ডাফু সালজুনাস তাঁর ভগড়বীপতি জেনারেল ভালটোনার বাড়িতে থেকে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে ভেবে নিষেধ করল রানা। কোনও কারণে জেনারেলের ওপর বিশ্বাসের অভাব দেখা দিলে মারকাস বিনা নোটিশে তাঁর বাড়িতে হানা দিতে পারে।

হোটেলে ফিরে নিজেদের স্যুইটেই ডিনার খেলো ওরা। সালজুনাস তাঁর কামরায় বিশ্রাম নিতে চলে গেলেন। রানাও নিজের রূমে ঢুকল, পিছু পিছু এলো তারানা।

‘সরকার সমর্থক জেনারেলদের নিয়ে মারকাস কি করবে, তার অপেক্ষায় বসে থাকব আমরা,’ বলল রানা, ‘এটা স্রেফ বোকামি হচ্ছে।’ একটা সোফায় বসল ও, ইঙ্গিতে সামনের একটা সোফা দেখাল তারানাকে।

‘তাছাড়া করারও তো কিছু নেই,’ বলল তারানা; হয় রানার ইঙ্গিত দেখতে পায়নি, নয়তো ওখানে বসতে চায় না। ‘তুমি তো আর পেন্টহাউসে হানা দিতে পারো না।’ সোজা এগিয়ে এলো সে, রানাকে একটু আড়ষ্ট করে দিয়ে ওর সোফার হাতলে বসল।

‘হানা দিতে না পারি, এমনি ঘুরেফিরে দেখে আসতে তো পারি,’ বলল রানা। ‘ভেতরে একবার ঢুকতে পারলে ওদের ডিফেন্স সেট-আপ দেখার একটা সুযোগ পেতাম।’

রানার ঘাড়ে হাত রাখল তারানা, তারপর মাথার চুলে আঙুল ঢোকাল। ‘কিন্তু ভেতরে আমরা ঢুকব কিভাবে!’

‘আমরা না,’ একটা ঢোক গিলে বলল রানা, তারানার আচরণ ওর বোধগম্য হচ্ছে না। মেয়েটা কি ওকে আরও কিছু বলার চেষ্টা করছে? কিন্তু ও না নিজের মুখেই বলেছে, একজনকে ভালবাসে? ‘কোন একটা ছুতো দেখিয়ে ঢুকব আমি একা।’

‘এই অ্যাসাইনমেন্টে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, মনে আছে?’ হালকা সুরে জিজ্ঞেস করল তারানা। ‘তুমি পেন্টহাউসে গেলে তোমার সঙ্গে আমিও যেতে চাই।’ রানার মাথাটা নিজের দিকে টানল সে, তারপর ওর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে কানে গরম নিঃশ্বাস ফেলল। ‘কি ব্যাপার, তুমি এমন জড়োসড়ো হয়ে আছ কেন?’ ফিসফিস করে জানতে চাইল।

‘সব জায়গায় দু’জন যাওয়া যায় না,’ বলল রানা। তারপর আবার ঢোক গিলল। ‘জড়োসড়ো হয়ে আছি…তুমি নিশ্চয়ই জানো কেন জড়োসড়ো হয়ে আছি।’

‘আমি একজনকে ভালবাসি, এইজন্যে?’

‘বোলো না যে সেই একজন আসলে আমি,’ হাসল রানা।

‘না, সে তুমি না,’ বলল তারানা, দু’হাতে ধরে রানার মুখ নিজের দিকে ফেরাল। ‘তার আসলে কোন অস্তিত্ব ছিল না, রানা, এখনও নেই।’ রানাকে চুমো খেলো সে। ‘তখন কথাটা বিশেষ এক কারণে বলতে হয়েছিল।’ রানার আরও কাছে সরে এল।

‘এখন সে কারণটা আর নেই।’

‘ছেলেটা কিন্তু সত্যিই প্রেমে পড়েছিল তোমার,’ বলল রানা।

‘পি−জ, অতীত বাদ দাও; এসো আমরা বর্তমানে বাঁচি।’

‘ঠিক আছে, অতীত বাদ,’ বলল রানা। ‘কিন্তু দরজা খোলা যে!’ তারানার কোমর জড়িয়ে ধরে সোফা ছেড়ে উঠল রানা।

‘হঠাৎ বেরিয়ে সালজুনাস যদি দেখে তার পেয়ারের ছোট বিবি কিস মারছে আমাকে…’

‘দেখলেও তেড়ে মারতে আসবে না,’ বলে রানার গলা ধরে প্রায় ঝুলে পড়ল তারানা। ‘বরং লজ্জা পেয়ে চট্‌ করে ভিড়িয়ে দেবে দরজা!’

বলতে না বলতে খুলে গেল সালজুনাসের কামরার দরজা। ওদেরকে ওই অবস্থায় দেখে রসগোল্লা হয়ে গেল শিপিং ম্যাগনেটের চোখ। আধহাত জিভ বের করে দাঁতে কাটল সে। তারপর সত্যিই চট্‌ করে ভিড়িয়ে দিল দরজাটা।

‘নারে, দরজাটা লাগিয়েই দিই!’ বলে রানার গলা ছেড়ে মেঝেতে নামল তারানা, বন্ধ করে দিল দরজাটা।

পরদিন সকালে ডাফু সালজুনাস ও তারানাকে হোটেলে রেখে কোলোসস বিল্ডিঙে চলে এলো রানা। একদল স্থানীয় উইন্ডো ওয়াশার পাস দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে নিয়মিত বিল্ডিংটার জানালা ধোয়, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের একজনের একটা ইউনিফর্ম সংগ্রহ করেছে ও। পাসটা জাল করতে সালজুনাস ওকে সাহায্য করেছেন। আর নকল একজোড়া গোঁফ লাগিয়ে দিয়ে ওর চেহারায় যতটা সম্ভব গ্রীক ভাব বা বৈশিষ্ট্য এনে দেয়ার চেষ্টা করেছে তারানা। বাইরে দাঁড়ানো ইউনিফর্ম পরা গার্ডকে মিথ্যেকথা বলল রানা-গিলি ক্ল্যাসিকস হুকুম দিয়েছেন পেন্টহাউসের জানালা পরিষ্কার করতে হবে।

স্পেশাল এলিভেটরে চড়ে ওপরে উঠতে হবে, তবে তাতে চড়ার পরও নিজের পরিচয়-পত্র দেখাতে হলো রানাকে। বোঝাই গেল যে এলিভেটর অপারেটর মারকাসের লোক। নীল ইউনিফর্মের বাইরে আগেড়বয়াস্ত্রের আকৃতি ফুটে আছে। রানা আর ওর হাতের বালতিটাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে দেখছে সে। এলিভেটর পেন্টহাউসে উঠল। এই একটাই, অন্য কোন এলিভেটর পেন্টহাউস পর্যন্ত উঠতে পারে না-জানিয়েছেন সালজুনাস। টপ ফ্লোর থেকে নিচে পর্যন্ত এক প্রস্থ সিঁড়ি অবশ্য ছিল, তবে সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তারপরও গার্ড দেয়া হয়।

এলিভেটর থেকে একটা করিডরে বেরিয়ে এলো রানা, সেটা বিল্ডিঙের সামনের অংশ থেকে পিছন দিকে চলে গেছে। মেঝেতে পুরু কার্পেট, দেয়াল ঘেঁষে ফুলের টব, উঁচু সিলিঙে ক্রি€াল ঝাড়বাতি। পেন্টহাউসে ঢোকার মুখে একটা ডেস্ক সামনে নিয়ে বসে রয়েছে দু’জন গার্ড। এরাও মারকাসের ভাড়াটে গুণ্ডা, তার প্রাইভেট আর্মির সদস্য। সালজুনাসের নিজের গার্ডরা সংখ্যায় কম ছিল, পেন্টহাউস বেদখল হয়ে যাবার দু’একদিন পরই তাদের চাকরি চলে গেছে।

দু’জনের একজন, সে-ই বেশি লম্বা, করিডর ধরে এগিয়ে এলো রানার দিকে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন জন্মশত্রু। ‘এখানে তোমার কি কাজ?’ ঘেউ ঘেউ করে উঠল।

ওদের ভাষাতেই জবাব দিল রানা, ‘দেখে বোঝা যায় না কি কাজ?’ হাসল ও। ‘জানালা ধুতে এলাম।’

‘এলাম বললেই হলো? কার হুকুমে এলে?’

ইউনিফর্মে সেলাই করা একটুকরো সিল্ক-এর দিকে তর্জনী তাক করল রানা, যে-কোম্পানি জানালা ধোয়ার কাজটা করে তার নাম লেখা রয়েছে তাতে ।

‘তোমার মালিক পেন্টহাউস থেকে কোন অর্ডার পেয়েছে?’

‘অর্ডার না পেলে কি আমাকে পাঠাত?’ প্রশ্নটা করার পর বেশ বড় একটা ঝুঁকি নিল রানা। ‘গিলি ক্ল্যাসিকসের নামই বোধহয় শুনলাম…’

ডেস্কে বসা অপর লোকটা ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে কি বলল বোঝা গেল না। তার চুল কালো, চেহারায় উগ্র ভাব। ব্রাজিল থেকে মারকাস যাদেরকে নিয়ে এসেছে, এ লোকটা সম্ভবত তাদের একজন। রানা অনুভব করল, লোকটার দৃষ্টি ওর ছদ্মবেশ ভেদ করে আসল চেহারা দেখে ফেলছে।

‘হুম্‌-ম্‌!’ রানার পাশের লোকটা কটমট করে তাকাল। ‘ঘোরো। হাত রাখো দেয়ালে।’

রানা জানত সার্চ করা হতে পারে। পিস্তল আনেনি, তবে ছুরিটা ডান গোড়ালির ঠিক ওপরে টেপ দিয়ে আটকে রেখেছে। ঘুরে দেয়ালে হাত রাখল, দম আটকে অপেক্ষা করছে। বগল, পাঁজর, পিঠ আর বাহুতে হাত চাপড়াবার পর ওর পায়ের ওপর ধীরে ধীরে হাত বোলাচ্ছে লোকটা। হাঁটুর নিচে নেমে এলো আঙুলগুলো। এটা ওর ডান পা। লোকটার হাত ছুরির নাগাল পেয়ে যাচ্ছে। রানার তলপেটে টান পড়ল। ছুরির হাতল থেকে এক, খুব বেশি হলে দেড় ইঞ্চি দূরে থাকতে স্থির হলো আঙুলগুলো। ‘ঠিক আছে,’ দম ছেড়ে বলল সে। ‘ঘুরে আমাকে তোমার আইডেনটিফিকেশন দেখাও।’

নকল কার্ড বের করল রানা। সাবধানে, খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল লোকটা। কথা না বলে দ্বিতীয় লোকটার কাছে এসে কার্ডটা তাকে দেখাল। সে-ও পরীক্ষা করল। তারপর মাথা ঝাঁকাল। প্রথম লোকটা ফিরে এসে রানার হাতে ধরিয়ে দিল সেটা, বালতির ভেতর চোখ রেখে বলল, ‘ঠিক আছে। ও তোমাকে ভেতরে নিয়ে যাবে।’

‘ধন্যবাদ,’ প্রকাশ্যেই স্বস্তির হাঁপ ছেড়ে বলল রানা।

এগোচ্ছে ও, দ্বিতীয় লোকটা ডেস্ক ছেড়ে ওঠার সময় চোখের পলক ফেলছে না। দরজা খোলার সময়ও তাকিয়ে থাকল। তার পিছু নিয়ে পেন্টহাউসের ভেতর ঢুকল রানা।

এ অনুপ্রবেশ যেন দুর্ভেদ্য দুর্গে। শিরশিরে একটা অনুভূতি হচ্ছে, কারণ জানে আসল পরিচয় জেনে ফেললে কি করা হবে ওকে নিয়ে। মারকাস কোন স্পাইকে অবশ্যই জীবিত ফেরত যেতে দেবে না।

প্রশস্ত একটা লিভিংরূমে ঢুকেছে ওরা। আসবাবপত্রের বিলাসবহুল আয়োজন। দুই স্তরে ভাগ করা মেঝেতে দামী কার্পেট, সিলিঙে প্রাচীন গ্রীসের বিচিত্র সব রঙিন দৃশ্য আঁকা। কামরার দূরপ্রান্তের পুরোটা দেয়াল কাঁচের, বাইরে দেখা যাচ্ছে গোটা শহর। একপাশে ছোট্ট একটা স−াইডিং ডোর, ঝুল-বারান্দায় বেরুনো যায়। ওখানেই নিজের কাজ শুরু করবে রানা। ঘাড় ঘুরিয়ে কামরাটার মূল্যবান ফার্নিচারগুলো দেখল ও, বেশিরভাগই অ্যান্টিকস। পালিশ করা টেবিলে প্রাচীন মৃৎশিল্প শোভা পাচ্ছে।

ডান দিকে আংশিক খোলা দরজা দিয়ে আরেকটা কামরায় ফেলা কয়েকটা ডেস্ক ও ক্যাবিনেট দেখতে পাচ্ছে রানা, ধরে নেয়া যায় মারকাস ওটাকে অফিস বানিয়েছে। ওর বাঁ দিকে করিডর, দু’পাশে দরজা-বেডরূম আর লিভিং কোয়ার্টার। ‘প্রথমে বড় জানালাগুলো ধরি,’ বলল ও।

‘এখানে দাঁড়িয়ে থাকো,’ আদেশের সুরে বলল লোকটা।

কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘থাকলাম।’

অফিসে ঢুকে কয়েক মুহূর্তের জন্যে আড়ালে চলে গেল লোকটা। রানা খানিকটা ডান দিকে সরল, অফিসের ভেতরটা যাতে আরও ভালভাবে দেখতে পায়। গাঢ় রঙের সুট পরা কয়েকজন লোক চলাফেরা করছে ভেতরে, কেউ একজন কথা বলছে টেলিফোনে। অফিস কামরাটা বোধহয় কমিউনিকেশন সেন্টার। রানা যে কামরায় অপেক্ষা করছে, করিডর থেকে সেখানে দু’জন লোক ঢুকল। রানাকে ভাল করে দেখল তারা, তারপর অফিসের দিকে পা বাড়াল। মারকাসের লোকজন এখানে কম নয়। শুধু অফিসেই তো আট-দশজনকে দেখতে পাচ্ছে রানা। সন্দেহ নেই, প্রায় সবাই তারা সশস্ত্র।

রানার গাইড লোকটা ফিরে এল, তারপর বেরিয়ে গেল করিডরে। অফিস থেকে এক লোক তার পিছু নিয়ে এসেছে। লোকটার সব কিছু লম্বাটে-চুল, হাতের নখ, শার্ট। হিপ- হোলস্টারে ভরা পিস্তলটা প্রকাশ্যেই বহন করছে সে। ‘কতক্ষণ লাগবে তোমার?’ রানাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল। সোনালি চুল আর বাচনভঙ্গি বলে দিল লোকটা আমেরিকান।

ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জবাব দিল রানা, ‘কতক্ষণ লাগবে? হয়তো আধঘণ্টা। হয়তো একঘণ্টা। নির্ভর করে জানালায় কি পরিমাণ ময়লা জমেছে তার ওপর।’ লোকটাকে রানার চেনা-চেনা লাগছে। রানা এজেন্সির কমপিউটরে এর ছবি আছে, কিন্তু নামটা মনে পড়ছে না।

‘মিস্টার গিলি ক্ল্যাসিকস মনে করতে পারছেন না তোমাদেরকে ডেকেছেন কিনা,’ পিরিচ আকৃতির নীল লেন্সের ভেতর দিয়ে রানাকে দেখছে মার্কিন তরুণ।

হঠাৎ নামটা মনে পড়ল রানার, মাঙ্কি। আকার্ডিয়া মারকাসের পুরানো শিস্য মাঙ্কি। নিউ ইয়র্ক পুলিস তার নামে প্রথম অভিযোগ এনেছিল-দুই তরুণীর কোমরে টেপ দিয়ে বিস্ফোরক আটকে দেয় সে, তারপর রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটায়।

‘না? ডাকেনি?’ পকেট থেকে একটুকরো কাগজ বের করে চোখ বুলাল রানা। ‘কিন্তু আমাকে তো ওরা বলল মিস্টার সালজুনাসের ওখানে।’

এই সময় আরেক লোক কামরায় ঢুকে মাঙ্কির পাশে দাঁড়াল। লোকটা সামান্য খাটো, নিঃসন্দেহে গ্রীক। সালজুনাসের মুখ থেকে চেহারার যে বর্ণনা পেয়েছে রানা, সন্দেহ নেই এই লোকটাই গিলি ক্ল্যাসিকসের ডুপি−কেট।

‘আমি কোন উইন্ডো ওয়াশারকে ডেকেছি বলে মনে করতে পারছি না,’ ইংরেজিতে বলল সে, মাঙ্কির যাতে বুঝতে সুবিধে হয়। ‘শেষবার তুমি কবে এখানে এসেছ?’

‘রেকর্ড না দেখে বলা মুশকিল,’ বলল রানা, ইচ্ছা করেই চেহারায় নার্ভাস ভাব ফোটাল। ‘সব কি আর মনে থাকে?’ মাঙ্কি রানার দিকে এক পা এগোল। ‘তবে আগে তুমি এখানে এসেছ?’

ইতস্তত করল রানা। ‘হ্যাঁ, আগে।’

পিস্তলটা বের করে রানার মুখে তাক করল মাঙ্কি। ‘তাহলে বলো কিচেনটা দেখতে কেমন?’

রানার বাম বাহুর ভেতর দিকে ঘামের একটা ধারা গড়াতে শুরু করল। পেন্টহাউসের কোথায় কি আছে, কেমন দেখতে, সব কিছুরই বিস্তারিত বিবরণ সালজুনাসের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে ও, কিন্তু কাজের সময় মনে পড়ছে না। ‘সিঙ্ক আর কাবার্ড আছে, আকারে বেশ বড়। কিন্তু এ আপনারা কি শুরু করলেন বলুন তো?’

‘দূর, বাদ দাও তো!’ নকল ক্ল্যাসিকস বিরক্ত বোধ করছে।

‘ওর কাজ করে ওকে ফিরে যেতে দাও।’

মাঙ্কি তার কথা কানে তুলল না। ‘কিচেনে ক’টা জানালা?’ রানাকে জিজ্ঞেস করল সে।

রানা ভাবছে, এখন যদি মাঙ্কির পায়ের কাছে মেঝেতে ঢলে পড়ে ও, ছুরিটা কত দ্রুত বের করতে পারবে। তবে হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল পেন্টহাউসের কিচেন ভেতর দিকের একটা কামরা, করিডর সংলগড়ব-বাইরের দিকের দেয়াল সংলগড়ব নয়। ‘কি বলেন, কিচেনে আবার জানালা কোথায়!’ গলায় একটু ঝাঁঝ ফুটিয়ে বলল ও।

মাঙ্কির আঙুল ট্রিগারে চেপে বসেছিল। ধীরে ধীরে আঙুলের গিঁট থেকে সাদা ভাবটুকু মিলিয়ে গেল, পিস্তল ধরা হাতটা শরীরের পাশে নামিয়ে নিল সে। আস্তিন গুটানো এক লোক এলো অফিস থেকে।

‘প্রাগমাটোস সার্ভিস থেকে বলছে তারা একজন লোককে পাঠিয়েছে,’ মাঙ্কিকে রিপোর্ট করল সে।

নিজের চেহারায় স্বস্তির ভাবটুকু রানা ফুটতে দিল না। প্রয়োজনে ওকে সাহায্য করবে, এই শর্তে বেশ কিছু ড্র্যাকমা দিয়েছে ও প্রাগমাটোস কোম্পানির মেয়েটাকে, তবে কথা রাখবে কিনা ভেবে উদ্বিগড়ব ছিল।

মাঙ্কি তার অস্ত্র হোলস্টারে ভরে রাখল। ‘বেশ। ধোও শালার জানালা। তবে যত তাড়াতাড়ি পারো।’

‘জ্বী,’ বলল রানা। ‘দয়া করে মিস্টার সালজুনাসকে আমার সালাম দেবেন। কত বড় মানুষ, অথচ আমাকে দেখলেই উনি চিনতে পারেন। ভাগ্য ভাল হলে আজও নিশ্চয় দেখা হবে।’

মাঙ্কি ওর দিকে আগুনে চোখে তাকাল। ‘এই ব্যাটা, বকবক না করে কাজে হাত দে। কারও সঙ্গে দেখা-টেখা হবে না।’

‘জ্বী, ধন্যবাদ।’

বালতিতে পানি ভরে আনার জন্যে করিডর ধরে এগোবার অনুমতি পাওয়া গেল, এই সুযোগে দ্রুত একবার সু্‌্যইটটার লে- আউটে চোখ বুলিয়ে নিল রানা। বড় জানালায় কাজ শুরু করার পর ওকে একা রেখে যে যার কাজে চলে গেল সবাই। যা দেখতে এসেছিল তা ওর দেখা হয়ে গেছে, এবার চিন্তা করছে কিভাবে কাজে ফাঁকি দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাবে। এই সময় অফিস থেকে একদল লোক বেরিয়ে এল, রানার দিকে খেয়াল না দিয়ে মারকাসের কাজকর্ম নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করছে। রানা রয়েছে ঝুল-বারান্দায়, দরজাটা খোলা।

‘দুটো ক্যাম্পই এখন তৈরি,’ এক লোক বলল। ‘আমি আবার বলছি, মিস্টার মারকাসকে আমাদের জানানো উচিত যে মুভ করার এখনই সময়। তিন জেনারেলকে খতম করে এথেন্সে নিজেদের আর্মি আনতে পারলে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী পালাতে দিশে পাবে না…’

আরেক লোক তাকে থামিয়ে দিয়ে ইঙ্গিতে রানাকে দেখাল। প্রথম লোকটা ঘুরে গিয়ে গলার স্বর নামিয়ে আবার তার কথা শুরু করল। এই সময় করিডর হয়ে আরও তিনজন লোক ঢুকল হলরূমে, সেই সঙ্গে রানার কপালে জুটল বিরাট একটা বোনাস। বাকি দু’জনকে দু’পাশে নিয়ে মাঝখানে খাড়া পিলার, ওই লোকটাই আকার্ডিয়া মারকাস। ছ’ফুট দু’ইঞ্চি লম্বা, চওড়ায় প্রায় একটা দেয়াল। ফটোর সঙ্গে কাঠামো ও চেহারা পুরোটাই মেলাতে পারছে রানা-বুনো একটা ভাব চোখে-মুখে, বয়স ত্রিশ-বত্রিশ। বেশ ক্লান্ত লাগছে ওকে, হাতে একগাদা কাগজ-পত্র।

‘ঠিক আছে, মীটিংটা তোমরা সংক্ষেপ করো,’ হলরূমের বাকি লোকদের উদ্দেশে বলল সে। রানা লক্ষ করল, তাদের মধ্যে ইউসুফিস জিয়ানি অনুপস্থিত। এদের এই প্রতিষ্ঠানে তার সম্ভবত অত বেশি গুরুত্ব নেই। ‘সিডাক, মাইকোনোস-এর লেটেস্ট রিপোর্ট কি?’

ওখানে দাঁড়িয়ে জটলাটার দিকে তাকিয়ে আছে রানা, অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপারকে বাস্তবে ঘটতে দেখে বিস্ময় না মেনে পারছে না। আকার্ডিয়া মারকাসের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। অসম্ভবকে সম্ভব করতে চায় সে, গোটা ব্যাপারটা পরিচালনাও করছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।

‘…কমান্ডার এ-ও জানিয়েছেন যে গ্রাউন্ডওঅর্ক কমপ্লিট হয়ে গেছে, আর ট্রূপস…’

অকস্মাৎ মুখ তুলল মারকাস, এই প্রথম রানাকে দেখতে পেল। একজন কর্মচারীকে ইঙ্গিত করল সে, তারপর রানার দিকে কয়েক পা হেঁটে এল। থামল হঠাৎ, রাগে লাল হয়ে উঠল মুখ। ‘ওটা ওখানে কে?’ প্রায় হুংকার বেরিয়ে এলো গলা থেকে। ইঙ্গিত পেয়ে কর্মচারী লোকটা দ্রুত মারকাসের পাশে চলে এল। ‘কাকে যেন বলতে শুনলাম ওকে এখানে জানালা পরিষ্কার করতে পাঠানো হয়েছে।’

‘তুমি শুনলে? বিশ্বাস করার আগে যাচাই করলে না?’ দাঁতে দাঁত চাপল মারকাস। ঝুল-বারান্দায় রানার পাশে রাখা বালতিটা দেখল, দেখল ওর হাতে বুরুশ আর ভেজা ন্যাকড়া রয়েছে। ‘এই! এদিকে এসো!’

মারকাস যদি অতিমাত্রায় খুঁতখুঁতানির কারণে রানাকে বিদায় করে দিতে চায়, তার কথার ওপর কথা বলার কেউ নেই এখানে। শান্ত ভঙ্গিতে ঝুল-বারান্দা থেকে কামরায় চলে এলো রানা। ‘বলুন।’

রানার ওপর থেকে চোখ সরাল মারকাস। ‘কে ওকে ভেতরে ঢুকতে দিয়েছে?’

মাঙ্কি এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল, ত্রস্ত পায়ে কামরার মাঝখানে চলে এল। ‘ওর ব্যাপারটা ঠিক আছে। আমরা চেক করে দেখেছি।’

ঘাড় ফিরিয়ে অস্ত্রধারী মাঙ্কির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে ঝাড়া দশ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল মারকাস। নিস্তব্ধতা হয়ে উঠল বিস্ফোরণোন্মুখ। মারকাস যখন কথা বলল, এত নিচু গলা, কোনরকমে শুনতে পেল রানা, ‘আমার চারপাশে এরা কি সবাই গর্দভ?’

তার দিকে ম্লান দৃষ্টিতে তাকাল মাঙ্কি, তারপর রানার দিকে ফিরে বলল, ‘ঠিক আছে, আজকের মত জানালা সাফ করার কাজ শেষ হয়েছে।’

‘কিন্তু আমি তো শুরুই করলাম এইমাত্র!’ প্রতিবাদ করল রানা। ‘মিস্টার সালজুনাস সব সময় চান…’

‘এই ব্যাটা, গেলি!’ চেঁচিয়ে উঠল মাঙ্কি।

কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘আমার বালতি…’

‘ওটার কথা ভুলে যা।’

শান্তভাবে মারকাসকে পাশ কাটাল রানা, যতক্ষণ দেখা গেল ওর দিকে তাকিয়ে থাকল সে। এলিভেটরে চড়ে নিচে নামার সময় খাঁচাটা সাউন্ডপ্রূফ কিনা, কমিউনিকেশন লাইন কোন দিক দিয়ে গেছে, তালার ধরন ইত্যাদি খুঁটিয়ে লক্ষ করল রানা। ভাবল, ও কি মারকাসের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তুলেছে? সে যাই হোক, পেন্টহাউসে ঢোকার পরে অনেক দিক থেকে লাভ হয়েছে ওর। যাকে খুন করতে হবে, আগে থেকে তাকে দেখে রাখা হলো। দুর্ভেদ্য দুর্গটার নকশাও স্বচক্ষে দেখা হলো।

হোটেলের স্যুইটে ফিরে রানা দেখল সালজুনাস নিজের কামরায় পায়চারি করছেন-খুব উত্তেজিত, অস্থির। তারানা এক কোণে দাঁড়িয়ে খবরের কাগজ পড়ছে। রানা ভেতরে ঢুকতেই কাগজটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরল সে। হেডিংটা পড়ল রানা।

কর্মকর্তার অভিযোগ: জেনারেল সেরাফ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্র করছেন।

সালজুনাস বললেন, ‘ক্যাবিনেট সচিব অ্যাকিলিস কারডিক্সকে খুব কম লোকই চেনে। সে বলছে, তার কাছে নাকি প্রমাণ আছে গ্রীসের সমস্ত খনি বিনা টেন্ডারে দশটা বিদেশী কোম্পানিকে নিরানব্বুই বছরের জন্যে লীজ দেয়ার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে সরকার, ঘুষ দিয়ে কর্নেল ডোনাল্ডিস সেরাফের সমর্থনও আদায় করা হয়েছে। আরও বলছে, বাধা দেয়ার কারণে মন্ত্রীসভা ও সামরিক বাহিনীর অন্যান্য অফিসারদের প্রাণ নাকি বিপনড়ব হয়ে পড়েছে।’

খবরটায় দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে রানা বলল, ‘তাহলে দেখা যাচ্ছে জেনারেল ভালটোনার অনুমান সত্যি। জেনারেল সেরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে মারকাস, মীটিঙে তিনি আর তাঁর দুই সঙ্গী খুন হলে লোকে যাতে হিসাব মিলিয়ে ব্যাপারটা স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়।’

‘এবং লক্ষ করুন,’ ভারী গলায় বললেন সালজুনাস, ‘কেমন সতর্কতার সঙ্গে আমার নামটা ওরা এর সঙ্গে জড়ায়নি।’

‘অভিযোগটা তদন্ত করে দেখছে পুলিস,’ বলল তারানা। ‘কিন্তু যখন জানা যাবে যে অভিযোগের পিছনে কোন ভিত্তি ছিল না, তিন জেনারেলের একজনও তখন বেঁচে থাকবেন না।’

‘থাকবেন, জেনারেল ভালটোনা যদি তাঁর কাজে সফল হন,’ বলল রানা। ‘তিনি কি ফোন করেছেন?’

‘এখনও করেননি,’ জবাব দিলেন সালজুনাস। ‘ভাল কথা, উত্তেজনার মধ্যে আসল কথাটাই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। আপনি কি আমার ওখানে ঢুকতে পেরেছেন?’

মাথা ঝাঁকাল রানা, তারপর সংক্ষেপে জানাল কি কি দেখেছে ও শুনেছে।

‘তোমার কাছে যদি একটা পিস্তল থাকত, আর সেই পিস্তলের সব ক’টা গুলি যদি মারকাসের বুকে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে পারতে, আমার চেয়ে সুখী কেউ হত না।’ একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল তারানা।

হেসে ফেলল রানা। ‘সঙ্গে পিস্তল থাকলে ভেতরে আমি ঢুকতেই পারতাম না। তাকে মারার জন্যে আবার আমাদেরকে ওখানে ঢুকতে হবে। বাকারা বেঁচে থাকলে খুশি হতাম।’

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস চাপল তারানা। ‘সত্যিই ছেলেটার হাত খুব ভাল ছিল।’

‘হ্যাঁ,’ বলল রানা। ‘তবে এথেন্সে আমার এজেন্সির শাখা আছে, চাইলেই প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যাবে।’ জাহাজব ্যবসায়ী ভদ্রলোকের দিকে ফিরল ও। ‘ক্যাম্প কমান্ডারদের সঙ্গে কি আপনি যোগাযোগ করতে পেরেছেন?’

‘দু’জনের সঙ্গেই কথা হয়েছে,’ বললেন সালজুনাস। ‘আপনি যা বলতে বলেছিলেন তাই বলেছি। তাঁরা কথা দিয়েছেন, সরাসরি আমার মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত আর কিছু করবেন না। আমি তাঁদেরকে পেন্টহাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিয়েছি। বলেছি, আমার সেক্রেটারী খুন হয়ে গেছে, তার জায়গায় একই রকম দেখতে অন্য এক লোককে বসানো হয়েছে।’

‘দারুণ,’ বলল রানা, তবে বাধা পেল টেলিফোনটা বেজে ওঠায়।

রিসিভার তুলল তারানা, অপরপ্রান্তে কে শোনার পর সালজুনাসের হাতে ধরিয়ে দিল সেটা।

সালজুনাস এদিক থেকে ছোট-ছোট অল্প কয়েকটা বাক্য উচ্চারণ করলেন। ‘হ্যাঁ, অ্যালেক্সিস। হ্যাঁ। ও, হ্যাঁ। বলে যাও। আচ্ছা। বেশ, বেশ। ভাল।’ কথা শেষ হতে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন তিনি। ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

‘কিছু বলুন!’ তারানা ধৈর্য ধরতে পারছে না।

‘আমার ভগড়বীপতি জেনারেল ভালটোনা পেন্টহাউসে ফোন করেছিলেন, কিন্তু ইউসুফিস জিয়ানি ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে আজ বা কাল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে, কিন্তু জিয়ানি গোঁ ছাড়েনি। জেনারেলদের প্রসঙ্গ নিয়ে টেলিফোনে আলাপ করতেও রাজি হয়নি সে।’

‘কিন্তু আপনি হাসছিলেন তাঁর কোন্‌ কথায়?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘জেনারেল কাউরিসের কথা মনে আছে? প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কমিটিতে জেনারেল পয়টারাসের জায়গায় যাকে বসানো হয়? মারকাসের নিজের লোক?’

‘আছে।’ মাথা ঝাঁকাল তারানা।

‘জেনারেল ভালটোনা তার কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর ধারণা হয়, মীটিংটার আয়োজন এই কাউরিসই করবে। ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক। জেনারেল কাউরিস সব জানে, প্ল্যানটা তার মুখস্থ। তিন সরকার সমর্থক জেনারেলের নিন্দা করে লোকটার বিশ্বাস অর্জন করেন ভানটোনা। মীটিঙের জায়গা ও সময় বলে দিয়েছে কাউরিস। সেরাফ, ভিক্টর পাপাভক্সি ও গেইব্রিয়াল সেনটো এরইমধ্যে আমার সঙ্গে মীটিঙে বসতে রাজি হয়েছেন সেরাফের বাড়িতে। শহরের উত্তর শহরতলিতে তার একটা জমিদারি আছে। বলাই বাহুল্য যে হ্যারি কাউরিসও ওই মীটিঙে থাকবে।’

‘কখন?’ জানতে চাইল রানা।

‘আজ বিকেলে,’ জবাব দিলেন সালজুনাস। ‘আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।’

‘জেনারেলদের কিভাবে মারা হবে?’ রানার চোয়ালের হাড় উঁচু হলো।

ভারী কাঁধ দুটো ঝাঁকালেন শিপিং ম্যাগনেট। ‘জেনারেল অ্যালেক্সিস তা জানেন না শুনে তথ্যটা দিতে রাজি হয়নি কাউরিস। উপায় নেই, আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে…’

‘এরকম পরিস্থিতিতে অপেক্ষা করাটা সাংঘাতিক বিপজ্জনক,’ বলল রানা, কব্জির রোলেক্সে চোখ বুলাল। ‘তারানা, একটা ট্যাক্সি ডাকো। আমরা জেনারেল সেরাফের ওখানে যাচ্ছি। মিস্টার সালজুনাস, আপনাকে আপাতত নেপথ্যেই থাকতে হবে। কেউ চিনে ফেললেই আপনার বিপদ।’

‘আপনি যা বলেন, মিস্টার রানা।’

তারানা ফোনে ট্যাক্সি ডাকছে, এই ফাঁকে পিস্তলটা লোড করার আগে মেকানিজম চেক করল রানা। চেহারায় উদ্বেগ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সালজুনাস।

রিসিভার নামিয়ে রেখে তারানা জানাল, ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্যাক্সি আসছে।’

Super User