তিন
এক মায়ের দুই ছেলে জননীকে আশ্রয় করিয়া যেমন করিয়া বাড়িয়া উঠিতে থাকে, এই দুইটি মাতা তেমনি একটিমাত্র সন্তানকে আশ্রয় করিয়া আরো ছয় বৎসর কাটাইয়া দিলেন। অমূল্য এখন বড় হইয়াছে, সে এন্ট্রাস স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ঘরে মাস্টার নিযুক্ত আছেন, তিনি সকালবেলা পড়াইয়া যাইবার পর অমূল্য খেলা করিতে বাহির হইয়াছিল। আজ রবিবার, স্কুল ছিল না।
অণ্ণপূর্ণা ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন ছোটবৌ, কি করি বল ত?
বিন্দু তাহার ঘরের মেঝের উপর আলমারি উজাড় করিয়া অমূল্যর পোশাক বাছিতেছিল, সে কাকার সহিত কোন বড়লোক মক্কেলের বাড়ি নিমন্ত্রণ-রক্ষা করিতে যাইবে। বিন্দু মুখ না তুলিয়াই বলিল, কিসের দিদি?
তাহার মেজাজটা কিছু অপ্রসন্ন। অন্নপূর্ণা রকমারি পোশাকের বাহার দেখিয়া অবাক হইয়া গিয়াছেলেন, তাই তাহার মুখের ভাবটা লক্ষ্য করিলেন না; কিছুক্ষণ নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কি সমস্তই অমূল্যর পোশাক নাকি?
বিন্দু বলিল, হাঁ।
অন্নপূর্ণা বলিলেন, কত টাকাই না তুই অপব্যয় করিস। এর একটার দামে গরীবের ছেলের সারা বছরের কাপড়-চোপড় হতে পারে।
বিন্দু বিরক্ত হইল, কিন্তু সহজভাবে বলিল, তা পারে। কিন্তু গরীবে বড়লোকে একটু তফাত থাকেই; সেজন্য দুঃখ করে কি হবে দিদি!
অন্নপূর্ণা বলিলেন, তা হোক বড়লোক, কিন্তু তোর সব কাজেই একটু বাড়াবাড়ি আছে।
বিন্দু মুখ তুলিয়া বলিল, কি বলতে এসেছ তাই বল না দিদি, এখন আমার সময় নেই।
তোমার সময় আর কখন থাকে ছোটবৌ! বলিয়া তিনি রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন।
ভৈরব অমূল্যকে ডাকিয়া আনিতে গিয়াছিল। সে ঘন্টা-খানেক পরে খুঁজিয়া আনিল।
বিন্দু জিজ্ঞাসা করিল, কোথা ছিলি এতক্ষণ?
অমূল্য চুপ করিয়া রহিল।
ভৈরব বলিল, ও-পাড়ায় চাষাদের ছেলেদের সঙ্গে ডাংগুলি খেলছিল।
এই খেলাটায় বিন্দুর বড় ভয় ছিল, তাই নিষেধ করিয়া দিয়াছিল; বলিল, ডাংগুলি খেলতে তোকে মানা করিচি না?
অমূল্য ভয়ে নীলবর্ণ হইয়া বলিল, আমি দাঁড়িয়েছিলুম, তারা জোর করে আমাকে—
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 3 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 225