অন্নপূর্ণা বলিলেন, শুনলি কদম, ওর জবরদস্তির কথাগুলো! জাঁতি কি মানুষ সিন্দুকে তুলে রাখে!
কদম কি একটা বলিতে গিয়া হাঁ করিয়া থামিয়া গেল।
বিন্দু ফিরিয়া আসিয়া বলিল, ফের যদি তুমি দাসী-চাকরকে মধ্যস্থ মানবে ত, সত্যি বলচি তোমাকে, ছেলে নিয়ে আমি বাপের বাড়ি চলে যাব।
অন্নপূর্ণা বলিলেন, যা না যা। কিন্তু মাথা খুঁড়ে মলেও আর ফিরিয়ে আনবার নামটি করবো না। সে কথা মনে রাখিস।
আমি আসতেও চাইনে, বলিয়া বিন্দু মুখ ভার করিয়া চলিয়া গেল।
ঘন্টা-দুই পরে অন্নপূর্ণা দুমদুম করিয়া পা ফেলিয়া ছোটবৌয়ের ঘরে আসিয়া ঢুকিলেন। ঘরের একধারে একটি ছোট টেবিলের উপর মাধবচন্দ্র মকদ্দমার কাগজপত্র দেখিতেছিলেন এবং বিন্দু অমূল্যকে লইয়া খাটের উপর শুইয়া আস্তে আস্তে গল্প বলিতেছিল। অন্নপূর্ণা বলিলেন, খাবি আয়।
বিন্দু বলিল, আমার খিদে নেই।
অমূল্য তাড়াতাড়ি খুড়ীর গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, ছোটমা খাবে না, তুমি যাও।
অন্নপূর্ণা ধমক দিয়া বলিলেন, তুই চুপ কর। এই ছেলেটিই হচ্ছে সকল নষ্টের গোড়া। কি আদুরে ছেলেই কচ্চিস ছৌটবৌ! শেষে টের পাবি। তখন কাঁদবি আর বলবি, হ্যাঁ, দিদি বলেছিল বটে!
বিন্দু ফিসফিস করিয়া অমূল্যকে শিখাইয়া দিল, অমূল্য চেঁচাইয়া বলিল, তুমি যাও না দিদি—ছোটমা রূপকথা বলচে।
অন্নপূর্ণা ধমকাইয়া বলিলেন, ভাল চাস ত উঠে আয়, ছোটবৌ! না হলে কাল তোদের দুজনকে না বিদেয় করি ত আমার নামই অন্নপূর্ণা নয়, বলিয়া যেমন করিয়া আসিয়াছিলেন, তেমনি করিয়া পা ফেলিয়া বাহির হইয়া গেলেন।
মাধব জিজ্ঞাসা করিল, আজ আবার তোমাদের হ’ল কি?
বিন্দু বলিল, দিদি রাগলে যা হয় তাই। আজ অপরাধের মধ্যে বলেছিলুম, ছেলেপুলের ঘর, জাঁতি-টাঁতিগুলো একটু সাবধান করে রেখো—তাই এত কান্ড হচ্ছে।
মাধব বলিল, আর গোলমাল ক’রো না, যাও। বৌঠান যেমন করে পা ফেলে বেড়াচ্ছেন, দাদা এখনি উঠে পড়বেন।
বিন্দু অমূল্যকে কোলে তুলিয়া লইয়া হাসিয়া রান্নাঘরে চলিয়া গেল।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 2 Page: 9
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 193