিক আচরণ। নায়লা কফির কথা বলল। প্রথম দিন এই ঘরটা অনেক বড় লাগছিল–আজ এত বড় লাগছে না। সব অপরিচিত ঘরকেই প্রথম দেখায় একটু বোধহয় বড় লাগে। বেল বাজছে! নায়লা জা খুলে দিল। কুড়িএকুশ বছরের সুন্দর একটা মেয়ে কফি ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা, এরা কি কফি তৈরি করেই বসেছিল?

ম্যাডাম, কফি চেয়েছিলেন?

হ্যাঁ। টেবিলের উপর রেখে দিন।

মেয়েটা সাবলিল ভঙ্গিতে কফির ট্রে টেবিলে রাখছে। তাকে দেখে নায়লার হিংসা লাগছে। কাজ করছে, টাকা রোজগার করছে। আর নায়লা কি করছে?–অন্যের রোজগারে ভাগ বসাচ্ছে। বাবুর জন্মদিনে সে তার নিজের হয়ে কোন উপহার কিনতে পারবে না। উপহার কিনতে হবে জামানের টাকায়। নায়লার জানতে ইচ্ছা করছে–মেয়েটা এই হোটেলে কাজ করে কত টাকা পায়? জানতে ইচ্ছা করলেও জানা যাবে না। এই প্রশ্ন মেয়েটাকে কখনো করা যাবে না।

 

আলম বাথরুম থেকে শীষ দিতে দিতে বের হল। সুন্দর পোশাক পরেছে। ধবধবে শাদা প্যান্টের সঙ্গে হালকা লাল গেঞ্জি। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আলমকে। পোশাক মানুষকে অনেকখানি পাল্টায়। সুন্দর পোশাকে জামানকেও নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। জামান সারাজীবন পরল পায়জামা-পাঞ্জাবি। পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বুড়োরা। সে কি বুড়ো হয়ে গেছে? নায়লার ইচ্ছা করছে জামানের জন্যে একটা শাদা প্যান্ট এবং হালকা লাল রঙের গেঞ্জি কিনতে। নিশ্চয়ই আকাশ-পাতলি দাম।

আলম বলল, নাও, কফি নাও। চুপচাপ বসে আছ কেন?

ভাবছি।

কি ভাবছ?

আপনি আমাকে দেখে একেবারেই অবাক হন নি কেন তাই ভাবছি।

অব্যাক হব কেন? ঢাকা শহরে আমি চিনি তোমাদের দুজনকে। তোমরা আমার কাছে আসবে, এতে আমি অবাক হব কেন? না এলে অবাক হওয়ার একটা ব্যাপার থাকতো।

কি জন্যে এসেছি তাও তো জিজ্ঞেস করলেন না!

তুমি নিজেই বলবে, এটা জানি বলেই জিজ্ঞেস করিনি। বল কি জন্যে এসেছ।

আজ রাতে আপনি আমাদের সঙ্গে খাবেন।

ফাইন। খাব।

আমি অরুণাকেও আসতে বলেছি।

অরুণাটা কে?

কি আশ্চর্য! অরুণা কে তাও ভুলে গেছেন?

ও আচ্ছা, আচ্ছা। মনে পড়েছে। অরুণা হচ্ছে তোমার রূপবতী বান্ধবী। যার সঙ্গে আমার বিয়ের একটা চেষ্টা তুমি চালাচ্ছ।

হুঁ। অরুণা আসবে। তাকে দেখতে পারবেন। তার সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন।

খুবই ভাল ব্যবস্থা। আমি যথাসাধ্য সেজেগুজে যাব। কি পরলে ভাল হয় বল তো?

যা পরে আছেন সেটাই তো ভাল। মোটেই না। এই পোশাকে আমাকে স্মার্ট দেখাচ্ছে। প্রেম করার জন্যে মেয়েরা স্মার্ট ছেলে খুঁজে, বিয়ের জন্য পছন্দ করে শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলে। সেই সব ছেলেদের পোশাক হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল। এরা হাঁটবে মাটির দিকে তাকিয়ে। হাসবে লাজুক ভঙ্গিতে। নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।

আপনি সেই রকম একটা ছেলে সেজে আমাদের বাসায় যাবেন?

অবশ্যই। আমার কোন পায়জামা-পাঞ্জাবি নেই। তুমি আমাকে পায়জামাপাঞ্জাবি কিনে দেবে।

আমি?

হ্যাঁ তুমি। আকাশ থেকে পড়লে বলে মনে হয়। এই দেশে কি পায়জ্জামা-পাঞ্জাবি কেনা অপরাধ বলে গণ্য করা হয়?

আমাকে বাসায় যেতে হবে। রান্নাবান্না কিছু করিনি। আমি বাজারে যাব। বাজার করব। কোট-বাছা হবে, রান্না হবে, তারপর আপনারা খাবেন।

আমরা না হয় আজ রাতে একটু দেরি করে খাব। ওঠ। আমি বেশি সময় নেব না। পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনতে আমার সময় লাগবে খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিট কফি শপে কফি খাব, তাতে যাবে আরো পনেরো মিনিট। সব মিলিয়ে কুড়ি মিনিটের মামলা।

কফি তো এই মাত্র খেলেন।

এটা হল হোটেলের কফি। হোটেলের কফি কোন কফি নয়। তা ছাড়া তুমি এসেছ–আমি খুশি হয়েছি। এই খুশির একটা প্রকাশ থাকবে না?

আমাকে কফি খাইয়ে সেই খুশির প্রকাশ দেখাবেন?

হ্যাঁ।

কফি আমার দু চক্ষের বিষ।

সেটাও বুঝতে পারছি। তুমি কাপে সর্বসাকুল্যে দুবার চুমুক দিয়েছ। চল আইসক্রীম খাব।

এই বয়সে কেউ আইসক্রীম খায়?

আইসক্রিম হল চুমুর মত। চুমু খাবার যেমন কোন বয়স নেই–আইসক্রীম খাবারও নেই।

নায়লা হকচকিয়ে গেল। এইসব কথা এমন করে কেউ বলে?

দুপুরবেলাতেও আইসক্রীম শপে মানুষ গিজ গিজ করছে। জায়গাটা খুব সুন্দর। ছোট ছোট টেবিল-চেয়ার। চারদিক ঝকঝক তকতক করছে। মিষ্টি গান হচ্ছে। নায়লাকে কোণার দিকের একটা টেবিলে বসিয়ে আলম আইসক্রীম আনতে গেল।

নায়লার অস্বস্তি লাগছে। পরিচিত কেউ দেখে ফেলবে না তো? দেখে ফেললে কি কি ভাববে? তবে দেখা হবার সম্ভাবনা কম–তার আত্মীয়স্বজনরা সবাই গরীব। এমন কায়দার জায়গায় তারা আইসক্রীম খেতে আসবে না।

আলম আইসক্রীম নিয়ে ফিরছে। নায়লা ঠিক করে ফেলল, এই জায়গায় সে জামান এবং বাবুকে নিয়ে আইসক্রীম খেতে আসবে। যত টাকা লাগে লাগুক। প্রতিদিন তো আর আসবে না–জীবনে একবারই আসবে।

নায়লা, তোমার জন্যে বাটার নাটি এনেছি। দেখ তো কেমন লাগে। অনেকে আবার আইসক্রীমে বাদাম পছন্দ করে না। তোমার যদি ভাল না লাগে তাহলে বদলে দেব।

আমার ভাল লাগছে।

ভাল লাগলে হাসিমুখে খাও। এমনভাবে খাচ্ছ মনে হয় বিষ খাচ্ছ। গল্প করতে করতে খাও।

কি গল্প করব?

যা ইচ্ছা কর। কি গল্প করবে সেটাও কি বলে দিতে হবে?

আমি গল্প জানি না। বরং আপনি গল্প করুন। আমি শুনি।

আমার গল্প শুনতে কি ভাল লাগবে?

হ্যাঁ লাগবে।

কি গল্প শুনতে চাও বল।

ঐ যে একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। তাকে বিয়ে করার জন্যে পাগল হয়ে পড়েছিলেন, সেই গল্পটা বলুন।

জামান তোমাকে বলেনি?

না। ও তো গল্প-টল্প করে না।

কি করে? অফিস করে আর বাসায় এসে ঘুমায়?

অনেকটা এরকম।

আলম বিরক্তমুখে বলল, জামানকে দোষ দিয়ে কি হবে? বেশির ভাগ মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি এই রকম। খাওয়া-ঘুম-খাওয়া, এই সাইকেলে শুধু ঘুরছে। বেঁচে থাকার মধ্যে যে একটা আনন্দের ব্যাপার আছে তা এরা জানে না। স্বপ্নহীন জীবন যাপন।

নায়লা কলল, ওদের কথা বাদ দিন, আপনার গল্পটা বলুন। আমার সত্যি শুনতে ইচ্ছা করছে।

আলম আইসক্রীম খাচ্ছে। কোন কথা বলছে না। তার মুখ অসম্ভব গম্ভীর। আলমকে দেখে নায়লার কেমন জানি ভয়-ভয় লাগছে।

নায়লা!

জ্বি।

ঐ মেয়েটার নাম ছিল রেশমা।

জানি। আপনার বন্ধু আমাকে বলেছে।

ও যে দেখতে তোমার মত ছিল তা কি তোমাকে বলেছি?

নায়লা ক্ষীণ গলায় বলল, হ্যাঁ বলেছেন।

তুমি হাসলে গালে টোল পড়ে। রেশমা রাগলে তার গালে টেল পড়তো।

নায়লা অস্পষ্ট স্বরে বলল, আমি উঠি?

একটু বোস নায়লা। প্লীজ। এক মিনিটের জন্য বোস।

নায়লা বসে আছে। তার হাত-পা শির শির করছে। কপাল ঘামছে।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ