জিজিয়ানা দালিয়ান আর তার স্বামী চৌচেন ঝাওয়ের ফ্ল্যাটটা এয়ারপোর্ট রোডের উপর অভিজাত এলাকায়।

এলাকায় কোন হোটেল-রেস্তোরা, বাজার-হাট বা দোকানপাট নেই, নেই কোন পাবলিক পার্কিং ফ্যাসিলিটিও, তার উপর সারাক্ষণ সশস্ত্র পুলিশ টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে, ফলে কাছাকাছি কোথাও থেকে ফ্ল্যাটটার উপর নজর রাখা অত্যন্ত কঠিন।

অগত্যা তাইমাই ক্রাইম জোনের পাঁচ বিগ ব্রাদারদের মধ্যে চারজনই ওদের আশপাশে একটা করে ফ্ল্যাট ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছে।

একা শুধু বিগ ব্রাদার হুন চেননি এ-সব ঝামেলার মধ্যে যায়নি। তার কাজের ধারাই আলাদা। সরকারী টেলিফোনের দুজন ইঞ্জিনিয়ারকে ঘুষ দিয়েছে, ফলে নিজের আস্তানায় বসে ঝাও পরিবারের ফোন লাইনে কান পাতার সুবিধে ভোগ করছে সে।

তারচেয়েও বড় কাজ হলো, ওই ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দাকে জলজ্যান্ত দুটো প্রাণ আর নগদ এক লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাবার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে সে। ওই বাসিন্দাও একজন ঝাও।

রাত আটটায় দালিয়াদের নম্বরে করা রানার ফোনটা নিজ ক্যাসিনোর অফিসে বসে শুনল হুন চেননি। রিসিভিং মেশিনের ভলিউম বাড়িয়ে দেওয়ায় রানা আর চৌচেন ঝাওয়ের কথা। উপস্থিত সবাই শুনতে পেল।

তার দুপাশে নিজস্ব বাহিনীর কয়েকজন লিডার ছাড়াও সামনে। বসে রয়েছে চৌ মিন আর তার ভাই থৌ মিন। কুখ্যাত এই দুই ভাইকে হংকং থেকে সে আনিয়েছে কালো নকশা নামে একটা ফাইল বিক্রি করার জন্য।

ব্যাপারটা অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। কারণ যে জিনিস সম্পর্কে কারও কোন ধারণা নেই, এমনকী কোথায় আছে তাও কেউ জানে না, সেটা সে বিক্রি করতে চাইছে কীভাবে?

কেউ কিছু না জানলেও, হুন চেননি ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছুটা অন্তত জানে। যেমন-সিআইএ-র একজন এজেন্ট তার সঙ্গে দেখা। করে ওটার বিনিময়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার সেধেছে।

মার্কিন দূতাবাসের এক বুড়ো কর্মকর্তা টাকার অঙ্কটা আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে-সাত মিলিয়ন ডলার।

এদের কাছ থেকেই প্রথম জানা যায়, মার্কিন দূতাবাস থেকে সাত রাজার ধনটা হারিয়ে গেছে। সাত রাজার ধন মানে একটা। টপ সিক্রেট ফাইল। এই ফাইলটাকেই বলা হচ্ছে কালো নকশা।

প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া আর ভারতের ইন্টেলিজেন্সও কম। আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বলছে পনের কি বিশ লাখ ডলার দিয়ে তারা। ওই কালো ফাইলটায় একবার শুধু চোখ বুলাতে চায়।

এরকম আরও বেশ কয়েকটা দেশের ইন্টেলিজেন্স হুন চেননির সঙ্গে এ-ব্যাপারে আলাপ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে।

শুধু কী তাই! একাধিক সরকারী, অর্থাৎ চিনা ইন্টেলিজেন্সও যোগাযোগ করেছে তার সঙ্গে। তারা টাকার অঙ্কটা বাড়ায়নি ঠিকই, তবে উপরি পাওনা হিসাবে ভবিষ্যতে তার অনেক কেস হালকা করে দেখা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

হংকং থেকে আসা হুন চেননি সাত ঘাটের পানি খাওয়া বিগ ব্রাদার, ঠাণ্ডা মাথায় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী করবে। তার যে প্ল্যান, তাতে কোন সন্দেহ নেই যে কালো নকশাটা সে-ই পেতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, পাবার পর দেবে কাকে।

হুন চেননি খুব ভালো করেই জানে যে তাইমাই এলাকার যত প্রতাপশালী ব্রাদারই হোক সে, সম্ভাব্য ক্রেতারা প্রত্যেকে তার সর্বনাশ করার ক্ষমতা রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো দুনিয়ার একমাত্র সুপারপাওয়ার আর তার নিজের দেশ হলো হিকমতে চিন। ফাইলটা সে যার কাছেই বিক্রি করুক, সে ছাড়া বাকি সবাই তার শত্রু হয়ে যাবে, এবং হয়তো আক্রোশের বশে প্রতিশোধও নিতে চাইবে।

কাজেই এত সব ঝামেলা আর বিপদের মধ্যে না গিয়ে আঙুল তুলে একজন লোককে দেখিয়ে দেবে সে, বলবে-ফাইলটা ওই লোকের কাছে আছে, তোমরা যে পারো কিনে নাও।

সবাই তা বিশ্বাসও করবে। কারণ লোকটাকে তারা চেনে। তার নাম, বলাই বাহুল্য, চৌ মিন।

চৌ মিনের কাছে সত্যি থাকবেও ফাইলটা। কারণ হুন চেননি ওটা হাতে পাওয়া মাত্র একটু দেরি না করে তার কাছেই বিক্রি করে দেবে। এই হলো তার প্ল্যান। মিন ভাইদের হংকং থেকে বেইজিংয়ে দাওয়াত দিয়ে আনার পিছনে এটাই কারণ।

দুই ভাইয়ের সঙ্গে চূড়ান্ত আলাপটাও সেরে ফেলেছে হুন। চেননি। কালো নকশার বিনিময়ে মাত্র চার মিলিয়ন ডলার পাবে। সে। এর বেশিতে কিনতে রাজি করানো গেল না মিন ভাইদের। সন্দেহ নেই এর দ্বিগুণ বা তারচেয়েও বেশি দামে বেচবে তারা। তা বেচুক, ঝক্কি-ঝামেলাও তো কম পোহাতে হবে না তাদের।

দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্য বা মতলব সম্পর্কে আসলে হুন চেননির কোন ধারণা নেই। তারা পরিষ্কার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে, মাত্র এক লাখ ডলারে জিনিসটা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে চেননি। এক। লাখে কিনে চল্লিশ লাখের কমে বেচবে না, এটা কি মেনে নেওয়া। যায়?

মিন ভাইরা চিন্তা করছে, বিকল্প অন্য কী উপায়ে মাইক্রোফিল্মটা পাওয়া যায়। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার সুযোগ পেলে সেটা তারা হাতছাড়া করবে কেন।

রাত আটটায় দালিয়াদের নম্বরে করা রানার ফোনটা শুনে। দুপাশে দাঁড়ানো কর্মীবাহিনীর লিডারদের উপর চোখ বুলাল বিগ ব্রাদার হুন চেননি। এই রায়হান লোকটা কে?

লিডাররা কেউ কথা বলছে না।

জানো না। অসন্তুষ্ট দেখাল হুন চেননিকে। ঠিক আছে, যাও, ধরে এনে লোকটার চামড়া খুলে নিয়ে গায়ে লবণ মাখাও।

লিডাররা কেউ নড়াচড়া করার আগে মাঝখান থেকে চৌ মিন বলল, আমার ভুলও হতে পারে, তবে যেন মনে হলো ভদ্রলোকের। গলার আওয়াজটা খুব পরিচিত। আমি যদি ঠিক চিনে থাকি, তাঁকে না ঘটানোই ভালো।

পরিচিত? হুন চেননি নড়েচড়ে বসল। না ঘটানো ভালো? মানে?

একটা ইনভেস্টিগেটিং ফার্মের মালিক ভদ্রলোক, সারা দুনিয়ায় কোথায় না শাখা অফিস খুলেছেন। চিনা সিক্রেট সার্ভিসের এখন যিনি চিফ, তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুও বটেন। আসল নাম রায়হান চৌধুরী নয়, মা…

চিনেছি এবার, চৌ মিনকে থামিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল হুন চেননি। মূর্তিমান অভিশাপ। চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। আমরা তাকে না ঘটালেই যে পার পাব, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। লিডারদের দিকে ফিরে চোখ রাঙাল। মাথা খাটিয়ে বের করো কীভাবে এড়ানো যায় মাসুদ রানাকে।

পরিবেশটা হালকা করতে চাইল চৌ মিন, বলল, আপনার ক্যাসিনোয় আছি, অথচ ভাগ্য পরীক্ষা করব না, তা কি হয়? কাজ সেরে আমাকে ছুটি দিন, মিস্টার হুন চেননি।

ঠিক, কাজটা সেরে ফেলা দরকার। পকেট থেকে একটা খুদে মোবাইল সেট বের করে বোতামে চাপ দিচ্ছে হুন চেননি। তারপর কানে তুলল সেটা। শুনতে পেল অপরপ্রান্তে রিঙ হচ্ছে। মিস্টার পাওচেন ঝাও নাকি?

অপরপ্রান্ত থেকে একটা চাপা কণ্ঠস্বর ভেসে এল, হ্যাঁ, মিস্টার হুন চেননি।

আমি আপনাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, মিস্টার…

আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি।

ওয়ান্ডারফুল! মার্ভেলস! উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল হুন চেননি। তারপর হঠাৎ বিগ ব্রাদার সুলভ গাম্ভীর্যের সঙ্গে জানতে চাইল, মিস্টার পাওচেন ঝাও, আপনি এখন কোথায়?

আমি এখন আমার ভাই-ভাবীর এয়ারপোর্ট রোডের ফ্ল্যাট থেকে বেরুচ্ছি।

গুড। মিস্টার পাওচেন, আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি সত্যি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। বলুন তো, গত। বিশ মিনিটের মধ্যে আপনার ভাই-ভাবীর ফ্ল্যাটে গুরুত্বপূর্ণ কী ঘটেছে?

চৌচেন ঝাওয়ের ভাই, অর্থাৎ দালিয়ার একমাত্র দেওর। পাওচেন ঝাও জবাব দিল, রায়হান চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোক। ফোন করেছিলেন ভাইকে।

চমৎকার! এবার বলুন, ওই ভদ্রলোকের আসল নাম কি?

মাসুদ রানা। ভাইয়ের ধারণা, একমাত্র এই ভদ্রলোকই নাকি আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন।

কিন্তু বাইরের কারও সাহায্য না নিয়ে, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনিই নিজেদের জন্যে যা করার করবেন, তাই তো?

হ্যাঁ। কারণ, তা না হলে, আপনি আমাদের দুই ভাইকে মেরে ফেলবেন-ঠিক যেভাবে আমার ভাবীর ভাইকে মেরে ফেলেছেন।

বিষয়টাকে এভাবেও দেখা যায়-ছোট্ট একটা তথ্যের বিনিময়ে আপনাদের দুজনের প্রাণ তো রক্ষা পাবেই, ফাও। হিসেবে এক লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কারও জুটবে কপালে। আপনার ভাইয়ের শ্যালক আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

আমি রাজি হয়েছি ঠিকই, বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল পাওচেন ঝাও। তবে সারাজীবন একটা অপরাধ বোধ বয়ে বেড়াতে হবে, এই আর কী!

এ নিয়ে আগেও আলাপ করেছি আমরা। আপনার মধ্যে কী কারণে অপরাধ বোধ আসবে, এটা আমি এখনও বুঝতে অক্ষম। আপনার ভাবী মার্কিনিদের একটা জিনিস চুরি করে একা শুধু নিজের নয়, আপনার ভাই আর আপনাকেও মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শুধু চুরি করলে কথা ছিল, জিনিসটা সে বেচতেও রাজি নয়। এটা কি মিথ্যে?

না, মিথ্যে কেন হবে…

মারাত্মক বিপদ মানে, আমরা আপনাকে হুমকি দিয়েছি, যেভাবেই হোক ভাবীর কাছ থেকে আদায় করে ফাইলটা আমাদের হাতে তুলে দেবেন আপনি, সেই সঙ্গে ভাবীর হদিশও জানাবেন, তা না হলে আপনারা দুভাই আমাদের হাতে খুন হয়ে যাবেন। আপনি আমাদের হুমকিটাকে গুরুত্ব দিয়ে বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রাণে বাঁচার বিনিময়ে আমাদের সঙ্গেসহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন। ঠিক তো?

এ-সব তো ঠিকই আছে…।

তা হলে এরমধ্যে অপরাধ কোথায়?

না, মানে…ভাবীকে…মানে…

আপনি কি তার মৃত্যু চাইছেন না? কঠিন সুরে জিজ্ঞেস করল বিগ ব্রাদার হুন চেননি। যুক্তিটা তা হলে আরেকটু ব্যাখ্যা করতে হয়, মিস্টার পাওচেন ঝাও।

অপরপ্রান্তে চুপ করে আছে পাওচেন।

আপনার ভাবী দালিয়ানকে বাঁচিয়ে রাখলে এক সময় সে ঠিকই বুঝতে পারবে যে আপনি তার সঙ্গে বেঈমানী করে ফাইলটা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। দালিয়ান তখন পুলিশের কাছেও যেতে পারে। কি, পারে না?

দৃঢ়চেতা, নীতিবান মানুষ…হ্যাঁ, তা তো পারেনই।

পুলিশ আপনাকে তুলে দেবে সিক্রেট এজেন্টদের হাতে। টরচার সহ্য করতে না পেরে আপনি তাদেরকে আমার নাম বলবেন। বুঝতে পারছেন, কি বলছি আমি? কিন্তু এটা তো আমরা। হতে দিতে পারি না, মিস্টার পাওচেন।

হ্যাঁ, ঠিক আছে, বুঝতে পারছি।

ধন্যবাদ, বুঝতে পারলেই ভালো। তো যাই হোক, আপনি একশোয় একশোই পাচ্ছেন, মিস্টার পাওচেন। এবার বলুন, নরম। সুরে প্রশ্ন করল হুন চেননি, ফোনটা পাবার পর মিস্টার চৌচেন। আপনার সঙ্গে কী আলাপ করলেন?

ভাই বলল, তোর ভাবীকে জানানো দরকার মাসুদ ভাই ফোন করেছিলেন। ভাইয়ের পক্ষে বাইরে বেরুনো সম্ভব নয়, পিছনে লোক লেগে যায়। তাই আমাকে ভাবীর কাছে যেতে বলল। সেখানেই এখন যাচ্ছি আমি।

ওয়ান্ডারফুল! ওয়ান্ডারফুল! হুন চেননির উল্লাস দেখে কে। মিস্টার পাওচেন, কালই আপনার অ্যাকাউন্টে এক লাখ ডলার জমা হয়ে যাবে-প্রমিজ! এবার বলুন, জায়গাটা কোথায়? ফাইলটা ওখানেই আছে তো, মানে, আপনার ভাবীর কাছে?

হ্যাঁ, আমি তো তাই জানি। তবে ওই ঠিকানায় নয়, ভাবী মিস্টার রানার সঙ্গে দেখা করবেন অন্য জায়গায়। সাবধানের মার নেই, তাই ভাই চাইছেন শহরের বাইরে দূরে কোথাও দেখা হওয়া। উচিত। দুটো ঠিকানাই লিখে নিন…

হ্যাঁ, এক মিনিট। তার আগে একটা কথা। ভাবীর সঙ্গে কী। কথা হলো, ফাইলটা ঠিক কোথায় আছে, এ-সব ভালো করে। জেনে নিয়ে আমাদেরকে ফোন করবেন আপনি, ঠিক আছে?

বেশ। একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল পাওচেন ঝাও।

.

রাত তিনটের সময় গ্রেটওয়াল হোটেলের স্যুইটে পিপ-পিপ শুরু করল রানার মোবাইল। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে গেল ওর। নিশ্চয়ই। জরুরি কোন কল, চোখ না খুলেই বেডসাইড টেবিলটার দিকে হাত বাড়িয়ে ভাবল, ভাগ্যিস সেটটা অন করে শুয়েছিল।

মোবাইল সেটের ডিসপ্লেতে চোখ বুলাতেই ভুরুজোড়া কুঁচকে উঠল রানার। ভেবেছিল ওর এজেন্সির শাখা অফিস থেকে বুন লি ফোন করেছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা নয়-নম্বরটা অচেনা।

হ্যালো?

বস, আমি চৌ মিন। এত রাতে ঘুম ভাঙানোর জন্যে সত্যি দুঃখিত, বস্।

কেন ফোন করেছ সেটা বলো।

কথাটা আমাকে বলতে বলা হয়েছে, বস, তাই বলছি।

কী কথা? রানা সাবধানে জানতে চাইল। কে বলতে বলেছে?

তার পরিচয়টা না হয় নাই জানলেন, বস্…

কী কথা? আবার জিজ্ঞেস করল রানা।

ওদের সঙ্গে আপনি জড়াবেন না, বস্।

ওদের সঙ্গে জড়াব না…ওদের সঙ্গে মানে কাদের সঙ্গে? তা ছাড়া, কারও নিষেধ আমি শুনবই বা কেন?

মাফ করবেন, বস্। আমাকে শুধু এটুকুই বলতে বলা হয়েছে। আর ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি চাই না আপনার মত সম্ভাব্য একজন ক্রেতাকে হারাই।

কঠিন সুরে কিছু বলতে যাচ্ছিল রানা, ওকে থামিয়ে দিয়ে আবার বলল চৌ মিন, আজ থেকে বিশদিন পর আপনার সঙ্গে আমার হংকঙে দেখা হতে পারে, মানে তখনও যদি ফাইলটার ব্যাপারে আপনার আগ্রহ থাকে আর কী। কী নামে দেখা করবেন এখনই আমাকে জানিয়ে দিন। তারপর হংকঙের কোথায় বলছি…

রানা কী নামে দেখা করবে শোনার পর তিন মিনিট একনাগাড়ে কথা বলে গেল চৌ মিন, তারপর রানাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে যোগাযোগ কেটে দিল।

চৌ মিনকে দিয়ে কে কথাটা বলাল সেটা না বোঝার কিছু। নেই। বিশেষ করে রানা যখন জানেই যে মিন ভাইরা বিগ ব্রাদার হুন চেননির অতিথি হিসাবে বেইজিঙে এসেছে। হেঁয়ালির মাধ্যমে। ঠিক কী বলতে চাওয়া হয়েছে তাও পরিষ্কার।

বাথরুম থেকে চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে এসে দুয়ে দুয়ে চার মেলাবার চেষ্টা করছে রানা।

ধরে নিতে হয় হুন চেননির দলই দালিয়ানদের টেলিফোনে আড়ি পেতেছে। কাজেই তারা ওর আর চৌচেন ঝাওয়ের কথাবার্তা শুনেছে। সরি, রঙ নাম্বার বললেও চৌচেন যে রায়হানকে চিনতে পেরেছে, এটা হুন চেননির কাছে গোপন নেই।

আর রায়হানের কণ্ঠস্বর শুনে থাকলে চৌ মিন বলে দিতে। পারবে ওটা মাসুদ রানার। ও যখন চৌচেন ঝাওকে ফোন করেছিল, আড়িপাতা যন্ত্রের অপরপ্রান্তে হুন চেননির সঙ্গে হয়তো। চৌ মিনও ছিল।

হুন চেননি এরপর স্বভাবতই ধরে নেবে চৌচেন বা দালিয়া গোপনে যোগাযোগ করবে ওর সঙ্গে। অর্থাৎ ওদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে ও।

হুন চেননি তা চাইছে না।

অকস্মাৎ রানার মনে আশঙ্কা জাগল, দালিয়া আর তার স্বামীর। বোধহয় খুব বড় কোন বিপদ হতে যাচ্ছে।

কার্পেট মোড়া বেডরুমে পায়চারি শুরু করল রানা, মোবাইল সেট অন করে দালিয়াদের নাম্বার টিপছে।

উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় শীত শীত করছে রানার। অপরপ্রান্তে। রিঙ হচ্ছে, কিন্তু কেউ ধরছে না।

আট-দশবার চেষ্টা করেও যখন সাড়া পেল না, সিদ্ধান্ত নিল দালিয়াদের ফ্ল্যাটে যাবে।

কাপড়চোপড় পরে তৈরি হচ্ছে রানা, আরেকটা ফোন এল। ডিসপ্লেতে চোখ বুলাতে বোঝা গেল বুন লির কল। প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে উঠল রানা। বলো।

মাসুদ ভাই, বুনের গলায় চাপা উত্তেজনা, তিন মিনিট হলো একটা মেয়ে পাবলিক বুদ থেকে ফোন করে আপনাকে একটা মেসেজ দিয়েছে। ফোন নম্বরটা রাজধানীর বাইরের। মেয়েটি নাম বলল, জি.ডি…

স্বস্তির ঠাণ্ডা পরশ অনুভব করল রানা। জি.ডি নিশ্চয়ই জিজিয়ানা দালিয়ান-এর সংক্ষেপ। মেসেজটা দাও, বুনকে নির্দেশ দিল ও।

বলছি, মাসুদ ভাই-ভয়ানক বিপদের মধ্যে আমরা। এই সময় নিশ্চয় ঈশ্বর আপনাকে বেইজিঙে পাঠিয়েছেন। যদি পারেন দেখা করুন এই ঠিকানায়। ব্যস, এটুকুই।

ঠিকানাটা দাও, বলল রানা।

লিখতে হবে মাসুদ ভাই—পথের হদিশ ছাড়াও কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড পর মেসেজটা শুরু করল বুন। সকাল আটটায় সতেরো নম্বর গেট দিয়ে নেমে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন ধরবেন। প্রথমে চাংপিং-এর টিকিট কাটবেন, রাজপুর আর কিংঘে হয়ে চাংপিং যাবে ওটা। ওখানে পৌঁছে ট্রেন বদলে রওনা হবেন পশ্চিমে, নানকু হয়ে পৌঁছাবেন তাইপিনবু-র শহরতলিতে…

<

Super User