বইমেলা

বসার ঘরে বাচ্চারা এত হইহল্লা করছে যে দাদি অধৈর্য হয়ে একসময় চিৎকার করে বললেন, “এই! তোরা ষাঁড়ের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”

একজন বলল, “ষাঁড়ের মতো? ষাড় কি চিৎকার করে নাকি? ষাঁড় তো ডাকে হাম্বা হাম্বা করে।”

আরেকজন বলল, “ষাঁড় শিং দিয়ে গুতোগুতি করে। আমরা কী শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করছি দাদি?”

আরেকজন বলল, “ষাঁড় হচ্ছে ছেলে গরু। আমাদের মাঝে ছেলে আর মেয়ে দুই-ই আছে। দাদি তোমার বলা উচিত ছিল ষাঁড় আর গাইয়ের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”

আরেকজন বলল, “না, না! বড় গরু হচ্ছে ষাঁড়। আমরা তো বড় না আমরা তো ছোট। বলা উচিত ছিল বাছুরের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”

সবাই রাজি হলো আর সবাই তখন বলতে শুরু করল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বাছুরের মতো! বাছুরের মতো!”

ঝুমু খালা হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে দাদিকে বলল, “খালা, আপনার নাতি-নাতনি কিন্তু ঠিক করে মানুষ হচ্ছে না। এরা কিন্তু বাছুরই থেকে যেতে পারে!”

দাদি বললেন, “এরা বাছুর থাকুক আর ছাগলই থাকুক আমার কোনো সমস্যা নাই। খালি যদি এরা এত চিৎকার করে আমার কানের পোকা নাড়িয়ে না দিত!”

বাচ্চারা তখন আগের থেকে জোরে চিৎকার শুরু করল। বলতে লাগল, “দাদি তোমার কানে আসলেই পোকা আছে? কী পোকা? কী পোকা? আমাদের দেখাবে?”

চেঁচামেচি আরো বেড়ে যেত কিন্তু ঠিক তখন ছোটাচ্চু এসে ঢুকল, হঠাৎ করে সবাই চুপ করে গেল। সবাই দেখার চেষ্টা করতে লাগল ছোটাচ্চুর হাতে কেক বা আইসক্রিম এ রকম কিছু আছে কি নেই। হাতে একটা ব্যাগ, সেই ব্যাগে শুধু কয়েকটা বই দেখে বাচ্চারা খুবই হতাশ হলো। একজন লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ছোটাচ্চু! আজকেও তুমি কিছু আনো নাই?”

ছোটাচ্চু মুখ গম্ভীর করে বলল, “না। আনি নাই। আজকে আমার একটা ক্লায়েন্টের বিল পেয়েছিলাম, ভাবলাম তোদের জন্যে কিছু আনি।”

সবাই চিৎকার করে বলল, “তাহলে আনলে না কেন?”

“আনলাম না, করণ ভাবলাম তোদেরকে তার বদলে কোনো ফার্স্টফুডের দোকানে নিয়ে যাই।”

সবাই আরো জোরে চিৎকার করে বলল, “চল, চল। ফার্স্ট ফুড, ফার্স্ট ফুড!”

ছোটাচ্চু বলল, “পরে মনে হলো সেটা ঠিক হবে না।”

হাহাকারের মতো শব্দ করে একজন বলল, “কেন ঠিক হবে না?”

ছোটাচ্চু বলল, “তার কারণ আমার মনে হলো তোদের খাই খাই অভ্যাস বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা হলেই শুধু খাই খাই। খাওয়া ছাড়া দুনিয়াতে আরো কাজ আছে।”

বাচ্চাদের মাঝে যে সবচেয়ে পাজি সে বলল, “ছোটাচ্চু খাওয়া ছাড়া অন্য যে কাজ আছে আমরা সেইটাও করি। প্রত্যেক দিন সকালে বাথরুমে গিয়ে–”

একজন ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল তাই বাথরুমে গিয়ে কী করে সেটা আর বলতে পারল না।

ছোটাচ্চু বলল, “তাই আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমি তোদের আর খাওয়াতে নিয়ে যাব না। তার বদলে–”

সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করল, “তার বদলে?”

“তার বদলে আমি তোদের মননশীল বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিশীল কাজে সাহায্য করব।”

ছোটাচ্চুর কথা শুনে সবাই একসাথে হতাশা আর যন্ত্রণার মতো শব্দ করল। একজন বলল, “ছোটাচ্চু, তোমার এত বড় অধঃপতন হলো? তুমিও শেষ পর্যন্ত অন্যদের মতো হয়ে গেলে? হায় হায়!”

ছোটাচ্চু বলল, “আগে শোন তো আমি কী প্ল্যান করেছি!”

একজন জিজ্ঞেস করল, “কী প্ল্যান করেছ?”

ছোটাচ্চু চোখ-মুখ উজ্জ্বল করে দুই হাত নেড়ে বলল, “আমি তোদের সবাইকে বইমেলায় নিয়ে যাব।”

সবাই কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর একজন মিনমিন করে বলল, “বইমেলা?”

আরেকজন বলল, “বইমেলায় তো আমরা নিজেরাই যেতে পারি! আমরা তো প্রত্যেক বছরই যাই।”

ছোটাচ্চু বলল, “এই বছর অন্য রকম। তার কারণ আমি তোদের সবাইকে বই কেনার জন্য পাঁচশ করে টাকা দেব।”

এবারে সব বাচ্চা মিলে আনন্দে চিৎকার করে উঠল! চিৎকার থামার পর শান্ত প্রথম কথা বলল, “ছোটাচ্চু! মাত্র পাঁচশ টাকা? পাঁচশ টাকায় তো কিছুই হবে না! বইয়ের কত দাম তুমি জানো?”

ছোটাচ্চু মুখ শক্ত করে বলল, “কেউ যদি মনে করে এই টাকায় তার কিছুই হবে না তাহলে তার টাকা নিতে হবে না!”

শান্ত তাড়াতাড়ি বলল, “না, না, আমি সেটা বলি নাই। অবশ্যই আমরা নিব। বইমেলায় খালি হাতে গিয়ে কোনো আনন্দ আছে?”

মুনিয়া ভয়ে ভয়ে বলল, “আমাকেও দিবে ছোটাচ্চু?”

ছোটাচ্চু বলল, “অবশ্যই দেব। ছোট, বড়, মাঝারি সবাই টাকা পাবে।”

টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “দাদি?”

ছোটাচ্চু বলল, “মা যদি বইমেলায় যেতে চায় তাহলে মাও পাবে।”

শান্ত হাতে কিল দিয়ে বলল, “ভেরি গুড! আমি দাদিকে বইমেলায় নিয়ে যাব। দাদি তুমি টাকাটা নিয়ে আমাকে দিয়ে দেবে।”

ছোটাচ্চু বলল, “উঁহু, সেটা হবে না। যার টাকা তার। সে নিজে বই কিনবে, কিনে ক্যাশমেমো আমাকে দেখাতে হবে। এইটা হচ্ছে নিয়ম।”

টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “সবাই টাকা পাবে ছোটাচ্চু?”

“হ্যাঁ। সবাই।”

“ঝুমু খালা?”

“একশবার। ঝুমু যদি বইমেলায় যায়, ঝুমুও পাবে।”

মুনিয়া জিজ্ঞেস করল, “ঝুমু খালা তুমি কী বই কিনবে?”

ঝুমু খালা মুখ গম্ভীর করে বলল, “বইমেলায় গিয়ে দেখি কী বই আছে।”

“তুমি পড়তে পারো?”

“পারি না আবার? বানান করে করে সব পড়তে পারি। ইংরেজিটা খালি সমস্যা হয়।”

শান্ত তখন হাত পেতে বলল, “ছোটাচ্চু, আমার পাঁচশ টাকা এখনই দিয়ে দাও।”

“এখন? এখন কেন দেব?”

“তাহলে কখন দেবে?”

“বইমেলায় যখন যাবি তখন পাবি। আমি সবাইকে বইমেলায় একটা খাম ধরিয়ে দেব।”

মুনিয়া উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “নোটগুলো কি নতুন দিবে নাকি পুরাতন?”

ছোটাচ্চু হাসল, হেসে বলল, “অবশ্যই কড়কড়া নতুন নোট!”

মুনিয়া আনন্দে দাঁত বের করে হাসল। তাকে দেখে মনে হলো, পাঁচশ টাকা পাবে সেটা নিয়ে যত আনন্দ, তার থেকে বেশি আনন্দ কারণ নোটগুলো হবে কড়কড়ে নতুন নোট!

.

দু’দিন পর সবাই দলবেঁধে বইমেলায় হাজির হলো। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দাদি এবং ঝুমু খালা আসতে পারল না, বাসায় মেহমান আসার কারণে দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছোটাচ্চু সবার হাতে একটা করে খাম ধরিয়ে দিল। সেই খাম খুলে দেখা গেল সত্যি সত্যি তার ভেতরে কড়কড়ে পাঁচটা একশ টাকার নোট। কড়কড়ে নোটগুলো ধরে উত্তেজনায় মুনিয়ার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। পাঁচশ টাকা দিয়ে পৃথিবীর কত কিছু কিনে ফেলা যায় কিন্তু ছোটাচ্চু বলে দিয়েছে বই ছাড়া আর কিছু কেনা যাবে না। শুধু বই-ই কিনতে হবে। যা ইচ্ছা তা-ই কিনতে দিলে আরও ভালো হতো কিন্তু শুধু বই কিনতেও মুনিয়ার কোনো আপত্তি নেই।

টুনি শান্তকে জিজ্ঞেস করল, “শান্ত ভাইয়া, তুমি কী বই কিনবে?”

শান্ত উদাস মুখে বলল, “আমি বই কিনে টাকা নষ্ট করব না।”

“কিন্তু ছোটাচ্চু বলেছে এই টাকা নিয়ে বই-ই কিনতে হবে।”

“ছোটাচ্চুকে পাঁচশ টাকার বই দেখালেই তো হলো।”

“বই না কিনে কেমন করে দেখাবে?”

শান্ত নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বলল, “তুই দেখ আমি কীভাবে ম্যানেজ করি।”

শান্ত কীভাবে বই ম্যানেজ করে দেখার জন্যে টুনি তার পিছু পিছু গেল। শান্ত কয়েকটা বইয়ের স্টল ঘুরে একটা স্টলের সামনে দাঁড়াল। সেই স্টলে একজন কমবয়সী কবি একটা কলম হাতে করে খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, কেউ তার বই কিনলেই সে একটা অটোগ্রাফ দেবে। কিন্তু কেউ তার বই কিনছে না।

শান্ত একটু অপেক্ষা করে কমবয়সী কবির নামটা বের করে ফেলল, নামটা যথেষ্ট কায়দার নাম, তুফান তূর্য। শান্ত তখন কবির দিকে এগিয়ে গেল, তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কবি তুফান তূর্য?”

কবি তুফান সূর্যের চোখ চকচক করে উঠল, বলল, “হ্যাঁ। কেন?”

“না, এমনি। আপনার নাম অনেক শুনেছি তো।”

কবি এবারে রীতিমতো উত্তেজিত। বলল, “আমার নাম শুনেছ? কার কাছে শুনেছ?”

“আমার আপুর কাছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ইংরেজিতে অনার্স।”

টুনি কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শান্তর বানিয়ে বানিয়ে কথা বলার ক্ষমতা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে।

কবি তুফান তূর্য বলল, “তোমার বোন কবিতা পড়ে বুঝি?”

শান্ত মাথা নাড়ল, বলল, “খুব খুঁতখুঁতে। সবার কবিতা পড়তে চায় না। আপনারটা পড়ে।”

“তাই বুঝি?”

“হ্যাঁ। আপনার কবিতার বই বের হয়েছে?”

কবি তুফান তূর্য বলল, “হ্যাঁ। আমার প্রথম বই। নৈঃশব্দ্যের কান্না।”

“আমার আপু খুশি হবে। একটা কিনে নিয়ে গেলে অনেক খুশি হতো। একটা অটোগ্রাফসহ।”

“কিনে নিয়ে যাও একটা কপি। অটোগ্রাফ দিয়ে দিব।”

“কেমন করে কিনব? সব টাকা খরচ করে ফেলেছি।” বলে শান্ত খুবই বিষণ্ণ মুখে হাঁটতে শুরু করল, কয়েক পা হাঁটতেই কবি তাকে ডাকল, “এই যে ছেলে, শুনো।”

শান্ত এগিয়ে এলো। কবি তুফান তূর্য বলল, “আমি তোমার বোনকে একটা কবিতার বই অটোগ্রাফসহ দিয়ে দিই। কী বলো?”

“খুবই ভালো হয় তাহলে। আমার আপু যে কী খুশি হবে চিন্তাও করতে পারবেন না। আপনাকে অসম্ভব পছন্দ করে তো!”

কবি তুফান তূর্য তার লেখা একটা কবিতার বই নিয়ে শান্তকে জিজ্ঞেস করল, “কী নাম তোমার আপুর?”

“শান্তা।” কবি তুফান তূর্য বড় বড় করে লিখল,

প্রিয় শান্তাকে
অনেক ভালোবাসা।
তুফান তূর্য

শান্ত বইটা হাতে নিয়ে হাসি হাসি মুখে বের হয়ে এলো। স্টল থেকে বেশ খানিকটা সরে যাবার পর টুনি শান্তর কাছে এসে বলল, “শান্ত ভাইয়া”

শান্ত দাঁত বের করে হেসে বলল, “দেখলি, কেমন করে একটা বই ম্যানেজ করলাম? দেড়শ টাকা দাম!”

“দেখেছি।” টুনি বলল, “কাজটা একেবারে ঠিক হলো না। তুমি কেমন করে এত মিথ্যা কথা বলতে পারো? কবি তুফান তূর্যকে তুমি এইভাবে ঠকালে?”

“মোটেও ঠকাই নাই। উৎসাহ দিয়েছি। এখন এই মানুষটা কত উৎসাহ পেল চিন্তা করতে পারবি?”

“তাই বলে এইভাবে মিথ্যা কথা বলবে?”

“যা যা ভাগ।”

“তা ছাড়া বইয়ে লিখেছে শান্তা-তোমার নাম শান্ত।”

শান্ত হাত নেড়ে উড়িয়ে দিল। বলল, “একটা মাত্র আকার! ওটা কোনো ব্যাপারই না। ঘষে তুলে ফেলব।”

শান্ত তখন আরো ফ্রি বই ম্যানেজ করার জন্যে এগিয়ে গেল। এবারে সে গেল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করার জায়গায়। সেখানে অনেক ভিড়। মানুষ ঠেলাঠেলি করছে, তার মাঝে একটার পর একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। লেখক তার বইগুলো রঙিন কাগজে মুড়ে নিয়ে আসছে, লেখকের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন একজন বুড়ো মতন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আসে। তাকে প্রথমে ফুল দেয়া হয় তারপর সবার হাতে একটা করে বই দেয়া হয়, একজন মানুষ তখন বই এবং লেখক নিয়ে কিছু কথা বলে, তারপর সবাই বইয়ের মোড়ক খুলে। তখন হাততালি দেয়া হয়, সবাইকে নিয়ে ছবি তোলা হয়।

শান্ত সেই ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রইল। মোড়ক উন্মোচন করার জন্যে যখন অনেকের হাতে বই দেয়া হয় তখন শান্ত একটা বইয়ের জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝে একটা বই পেয়ে যায়। সেও সবার সাথে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে বইটা নিজের কাছে রেখে দেয়। দেখতে দেখতে শান্তর বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকল। শুধু যে বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলল তা নয়, মোড়ক উন্মোচনের পর একটু মিষ্টি খাওয়ার আয়োজন থাকে, সেখানে শান্ত একটার পর মিষ্টি খেয়ে যেতে থাকল।

টুনি শান্তকে ছেড়ে মুনিয়া আর টুম্পাকে খুঁজে বের করল। তারা ছোটদের বইয়ের স্টলে বই দেখে যাচ্ছে। এত বই তার মাঝে কোনটা কিনবে সেটা নিয়ে মনস্থির করতে পারছে না। যেটাই দেখে সেটাই তাদের কেনার ইচ্ছা করে। টুনি তাদের বই কিনতে দিয়ে নিজের বইগুলো কিনতে বের হলো। ঘুরে ঘুরে একটা ভূতের বই, একটা গণিতের, আরেকটা প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনল। তখনো কিছু টাকা রয়ে গেছে, সেই টাকা দিয়ে নতুন কোনো ভালো বই কেনা যাবে না, তাই ঠিক করল টাকাটা টুম্পা না হয় মুনিয়াকে দিয়ে দেবে। নিজেদের টাকার সাথে মিলিয়ে হয়তো ভালো কোনো একটা বই কিনে ফেলতে পারবে।

দুজনকে ছোটদের বইয়ের স্টলের একেবারে শেষ মাথায় খুঁজে পাওয়া গেল। তখনো বই ঘাঁটাঘাঁটি করছে। টুনিকে দেখে মুনিয়া প্রায় ছুটে তার কাছে এসে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, “টুনি আপু, কি হয়েছে জানো?”

মুনিয়া কাছাকাছি একটা স্টলের সামনে একজন বাবা আর মা এবং সাথে ছয়-সাত বছরের একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল, “ঐ ছেলেটাকে দেখেছ?”

“হ্যাঁ। দেখেছি। কী হয়েছে ছেলেটার?”

“ছেলেটা কাঁদছে দেখেছ?”

টুনি তখন লক্ষ করল আসলেই বাচ্চাটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

মুনিয়া বলল, “কেন কাঁদছে জানো?”

“কেন?”

“বাচ্চাটা একটা বই কিনতে চাইছিল, তার আব্লু-আম্মু বইটা কিনে দিবে না, সেই জন্যে কাঁদছে।”

“কেন কিনে দেবে না?”

মুনিয়া বলল, “জানি না। কী সুন্দর একটা ভূত আর রাক্ষসের বই তবু তার আব্বু-আম্মু কিনে দিচ্ছে না।”

বইটা কেন কিনে দিচ্ছে না মুনিয়া না জানলেও টুনির কারণটা বুঝতে দেরি হলো না। বাবা-মাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা খুবই সাধারণ মানুষ, টাকা-পয়সা বেশি নেই। বাচ্চাকে নিয়ে বইমেলায় এসেছে কিন্তু বাচ্চাকে তার ইচ্ছা মতোন দামি বই কিনে দেবার ক্ষমতা নেই। টুনির বাচ্চাটার জন্যে যেটুকু মায়া হলো তার আব্বু-আম্মুর জন্যে তার থেকে অনেক বেশি মায়া হলো।

মুনিয়া বলল, “টুনি আপু, আমরা বাচ্চাটাকে বইটা কিনে দেই?”

টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “না। আমরা বইটা কিনে দিলে তার আব্বু আম্মু লজ্জা পাবে। এমনি এমনি বইটা নিতে রাজি নাও হতে পারে।”

“কিন্তু দেখো বাচ্চাটা কীভাবে কাঁদছে। দেখে আমার একটু একটু কান্না এসে যাচ্ছে।” সত্যি সত্যি মুনিয়ার গলা কান্না কান্না হয়ে গেল।

টুনি একটু চিন্তা করল, তারপর বলল, “দেখি কী করা যায়। তুই যা, টুম্পাকে ডেকে আন।”

মুনিয়া তার বইয়ের ভারী ব্যাগটা টুনির কাছে রেখে টুম্পাকে ডেকে আনতে গেল। টুনি বাবা-মা আর বাচ্চাটার দিকে নজর রাখে তারা যেন চোখের আড়াল না হয়ে যায়। টুনি দেখতে পেল বাবা বইয়ের স্টল থেকে সস্তা একটা বই কিনে দিতে চাইছে কিন্তু বাচ্চাটা রাজি হচ্ছে না। সে এখন আর কাঁদছে না কিন্তু অভিমানে মুখটা ভার করে রেখেছে।

মুনিয়া গিয়ে টুম্পাকে ধরে এনেছে, টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “টুনি আপু তুমি ডেকেছ?”

“হ্যাঁ। আমাদের এখন একটা মিশন কমপ্লিট করতে হবে।”

“মিশন কমপ্লিট?”

“হ্যাঁ।”

“কী মিশন?”

টুনি সামনের স্টল থেকে বাবা-মায়ের সাথে হেঁটে যেতে থাকা বাচ্চাটাকে দেখিয়ে বলল, “ঐ যে বাচ্চাটা দেখছিস, এই বাচ্চাটাকে তার আব্বু-আম্মু একটা বই কিনে দেয় নাই–”

টুনি কথা শেষ করার আগেই টুম্পা বলল, “আমি দেখেছি। ভূত আর রাক্ষসের বই। বইটার দাম দুইশ টাকা। বাবা-মায়ের কাছে এত টাকা নাই। আমি দেখেছি বাবা তার মানিব্যাগটা কয়েকবার দেখেছে–”

টুনি বলল, “তাহলে তো তুই জানিস। বাচ্চাটার কান্না দেখে মুনিয়ার কান্না পেয়ে যাচ্ছে তাই এখন আমাদের এই বাচ্চাটাকে এই বইটা কিনে দিতে হবে। কিন্তু এমনভাবে দিতে হবে যেন তারা কিছুতেই বুঝতে না পারে আমরা কিনে দিচ্ছি, তাহলে বাচ্চার আব্বু-আম্মু লজ্জা পাবে। কারো যখন টাকা থাকে না তখন গায়ে পড়ে তাদের সাহায্য করলে লজ্জা পায়।”

“তাহলে কীভাবে দিতে হবে?”

“আমি একটা প্ল্যান করেছি। তার আগে তুই গিয়ে দৌড় দিয়ে বইটা কিনে আন। মুনিয়া তুই এই বাচ্চাটা আর তার আব্বু-আম্মুকে চোখে চোখে রাখ যেন ভিড়ের মাঝে হারিয়ে না যায়।”

টুম্পার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিল না। তাই টুনি আর টুম্পার বাড়তি টাকাটাও দিতে হলো, টুম্পা সেই টাকা নিয়ে বই কিনতে গেল। মুনিয়া একটা কাজ পেয়ে খুবই খুশি হলো। সে বাচ্চাটাকে দূর থেকে চোখে চোখে রাখতে লাগল যেন হারিয়ে না যায়। টুনি তখন তার ব্যাগ থেকে তার নোট বইটা বের করল, তারপর সেখান থেকে কয়েকটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সেগুলো ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করল। তারপর প্রত্যেকটা কাগজের টুকরায় লিখল “বিজয়ী” তারপর সেই কাগজগুলোকে ভাজ করে রাখল যেন ভেতরে কী লেখা আছে দেখা না যায়।

কিছুক্ষণের মাঝেই টুম্পা বইটা কিনে আনল, মোটাসোটা রঙিন একটা বই, ছোট বাচ্চাদের এরকম একটা বই খুব পছন্দ হতেই পারে।

টুনি বলল, “শোন, আমি আমার প্ল্যানটা বলি। আমি ভান করব যে আমি এই মেলায় ছোট বাচ্চারা কী রকম বই পছন্দ করে তার একটা জরিপ নিচ্ছি। কেউ যদি জরিপে অংশ নেয় তখন তাকে একটা লটারিতে অংশ নিতে দেয়া হবে। সেই লটারিতে যারা জিতবে তারা একটা বই উপহার পাবে।”

টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, “বুঝেছি, তুমি বাচ্চাটাকে লটারিতে জিতিয়ে দেবে?”

হ্যাঁ। আমি অনেকগুলো কাগজের টুকরো নিয়েছি সবগুলোতে লিখেছি বিজয়ী। তাই বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে যেটাই তুলবে সেটাই হবে বিজয়ী।

মুনিয়া উত্তেজিত হয়ে বলল, “টুনি আপু তোমার মাথা ভর্তি খালি বুদ্ধি আর বুদ্ধি।”

টুনি হাসল, “এইটা এমন কিছু বুদ্ধি না। আমাদের বুদ্ধি দেখাতে হবে জরিপ নেওয়ার সময়।” তারপর টুম্পার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের বাচ্চাটা আর তার আম্মু-আব্বুর কাছাকাছি তোর জরিপ নেব। তুই ভান করবি আমাকে চিনিস না, পারবি না?”

টুম্পা বলল, “পারব।”

মুনিয়া বলল, “আর আমি?”

“তুই একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখবি কী হচ্ছে।”

মুনিয়া বলল, “না টুনি আপু আমিও খেলতে চাই।”

টুনি বলল, “খেলতে চাস? এখানে খেলা কোনটা?”

“এই পুরোটাই তো খেলা টুনি আপু। আমি খেলব।”

“তুই কীভাবে খেলবি?”

“টুম্পা আপুর বদলে আমার জরিপ নেবে।”

টুনি বলল, “তুই বেশি ছোট। তুই পারবি না। বাচ্চাটার আব্বু-আম্মু বুঝে ফেলবে, তখন খুব খারাপ ব্যাপার হবে।”

মুনিয়া বলল, “না টুনি আপু, আমি পারব। তুমি পরীক্ষা করে দেখো।”

টুনি কিছুক্ষণ মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “ঠিক আছে। তাহলে তোর জরিপ নেব। আমি তোকে যা প্রশ্ন করব তুই শুধু তার উত্তর দিবি। আর খবরদার হেসে ফেলবি না। ভান করবি যেন তুই আমাকে চিনিস না, আগে কখনো দেখিস নাই।”

“ঠিক আছে। আমি তোমাকে চিনি না। তোমাকে কখনো দেখি নাই।”

টুনি তখন টুম্পার দিকে তাকিয়ে বলল, “টুম্পা তুই তাহলে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। তুই সবগুলো বই নিয়ে যাবি। লটারির শেষে বইগুলো দেখাবি। সেখান থেকে যে বইটা নিতে চায় নেবে।”

টুম্পা বলল, “ঠিক আছে, বইগুলো দাও।”

টুনি তাদের সবগুলো বই টুম্পার কাছে দিয়ে দিল।

কথা বলার সময় তারা সারাক্ষণই চোখের কোনা দিয়ে বাচ্চাটা আর তার বাবা-মাকে চোখে চোখে রেখেছে। পরিবারটা এখন বাচ্চাদের বইয়ের স্টল থেকে সরে গিয়ে খালি মাঠের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। ওরা দেখল কাছাকাছি একটা খালি বেঞ্চ পেয়ে সেখানে বাবা-মা বাচ্চাটাকে নিয়ে বসে পড়েছে। বাচ্চাটা মুখ ভার করে বসে আছে, একটা কথাও বলছে না।

টুনি বলল, “মুনিয়া তুই দৌড়ে যা, ঐ বেঞ্চটাতে বাচ্চাটার পাশে বসে যা। মনে আছে তো তুই আমাকে আর টুম্পাকে চিনিস না?”

মুনিয়া মাথা নাড়ল, বলল, “মনে আছে টুনি আপু। আমি তোমাকে আর টুম্পাপুকে চিনি না। কোনোদিন দেখি নাই।” তারপর দৌড়ে গিয়ে বেঞ্চটাতে বাচ্চাটির পাশে বসে গেল।

টুনি আর টুম্পা কয়েক মিনিট পর বেঞ্চটার দিকে রওনা দিল। টুনির এক হাতে নোট বুক অন্য হাতে একটা কলম। টুম্পার কাছে ব্যাগের ভেতর তাদের সবগুলো বই। বেঞ্চটার কাছে গিয়ে টুনি থেমে যায়, তারপর মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপু, তুমি কী আমাদের একটা জরিপে অংশ নেবে? জরিপে অংশ নিলে তুমি একটা লটারি করতে পারবে–”

মুনিয়া মুখ শক্ত করে বলল, “জরিপ মানে কী?”

টুনি মুনিয়ার উত্তর শুনে মুগ্ধ হলো, এই বয়সী বাচ্চার জরিপ শব্দটা জানা থাকার কথা নয়।

টুনি বলল, “জরিপ মানে হচ্ছে আমি তোমাকে কয়টা প্রশ্ন করব, তুমি তার উত্তর দেবে।”

মুনিয়া বলল, “তুমি কঠিন কঠিন প্রশ্ন করবে না তো? আমি কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।”

টুনি মাথা নেড়ে বলল, “না, না, না। মোটেও কঠিন প্রশ্ন করব না। তোমার বই পড়তে ভালো লাগে কী না, কী রকম বই পড়তে ভালো লাগে এ রকম প্রশ্ন।”

“ঠিক আছে। বেশিক্ষণ লাগবে না তো?”

“না। বেশিক্ষণ লাগবে না।”

টুনি তার নোটবই নিয়ে রেডি হলো। পাশে বসে থাকা বাচ্চাটা খুব আগ্রহ নিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখছে। টুনি জিজ্ঞেস করল, “তোমার নাম কী?”

“আমার নাম ঝিলিক।”

টুনি মুচকি হাসল, তারপর নাম লিখে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক আছে ঝিলিক, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”

“আমি বেবি ক্লাসে পড়ি।” টুনি নোট বইয়ে ক্লাসটা লিখে নিল।

“তুমি যদি বেবি ক্লাসে পড়ো তাহলে নিশ্চয়ই এখনো পড়তে শিখোনি।”

মুনিয়া মাথা নেড়ে বলল, “না, না, আমি পড়তে পারি।”

টুনি বলল, “সত্যি পড়তে পারো? বাহ। ঐ যে বইয়ের স্টল আছে সেখানে কী লেখা আছে পড়ো দেখি।”

মুনিয়া বইয়ের স্টলের নামটি পড়ে শোনাল, দিনরাত্রি প্রকাশনী। টুনি খুশি হওয়ার ভান করে বলল, “তুমি কী কোনো বই পড়েছ?”

মুনিয়া বলল, “হ্যাঁ, আমি অনেক বই পড়েছি।”

“ভেরি গুড। তুমি কী বই পড়েছ তার নাম বলো দেখি।”

মুনিয়া বলল, “ছোটদের অ আ ক খ। ছোটদের এ বি সি ডি।”

টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “না না পাঠ্যবই না। গল্পের বই না-হয় কবিতার বই, না-হলে কমিক—”

মুনিয়া বলল, “হ্যাঁ পড়েছি। দাদু আর রাম ছাগল, ভূতের বাচ্চা ভুতুয়া, হোজ্জার গল্প—”

টুনি বইয়ের নামগুলো লিখে নেয়ার ভান করতে থাকে। নামগুলো লিখে শেষ করার ভান করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কী রকম বই পড়তে ভালো লাগে? ছবিওয়ালা বই না ছবি ছাড়া বই?”

“ছবিওয়ালা বই।”

“রঙিন ছবি নাকি সাদা কালো ছবি?”

“রঙিন রঙিন।”

“কী রকম বই পড়তে তোমার ভালো লাগে? রূপকথা নাকি ভূত নাকি হাসির গল্প?”

“আমার হাসির গল্প বই পড়তে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।”

টুনি সবকিছু লিখে শেষ করার ভান করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি টেলিভিশন দেখো?”

“দেখি।”

“তোমার টেলিভিশন দেখতে বেশি ভালো লাগে নাকি বই পড়তে?”

“টেলিভিশনে কার্টুন দেখতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে কিন্তু আমাকে দেখতে দেয় না। বাসায় বড় মানুষেরা দিন-রাত খবর শুনে।”

“হিন্দি সিরিয়াল?”

“না। আমার আব্বু-আম্মু কখনো হিন্দি সিরিয়াল দেখে না। আমিও দেখি না।”

টুনি খুশি হওয়ার ভান করে বলল, “ভেরি গুড। কখনো হিন্দি সিরিয়াল দেখবে না। আর তোমাকে বলে রাখি, টেলিভিশন দেখা থেকে বই পড়া অনেক বেশি ভালো। বুঝেছ?”

মুনিয়া মাথা নেড়ে বুঝে ফেলার ভান করল। টুনি নোট বইয়ে আরো কিছুক্ষণ লিখে মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “ঝিলিক, তোমার জরিপ নেয়া শেষ। এখন লটারি। কিন্তু তার আগে তোমাকে অন্য একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি।”

“করো।”

“তুমি ছোট একজন মানুষ, আব্বু-আম্মু ছাড়া একা এক বসে আছ, তোমার আব্বু-আম্মু কোথায়?”

মুনিয়া বলল, “ঐ যে আমার আব্বু-আম্মু বই কিনছে। হেঁটে হেঁটে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে তাই এখানে বসে আছি।”

টুনি-মুনিয়ার বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হলো। সে খুবই ভালোভাবে অভিনয় করে যাচ্ছে। বাসায় গিয়ে তাকে অভিনয়ের জন্যে একটা মেডেল দিতে হবে।

টুনি তার ব্যাগ থেকে ভাঁজ করা ছোট ছোট কাগজগুলো বের করে তার হাতে ধরল, বলল, “এখান থেকে একটা কাগজ নাও। চোখ বন্ধ করে নিতে হবে।”

মুনিয়া চোখ বন্ধ করে ভাঁজ করা ছোট একটা কাগজ নিল। টুনি বলল, “খুলে দেখো কী লেখা। যদি বিজয়ী লেখা থাকে তাহলে পুরস্কার পাবে। যদি দুঃখিত লেখা থাকে তাহলে কোনো পুরস্কার নাই।”

“জিতলে কী পুরস্কার পাব? চিপসের প্যাকেট?”

“না, না। মোটেও চিপসের প্যাকেট না। জিতলে পুরস্কার হচ্ছে বই।”

“কী বই?”

“আমাদের কাছে অনেক রকম বই আছে। যেটা পছন্দ।”

মুনিয়া তখন খুব সাবধানে ভাঁজ করা কাগজটা খুলল, ভেতরে লেখা বিজয়ী এবং সেটা দেখে মুনিয়া আনন্দে পাগল হয়ে যাবার একটা অনবদ্য অভিনয় করল।

টুম্পা তখন তার ব্যাগ থেকে বইগুলো বেঞ্চে ছড়িয়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। টুনি বলল, “ঝিলিক। নাও, তুমি এখান থেকে একটা বই বেছে নাও।”

মুনিয়া জিজ্ঞেস করল, “একটাই নেব, নাকি আরো বেশি?”

টুনি বলল, “না একটা। আমাদের অনেক জরিপ করতে হবে।”

মুনিয়া তখন বইগুলো থেকে একটা বই বেছে নেয়ার একটা অসাধারণ অভিনয় করল। তারপর বইটা বুকে চেপে ধরে তার কাল্পনিক আবু-আম্মুর কাছে ছুটে চলে গেল।

পাশে বাচ্চাটি একরকম বিস্ফারিত চোখে বইগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। যে বইটি তার আব্বু-আম্মু কিনে দেয়নি সেই বইটিও এখানে আছে। সে কি জরিপে অংশ নিতে পারে না? লটারিতে অংশ নিতে পারে না? কিন্তু কীভাবে সেটা হতে পারে?

খুব সহজেই হয়ে গেল। টুনি বাচ্চাটার আব্বু-আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা কি আপনার বাচ্চার একটা জরিপ নিতে পারি? বেশিক্ষণ লাগবে না।”

আব্বু-আম্মু কিছু বলার আগেই বাচ্চাটা লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল, বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি জরিপ হব। জরিপ হব।”

টুনি বলল, “ভেরি গুড। তাহলে তোমার নাম বলো।”

“আমার নাম মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম খান জুয়েল।”

“ভেরি গুড জুয়েল। তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”

“টু। ক্লাস টু। আমি পরীক্ষায় থার্ড হয়েছি।”

“বাহ্! এরপরের বার সেকেন্ড হবে। তারপরের বার ফার্স্ট।”

জুয়েল জোরে জোরে মাথা নাড়ল। টুনি ঠিক আগের মতোই একটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতে লাগল। জুয়েল খুবই উৎসাহ নিয়ে প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকল এবং আড়চোখে ভূত এবং রাক্ষসের মোটাসোটা রঙিন বইটার দিকে তাকাতে লাগল।

দেখতে দেখতে জরিপ শেষ হয়ে গেল। দেখা গেল জুয়েল গল্প বই পড়তে খুবই পছন্দ করে। তার প্রিয় বই হচ্ছে ভূতের গল্প। তারও পছন্দ ছবিওয়ালা রঙিন বই এবং সেও টেলিভিশনে কার্টুন দেখতে পছন্দ করে তবে সে নিজ থেকে ঘোষণা দিল যে টেলিভিশন দেখা মোটেই ভালো কাজ না।

জরিপ শেষ হওয়ার পর টুনি আবার তার ভাঁজ করা ছোট ছোট কাগজগুলো তার দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে জুয়েলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “জুয়েল এখন চোখ বন্ধ করে একটা কাগজ নাও।”

জুয়েল বিড়বিড় করে একটা দোয়া পড়ে তার বুকে ফুঁ দিল, নার্ভাসভাবে তার মায়ের দিকে তাকাল, এবং তার মা তাকে সাহস দিলেন।

টুনি বলল, “জুয়েল যদি দেখো লটারিতে তুমি জিত নাই, তাহলে মন খারাপ করবে না তো?”

জুয়েল খুব কষ্ট করে মাথা নাড়ল, বলল, “করব না।”

টুনি বলল, “এটা তো একটা লটারি, তাই কে জিতবে কে হারবে তার কোনো ঠিক নেই। বুঝেছ?”

জুয়েল ফ্যাকাসে মুখে বলল, “বুঝেছি।”

“নাও একটা কাগজ।”

জুয়েল অনেকক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে একেবারে নিচের থেকে একটা কাগজ নিল। নিয়ে কাঁপা হাতে এটা ধরে রাখল।

টুনি বলল, “খুলো কাগজটা। না জিতলে মন খারাপ কোরো না কিন্তু।”

জুয়েল কাগজটা খুলল, ভেতরে লেখা–”বিজয়ী” অন্য কিছু লেখা সম্ভব না যদিও জুয়েলের পক্ষে সেটা কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না।

কাগজটা দেখে মনে হলো জুয়েল নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে। তার ঠোঁট কাঁপতে থাকল এবং সেইভাবে কাঁপা গলায় বলল, “আমি যে কোনোটা নিতে পারব?”

“হ্যাঁ। যেকোনোটা। কিন্তু একটার বেশি না।”

জুয়েল তখন রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ভূত আর রাক্ষসের বইটা ছো মেরে তুলে নিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরল। তাকে দেখে মনে হতে লাগল একটু আলগা করলেই বুঝি কেউ এসে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

টুনি বলল, “এখানে আরো অন্য বই আছে, সবগুলো দেখে নাও একবার।”

জুয়েল রীতিমতো গর্জন করে বলল, “না। আমি এইটাই নিব।”

টুনি বলল, “ঠিক আছে।”

টুম্পা এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি, এই প্রথম মুখ খুলল, বলল, “আপু আমাদের কিন্তু আরও অনেক জরিপ করা বাকি আছে। এক জায়গায় বেশি সময় দিলে জরিপ শেষ হবে না। ম্যাডাম তখন খুব রাগ করবে।”

টুনি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ। চলো অন্য বাচ্চা খুঁজে বের করি।”

টুম্পা বইগুলো ব্যাগে ঢাকাল তারপর দুজনে উল্টো দিকে হাঁটতে থাকে, একটু পরেই মুনিয়া তাদের সাথে যোগ দিল।

দূর থেকে তারা জুয়েল আর তার আব্লু-আম্মুকে লক্ষ করল। বাচ্চাটা বইটা নিয়ে রীতিমতো লাফাতে লাফাতে হেঁটে যাচ্ছে। তার আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে থাকা হাসি হাসি মুখটা দেখে টুনি, টুম্পা আর মুনিয়াও আনন্দে হাসতে থাকে।

.

সন্ধে হওয়ার পর ছোটাচ্চু সবাইকে নিয়ে মেলার মাঝখানের মাঠটাতে গোল হয়ে বসল, ছোটাচ্চু এখন সবার বইয়ের হিসেব নেবে। দেখবে সবাই তাদের টাকা ঠিকমতো খরচ করেছে কি না, ঠিকভাবে নিজেদের বই কিনেছে কি না। প্রমি কিংবা শাহানার মতো যারা একটু বড় তাদের দিয়ে শুরু করা হলো, দেখা গেল তারা শুধু যে ছোটাচ্চুর পাঁচশ টাকা খরচ করেছে তা নয়, তার সাথে নিজের জমানো টাকাও খরচ করে অনেক বই কিনেছে। তার মাঝে গল্প-উপন্যাস আছে, সায়েন্স ফিকশান আছে, এমনকি কটমটে জ্ঞানের বইও আছে। ছোটাচ্চু বইয়ের বান্ডিল হাতে নিয়ে রীতিমতো বইয়ের দাম বের করে যোগ দিয়ে মিলিয়ে নিল। মনে হচ্ছে ছোটাচ্চু মাত্রার বাইরে সিরিয়াস!

বাচ্চারা সবাই একে অন্যের বই দেখছে, কথা বলছে, হাসাহাসি করছে, তার মাঝে শুধু শান্তকে খুবই মনমরা দেখা গেল। সাধারণত সবসময়েই সে সবচেয়ে বেশি কথা বলে, আজকে তার মুখে কোনো কথা নেই, কেমন যেন চিমসে মেরে বসে আছে।

ছোটাচ্চু একটু বড় ছেলেমেয়ে শেষ করে শান্তর বইগুলো দেখতে চাইল, শান্ত একটু অপরাধীর মতো ভঙ্গি করে ছোটাচ্চুর হাতে তিনটা বই তুলে দিল। প্রথম বইটার নাম নৈঃশব্দ্যের কান্না, কবিতার বই এবং কবির নাম তুফান তূর্য। ছোটাচ্চু চোখ কপালে তুলে বলল, “তুই কবিতার বই কিনেছিস? তুফান তূর্যের বই? তুফান তূর্য আবার মানুষের নাম হয় নাকি?”

শান্ত চুপ করে মাঠ থেকে একটা দুইটা ঘাস ঘেঁড়ার চেষ্টা করতে থাকল। ছোটাচ্চু বইটা খুলে রীতিমতো চমকে উঠল! বলল, “এ কী! ভেতরে কবির অটোগ্রাফ এবং ভালোবাসা। ব্যাপারটা কী? তোর নাম শান্ত কিন্তু ভালোবাসাটা শান্তাকে! শান্তাটা কে?”

টুনি পুরো ব্যাপারটা জানে কিন্তু সে চুপ করে রইল।

ছোটাচ্চু শান্তর পরের দুইটা বই নিল একটা বইয়ের নাম “হাঁস মুরগির বিষ্ঠা থেকে সার” অন্যটা “সহজ টোটকা চিকিৎসা”-এই বই দুটি সে মোড়ক উন্মোচনের ভিড় থেকে কজা করেছে, বইয়ের কী নাম, সেটা নিয়ে সে মাথা ঘামায়নি!

ছোটাচ্চু খানিকক্ষণ হাঁ করে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “তুই এ কী বই কিনেছিস? বইয়ের দামগুলো দেখে বলল, “সব মিলিয়ে তুই তো দুইশ টাকাও খরচ করিসনি। বাকি টাকা কই?”

শান্ত মাথা চুলকে খানিকক্ষণ ইতিউতি করে শেষ পর্যন্ত সত্যি কথাটা বলে ফেলল। তার আসল পরিকল্পনা ছিল নানা জায়গা থেকে কিছু ফ্রি বই ম্যানেজ করে নগদ পাঁচশ টাকা মেরে দেবে। কিন্তু তার খুবই কপাল খারাপ, মোড়ক উন্মোচনের ভিড়ের মাঝে ফ্রি বইয়ের জন্য যখন ধস্তাধস্তি করছিল তখন পকেটমার তার পকেট থেকে কড়কড়া পাঁচটা একশ টাকার নোট হাওয়া করে দিয়েছে। তার আম এবং ছালা কিংবা চা এবং চায়ের কাপ কিংবা কাঁঠালের কোয়া এবং বিচি দুই-ই গেছে। পকেট মারা যাবার পর তার এত মুড খারাপ হয়েছে যে সে আর ফ্রি বইয়ের জন্যে চেষ্টা করেনি, মেলায় মুখ কালো করে ঘুরে বেড়িয়েছে।

ছোটাচ্চু দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “তোর উচিত শাস্তি হয়েছে। এখন বসে বসে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে সার বানিয়ে তোর ঘিলুর মাঝে ঢালতে থাক। টোটকা ওষুধ হিসেবে মাঝে মাঝে এক চামচ খেয়েও নিবি। বুঝেছিস?”

শান্ত খুবই মনমরা হয়ে বলল যে তার আসলে খুবই গাধামো হয়েছে। বইমেলা ঘুরে ঘুরে সে দেখেছে অনেকগুলো ফাটাফাটি বই আছে। তার ঐ বইগুলোই কেনা উচিত ছিল। জিম করবেটের শিকার কাহিনি। কনটিকির ভ্রমণ। এপোলো থার্টিনের মহাকাশ-অভিযান। অসাধারণ সব বই। দেখলেই জিভে পানি এসে যায়।

ছোটাচ্চু গজগজ করতে করতে টুনি, টুম্পা আর মুনিয়ার বইগুলো হাতে নিল। বইগুলো খুবই সুন্দর কিন্তু দাম হিসেব করতে গিয়ে দেখলে দুইশ টাকা কম। ছোটাচ্চু বলল, “কী হলো? দুইশ টাকা কম কেন? টাকা কোথায়? খরচ করিসনি?”

টুনি, টুম্পা আর মুনিয়া একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল, দুইশ টাকার হিসাব কেন মিলানো যাচ্ছে না সেটা বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছিল না। টুনি শেষ পর্যন্ত বলেই দিল, ছোটাচ্চু যে নিয়ম করে দিয়েছে সেই নিয়মের বাইরে তো আর তারা যায়নি। তারা বই-ই কিনেছে কিন্তু নিজেদের জন্যে নয়, অন্যের জন্যে। কাজটা নিশ্চয়ই খুব বড় অপরাধ হতে পারে না!

কীভাবে কীভাবে পরিকল্পনা করে তারা জুয়েল নামের বাচ্চাটাকে ভূত এবং রাক্ষসের বইটা দিয়েছে শুনে ছোটাচ্চু অবশ্য খুবই মজা পেল। শুধু ছোটাচ্চু না অন্যেরাও আনন্দে হি হি করে হাসতে লাগল। ছোটাচ্চু এত খুশি হলো যে সে একেবারে একটা বক্তৃতা দিয়ে দিল। বলল, “তোরা যেটা করেছিস সেটা খুবই সুইট একটা কাজ। একটা ছোট বাচ্চার বইটার এত শখ অথচ মা-বাবা সেটা কিনে দিতে পারছে না, শুনে তো কষ্ট লাগতেই পারে। কিন্তু বইটা এমনভাবে দিলি যেন বাবা-মায়ের আত্মসম্মানে আঘাত না লাগে, এটা অসাধারণ একটা কাজ। তোরা এত ছোট কিন্তু তোদের এরকম ম্যাচুরিটি–আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি! আমি এত খুশি হয়েছি যে আমি কি করব জানিস?”

সবাই জানতে চাইল, “কী করবে ছোটাচ্চু?”

“তোদের তিনজনকে আরো পাঁচশ টাকা করে দেব।”

শুধু তিনজন নয়, সবাই মিলে তখন আনন্দে এত জোরে চিৎকার করে উঠল যে মনে হলো বইমেলায় সবাই রীতিমতো চমকে উঠল! ছোটাচ্চু তখন তখনই পকেট থেকে তিনটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে তিনজনের হাতে ধরিয়ে দিল। টুম্পা আর মুনিয়া নোর্টটা হাতে নিয়ে তখন তখনই আবার ছোটদের বইয়ের স্টলের দিকে ছুটে যেতে শুরু করে। তাদের আর এক মুহূর্ত দেরি করার ধৈর্য নেই।

একটু পর অন্যরাও উঠে দাঁড়াল। মেলার মাঝে ইতস্তত ঘুরে ঘুরে তারা নতুন বই দেখতে থাকে। টুনি একটা বেঞ্চে চুপচাপ বসে ছিল তখন শান্ত তার পাশে এসে বসল। টুনি লক্ষ করল তার হাতে কিছু নেই। টুনি জিজ্ঞেস করল, “তোমার বইগুলো কোথায় শান্ত ভাইয়া?”

“ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।”

“ফেলে দিয়েছ?”

“হ্যাঁ। তোদের সবার হাতে এত সুন্দর সুন্দর বই আর আমার কাছে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা! ছিঃ!”

টুনি জিজ্ঞেস করল, “তুমি সুন্দর বই কিনতে চাও?”

“কীভাবে কিনব, বদমাইশ পকেটমারটা আমার পকেট মেরে দিল, ধরতে পারলে খুন করে ফেলতাম।” তারপর সে পকেটমারকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় একটা গালি দিল।

টুনি তার ব্যাগ থেকে ছোটাচ্চুর দেওয়া পাঁচশ টাকার নোটটা বের করে শান্তর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও শান্ত ভাইয়া। এই টাকা দিয়ে তোমার পছন্দের বই কিনে নাও।”

শান্ত অবাক হয়ে বলল, “তোর টাকা দিয়ে আমি বই কিনব?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

“আমরা সবাই সুন্দর সুন্দর বই নিয়ে বাসায় যাব আর তোমার কোনো বই থাকবে না–এটা কেমন হবে?

“সত্যি দিচ্ছিস?”

“হ্যাঁ।”

“পুরোটা?” টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “পুরোটা।”

“পরে যদি ঝগড়া হয় ফেরত চাইবি না?”

“না। ফেরত চাইব না।”

“খোদার কসম?”

“খোদার কসম।”

শান্তর মুখ তখন একশ ওয়াট বাতির মতো জ্বলে উঠল। টুনির হাত থেকে ছোঁ মেরে নোটটা নিয়ে সেটাকে একটা চুমু খেল, তারপর হাত ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “ইয়েস!”

টুনি বসে বসে দেখল শান্ত ভাইয়া নোটটা পকেটে রেখে সেই পকেটটা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে রেখে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে। পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মুখে নিশ্চয়ই বিশাল একটা হাসি।

দূর থেকে টুম্পা আর মুনিয়াকে দেখা যাচ্ছে ছোটাচ্চুটি করে বই কিনছে। বইয়ের বোঝা আর টেনে নিতে পারছে না-কী আনন্দ! টুনি আশপাশে তাকাল, বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে হাঁটছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। চশমা পরা খ্যাপা ধরনের একটা মেয়ে হেঁটে গেল, বাতাসে চুল ওড়ছে, কী সুন্দর লাগছে দেখতে। শাড়ি পরা দুজন মেয়ে হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে। কী সুন্দর কপালে লাল-সবুজ টিপ দিয়েছে। দেখতে কী ভালো লাগছে!

টুনি বসে বসে দেখে। তার মনে হয়, আহা বেঁচে থাকাটা কী আনন্দের!

<

Muhammed Zafar Iqbal ।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল